× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চকোলেটের লোভ দেখিয়ে মেয়েদের খতনা

রকমারি


৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বুধবার

ভারতে বোরা মুসলিমদের মধ্যে 'ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন' (এফজিএম) বা মেয়েদের খতনা করানোর প্রথা এখনও ব্যাপকভাবে প্রচলিত বলে নতুন একটি সমীক্ষা রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।
আজ ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব জুড়ে পালিত হচ্ছে এফজিএমের বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' দিবস, আর তার প্রাক্কালে প্রকাশিত ওই রিপোর্টটি বলছে সমীক্ষায় অংশ নেওয়া অন্তত ৭৫ শতাংশ নারীই এই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছেন বলে স্বীকার করেছেন।
রিপোর্টটি প্রস্তুত করেছে 'উইস্পিকআউট' নামে যে সংগঠন, তারা ভারতে আইন করে এই প্রথা নিষিদ্ধ করারও দাবি জানাচ্ছেন - তবে সরকারের বক্তব্য হল ভারতে এফজিএমের ঘটনা ঘটছে বলে কোনও প্রমাণ নেই।
সালেহা পাটওয়ালা মুম্বাইয়ের বোরা মুসলিম সমাজের মেয়ে - যারা ভারতের খুব স্বচ্ছ্বল একটি শিয়া ইসমাইলি সম্প্রদায়।
খুব ছোটবেলায় তাকে নিজের নানি বন্ধুদের কাছে নিয়ে যাওয়ার লোভ দেখিয়ে একটি ভুতুড়ে অন্ধকার ঘরে নিয়ে গিয়ে দাইকে দিয়ে খতনা করিয়েছিলেন।
মেঝেতে ফেলে তার হাত-পা চেপে ধরে ও অন্তর্বাস খুলে কীভাবে সেই যন্ত্রণাদায়ক অস্ত্রোপচার করানো হয়েছিল - সালেহা এদিন নিজেই তার বর্ণনা দিয়েছেন প্রকাশ্যে। আজ তিনি জানেন, এই পদ্ধতিটারই নাম এফজিএম।
এবং সালেহা একা নন। এফজিএমের শিকার যে নারীরা, তাদেরই গড়ে তোলা সংগঠন উইস্পিকআউট ভারতে যে ৯৪জন বোরা মুসলিম মায়ের সঙ্গে কথা বলেছে, তার মধ্যে ৭৫ শতাংশই নিজের মেয়েকে খতনা করানোর কথা স্বীকার করেছেন।
উইস্পিকআইটের মাসুমা রানালভি জানাচ্ছেন, "ধোঁকা দিয়ে বাচ্চা মেয়েদের এই ভয়াবহ পদ্ধতির শিকার বানানো হয় - তাদের মিষ্টি বা চকোলেটের লোভ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ডাক্তার বা দাইয়ের চেম্বারে, তারপর কেটে দেওয়া হয় যৌনাঙ্গের একটা অংশ। প্রচন্ড কষ্ট তো হয়ই, তারপর এই মেয়েরা যখন বেড়ে ওঠে তাদের যৌন জীবনেও নানা অস্বাভাবিকতায় ভুগতে হয়।"তবে গত ডিসেম্বরেই সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা পেশ করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, ভারতে এফজিএমের অস্তিত্ত্ব আছে - ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা অন্য কোনও সরকারি পরিসংখ্যানই সে কথা বলে না।
এর জবাবে অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, যেহেতু এফজিএম ভারতে কোনও অপরাধ বলেই স্বীকৃত নয় - তাই মেয়েদের খতনা করানোর জন্য কাউকে দোষী বলেও চিহ্নিত করা যায় না।
পার্লামেন্টারিয়ান ও কংগ্রেস নেতা শশী থারুর মনে করছেন, সংসদে আইন করে এই প্রথা নিষিদ্ধ করাটাই এই সমস্যার একমাত্র সমাধান।
মি থারুর বলছিলেন, "এটা একটা বহুদিন ধরে চলে আসা সাংস্কৃতিক প্রথা - এসব বলে একে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হলে তা বিরাট ভুল হবে। আমার মতে, এফজিএম বেআইনি ঘোষণা করাটা অপরিহার্য - তবেই একমাত্র এটা বন্ধ হবে।"
"কারণ যে সম্প্রদায়ের মধ্যে এটা প্রচলিত, তারা দেশের আইন মেনে চলার জন্য সুপরিচিত - কাজেই আইন করে এটা নিষিদ্ধ করা হলে আমার বিশ্বাস তারা এটা মানবেন।"
তবে দায়ুদি বোরা উইমেনস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, তাদের সমাজে যেটা হয় সেটা হল 'খফ্জ' বা মেয়েদের খতনা - যৌনাঙ্গের সারকামসেসন মাত্র, এটাকে যৌনাঙ্গের কর্তন বা মিউটিলেশন বলাটা মোটেও ঠিক নয়। ওই সংগঠনের সামিনা কাঁচওয়ালা বলছিলেন, মিউটিলেশন হয়তো করান বোরা মুসলিমদের খুব সামান্য একটা অংশ।
তার বক্তব্য, "এরা খুব অল্পসংখ্যক কিছু লোক - যারা দায়ুদি বোরা সম্প্রদায়ের সব রীতিনীতি হয়তো মেনে চলেন না। কিন্তু এরা সংখ্যালঘু, এই অল্প কিছু লোককে দিয়ে আপনি তো পুরো সম্প্রদায়কে বিচার করতে পারেন না।"
উইস্পিকআউটের সমীক্ষা অবশ্য বলছে ভারতে মহারাষ্ট্র, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে বসবাসকারী বেশির ভাগ বোরা মুসলিম মেয়েই এই এফজিএমের শিকার।
তবে কেরালাতে অল্প কিছু সুন্নি মুসলিম পরিবারেও এই প্রথা চালু আছে বলে প্রমাণ মিলেছে।

সূত্রঃ বিবিসি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর