× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

উত্তম কুমারের অজানা কথা (১৬) / ‘লোকটির ওপর আমার ভীষণ রাগ হলো’

বই থেকে নেয়া


৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি  মহানায়ক উত্তম কুমার  অনন্য অভিনয় জাদুতে মুগ্ধতা বিলিয়েছেন দুর্নিবার। তার অভিনীত ছবি মানেই ভালোলাগার এক বিশাল প্রাপ্তি। পর্দায় এ নায়ক যেমন উজ্জ্বল তেমনই তার ব্যক্তিজীবনের চলাচলেও ছিল নানান রঙের মিশেল। সেই অজানা জীবনের গল্প তার বয়ান থেকে অনুলিখন করেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক-সাহিত্যিক গৌরাঙ্গপ্রসাদ ঘোষ যা পরবর্তী সময়ে ‘আমার আমি’ নামে বই আকারে প্রকাশ হয়। সে বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে উত্তম কুমারের আত্মজীবনী-

তখন অবশ্য গানের টিউশনি আমি করতাম না। তবে বেশ মনে আছে, কালীঘাটের একটা বাড়িতে দিনকতক দুটি মেয়েকে গান শিখিয়েছি। মেয়ে দুটির নাম কিছুতেই মনে করতে পারছি না। কিছুদিন চক্রবেড়িয়া (সাউথ) মনোরমা স্কুলেও গান শিখিয়েছিলাম।
টাকাও পেতাম।
আমার মনের তখনকার সেই অস্বস্তিকর অবস্থায় এই গান শেখাতে যাওয়া ছিল একটা রিলিফ।
আর সেই রিলিফ মনে মনে চাইতামও। যখনই শুনতাম কেউ কোথাও বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন তখনই সেখানে একটা সুযোগ পাওয়ার জন্য ছুটে যেতাম। কাকুতি-মিনতি জানিয়ে বলতাম, যখন সুবিধে হয় তখন আমাকে গান গাইবার সুযোগ দেবেন, আমি অপেক্ষা করব, তবুও দয়া করে আমার নামটা আপনাদের তালিকায় রাখুনÑ
অনেক সময় অবচেতন মনে হয়তো সেই সব বিচিত্রানুষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে ফেলেছি। বলে ফেলেছি, বিশ্বাস করুন, অনেক আচ্ছা আচ্ছা গাইয়েদের চাইতেও ভালো গাইব আমি, আমার গান যদি আপনাদের ভালো না লাগে তা হলে উঠিয়ে দেবেন। এমনই ধরনের কত অনুরোধ করেছি আমি।
কেউ কেউ যে সুযোগ দিতেন না তা নয়। আবার অনেকে অনুষ্ঠানে আমাকে গাইতে দেবেন বলে বসিয়ে রেখেও শেষ পর্যন্ত সুযোগ না দিয়ে অপমান করেছেন। আজ স্পষ্ট মনে পড়েÑ গণ্যমান্য কণ্ঠশিল্পীরা পর পর প্রোগ্রাম সেরে চলে যেতেন, আর আমি গান শোনানোর একরাশ আকাক্সক্ষা নিয়ে নেপথ্যে প্রতীক্ষা করতাম। এসব আমার তখন অপমান বলে মনে হতো। আজ মনে হয় সেটাই ছিল আমার প্রতি তাদের শুভেচ্ছা-অনুপ্রেরণা। এসব ভেবেই তখন নিজেকে সান্ত¡না দিতাম। ভাবতাম, নতুনের জীবনে এসব ঘটনা ঘটেই, তাতে আর ব্যথিত হলে চলে না। ভেঙে পড়া উচিত নয়। নিরাশ হওয়া অন্যায়।
আমি নিরাশ হতাম না, কিছু মনে করতাম না। আমার মন বলে বস্তুটা তখন মরতে বসেছে। এই পতনের পর পতনের আঘাতে ভারাক্রান্ত নিজেকে শহরের কোলাহল থেকে সরিয়ে এনে একদিন চলে গিয়েছিলাম শহরের বাইরে। অনেক দূরে হাঁটতে হাঁটতে ভাবনার জাল বুনতে বুনতে চলে গিয়েছিলাম একেবারে গঙ্গাতীরে। বসে আছি। বসে আছি স্রোতস্বিনী গঙ্গার বুকে দৃষ্টি রেখে। সামনে বড় বড় জাহাজের পর জাহাজ ভাসছে। মাথার ওপরকার বিরাট নীল আকাশটা যেন আমাকে দেখে বিদ্রƒপের হাসি হাসছে।
আমি দুই হাঁটুর মধ্যে মাথা গুঁজে বসে আছি। একটার পর একটা ঘটনা মনের পর্দায় আসছে আবার মিলিয়ে যাচ্ছে। দিদি, সংসারের অনটন, গৌরী, আমার স্বপ্ন এই সবেরই পুনরাবৃত্তি।


আবার গৌরীকে বড় বেশি করে মনে পড়ল। ওকে দেখতে ইচ্ছে করল আমার। সে ইচ্ছে অনেক চেষ্টা করেও দমন করতে পারছিলাম না। বাড়ি ফিরে এলাম। সারা রাত প্রায় গৌরীকে ভাবলাম আমি।
পরদিন স্কুল বসার অনেক আগেই ওর স্কুলের কাছে চলে এলাম ওকে দেখব বলে। সোজা এসে দাঁড়ালাম রমেশ মিত্র গার্লস স্কুলের কাছে। গৌরীকে দেখতে পাওয়া যাবে অথচ নির্জনÑ এমন একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালাম। যথাসময়ে গৌরী এল। দূর থেকে ওকে দেখে এক তীব্র অনুভূতি খেলে গেল আমার মধ্যে।
হঠাৎ আবিষ্কার করলাম গৌরীর সঙ্গে তাদের দারোয়ান। গৌরীর বডিগার্ড। ওর কাছে যাবার মতো সাহস নেই আমার। লোকটির ওপর আমার ভীষণ রাগ হলো। দূরে দাঁড়িয়েই আমি অস্থির হয়ে পড়ছি। গৌরী আমাকে দেখতে পেয়েছিল। চোখের ইশারায় কথা বলেছিল। ওর সেদিনকার সেই দুচোখের ভাষা মুহূর্তে যে কেমন করে বুঝে গিয়েছিলাম আজ আর তা ব্যাখ্যা করতে পারব না। চোখের ভাষায় গৌরী আমাকে ছুটির সময় আসতে বলেছিল বুঝলাম। আবার এলাম। গৌরীর ছুটি হওয়ার বেশ খানিকক্ষণ আগেই আবার এসে দাঁড়ালাম স্কুলের সামনে।
ক্লাসে বসে গৌরী আমার কথা ভেবেছিল নিশ্চয়ই, গভীরভাবে সে আমাকে কল্পনা করেছিল বোধহয়।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল সে আমাকে ভালোবেসেছিল ঠিক, তাকে আমি যেমন করে ভালোবেসেছিলাম।
ছুটির পর সেই বডিগার্ডের চোখ এড়িয়ে গৌরী আমার পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় ছোট্ট করে চাপা স্বরে বলে গেল, তুমি বাড়ি যাও, আমি দেখা করব তোমাদের বাড়িতে।
আমি হারলাম না। জিতলাম।
কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতায় যখন কেউ জিতে যায়, ঠিক সেই মুহূর্তে তার মনের যা অবস্থা হয় আমারও ঠিক তেমনি হলো। আমি রীতিমতো খুশিতে টলমল করে উঠলাম।
আমার এতটা খুশি হওয়ার কারণ, গৌরীর আকস্মাৎ আমাকে তুমি সম্বোধন।
অবিশ্বাস্য সেই সম্বোধনে আমি যেন অনেকটা হালকা হয়ে গেলাম। সব কাজেই যেন আমার উৎসাহ বেড়ে গেল। সেদিন সেই খুশির আমেজ নিয়েই আমি সরাসরি চলে এলাম আমাদের পাড়ার ক্লাবে।

অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর