× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

উত্তম কুমারের অজানা কথা (১৮) / ‘মা বিষ্ময়-ভরা চোখ তুলে আমার দিকে তাকালেন’

বই থেকে নেয়া


৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি  মহানায়ক উত্তম কুমার  অনন্য অভিনয় জাদুতে মুগ্ধতা বিলিয়েছেন দুর্নিবার। তার অভিনীত ছবি মানেই ভালোলাগার এক বিশাল প্রাপ্তি। পর্দায় এ নায়ক যেমন উজ্জ্বল তেমনই তার ব্যক্তিজীবনের চলাচলেও ছিল নানান রঙের মিশেল। সেই অজানা জীবনের গল্প তার বয়ান থেকে অনুলিখন করেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক-সাহিত্যিক গৌরাঙ্গপ্রসাদ ঘোষ যা পরবর্তী সময়ে ‘আমার আমি’ নামে বই আকারে প্রকাশ হয়। সে বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে উত্তম কুমারের আত্মজীবনী-

এমন সময় গণেশদা একদিন ক্লাবে এলেন। একে একে সকলেই ক্লাবে এল। দেখতে দেখতে ক্লাব জমজমাট হয়ে গেল। গণেশদা সবাইকে শুনিয়ে বেশ দম্ভের সঙ্গে বললেন, শোন একটা গুড নিউজ-
আমরা তো প্রত্যেকেই উদগ্রীব।
গণেশদাও যেন কথাটা ছুড়ে দিয়ে আমাদের খেলাতে লাগলেন।
আমরা বললাম, কী হলো গণেশদা, বলুন গুড নিউজটা কী?
গণেশদা হাঁটু নাচিয়ে, কণ্ঠস্বরে গাম্ভীর্য বজায় রেখে, দু-চারবার গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বললেন, শোন তোমরা, আমি সিনেমায় নামছি; আজ সব কথা পাকাপাকি হয়ে গেল- তারপর সবিস্তারে বললেন গণেশ ব্যানার্জি।
ভোলা আঢ্যের ‘মায়াডোর’ ছবিতে একটা ছোট রোল পেয়েছেন গণেশদা। খবরটা শুনেই আমি কেমন যেন মুষড়ে গেলাম। সেদিন আর রিহার্সালে যেন কিছুতেই মন বসাতে পারছিলাম না। নিজেকে যেন কিছুতেই সহজ সংযত করতে পারছিলাম না। অবশেষে এক সময়ে চুপি চুপি গণেশদাকে বলেই ফেললাম গণেশদা, একটা কথা বলব?
গণেশদা তখন যেন অন্য এক ভাবরাজ্যে বিচরণ করছেন। মহাখুশি তিনি। বেশ উৎফুল্লভাবেই বললেন, বল কী বলবি-
আমি দ্বিধাজড়িত স্বরে বললাম, তুমি সিনেমায় নেমেছ, আমার একটা চান্স হবে না? একটু চেষ্টা করে দেখ না গণেশদা-
গণেশদা তখন অন্য ভাবরাজ্যের মানুষ। তার চোখে-মুখে ভাবান্তর লক্ষ করলাম। কী ভাবলেন জানি না। সেই আগের মতো খুশি খুশি মন নিয়েই বললেন, তুই পার্ট করবি? চেষ্টা করলেই হবে কি না জানি না, তবে তুই যখন বলছিস একবার চেষ্টা করে দেখতে পারি। তুই এক কাজ কর, কালই তুই ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওতে চলে আয়, আমি থাকব, দেখি কী করা যায়-
তারপর থেকে পোর্ট কমিশনার্সের চাকরিতে ফাঁকির মাত্রা বেড়ে গেল। একদিকে তালি দিতে গেলে অন্যদিকে ছিঁড়ে যাওয়া গোছের অবস্থা তখন আমার। তবুও যায় যাবে প্রাণ যাক না কেন যদি হরি পাই’ ভেবেই পরদিন আবার অফিস কামাই করলাম। সোজা চলে এলাম ট্রাম-স্টপেজে। ট্রাম থেকে প্রিন্স আনোয়ার শা রোডের মুখে নেমে এক নতুন আশায় ভরা মন নিয়ে এগিয়ে গেলাম। এলাম ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওতে। এখন যেখানে নতুন সিনেমা হাউস নবীনা, সেই জায়গাটায় ছিল ভারতলক্ষ্মী স্টুডিও।
গেটের কাছে আসতেই দারোয়ান বাধা দিল। আমি সব কথা ওকে বুঝিয়ে বললাম। সে তখন দয়া করে আমাকে স্টুডিওতে ঢোকার অনুমতি দিল। আমি দুরু-দুরু বুকে ভিতরে ঢুকে গেলাম। থাক সে কথা।


গণেশদা আমাকে সিনেমায় নামার সুযোগ দেবেন জানতে পেরে আমি আনন্দের আতিশয্যে ছুটে গেলাম মায়ের কাছে। মাকে খবরটা দেওয়া দরকার। প্রণাম করলাম মাকে। অসময়ে প্রণাম।
মা বিষ্ময়-ভরা চোখ তুলে আমার দিকে তাকালেন। আমি বললাম, মা, আমি সিনেমায় অভিনয় করব, তুমি আমাকে আশীর্বাদ করো মা-
মা আমাকে আশীর্বাদ করলেন।
সেই মুহূর্তে গৌরীর কথা আমার বড় বেশি করে মনে পড়তে লাগল। মনে হলো এ ব্যাপারে গৌরীর কাছ থেকেও অনুমতি নেওয়া দরকার। আমি অনেক ভেবে পরদিনই আবার গেলাম রমেশ মিত্র গার্লস স্কুলের সামনে। গৌরীর সঙ্গে দেখা হতে সে আগের মতোই চুপি চুপি বলল, তুমি বাড়ি যাও, আমি তোমাদের বাড়িতে আজ যাব-
তখন আর বেশি কথা হলো না। আমি ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। অপেক্ষায় রইলাম গৌরী আসবে। আমার দীর্ঘ প্রতীক্ষা।
গৌরী সেদিন কথা রেখেছিল। সোজা চলে এসেছিল আমার কাছে। কাছে এসে লজ্জাবনত মুখে দাঁড়াল।
আমি আস্তে করে বললাম, গৌরী তোমার সঙ্গে একটা কথা আছে-
গৌরী বলল, বলো-
আমার প্রতি তার কতখানি আন্তরিকতা তা শুধু এইটুকু বলো, তুমি সম্বোধনের মধ্যে প্রকাশ পেল।
বললাম, আমি সিনেমায় নামছি, তোমার মত কী গৌরী?
বড় বড় দুটো চোখ আমার চোখের ওপর রেখে বলল, বেশ তো, এতে আবার আমার মতামত কী?
সেই মুহূর্তে কোনো লজ্জা আমাকে ভর করেনি। কোনো সঙ্কোচ বোধ করিনি।
আবার বললাম, গৌরী বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে ভালোবাসি, আর ভালোবাসি বলেই তোমার মতামত আমার একান্ত দরকার-
গৌরী হাসল। প্রাণখোলা মিষ্টি হাসি। সে হাসি উচ্ছ্বাসের হাসি নয়।
হাসতে হাসতে বলল, তুমি সিনেমায় নামলে আমি খুশি হব বেশি-
তখনই আবার আমার মনের পর্দায় ভেসে উঠল বড়মামার মুখটা। মনে পড়ল তাঁর আশীর্বাণী। একটু একটু করে যেন সত্য হয়ে যাচ্ছে আমার বড়মামার উক্তি। আমার স্বপ্ন যেন সার্থক হতে চলেছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর