× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

উত্তম কুমারের অজানা কথা (২০) / ‘দেখতে দেখতে সারা শহরে ছড়িয়ে পড়ল আতঙ্ক’

বই থেকে নেয়া


৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়ক উত্তম কুমার অনন্য অভিনয় জাদুতে মুগ্ধতা বিলিয়েছেন দুর্নিবার। তার অভিনীত ছবি মানেই ভালোলাগার এক বিশাল প্রাপ্তি। পর্দায় এ নায়ক যেমন উজ্জ্বল তেমনই তার ব্যক্তিজীবনের চলাচলেও ছিল নানান রঙের মিশেল। সেই অজানা জীবনের গল্প তার বয়ান থেকে অনুলিখন করেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক-সাহিত্যিক গৌরাঙ্গপ্রসাদ ঘোষ যা পরবর্তী সময়ে ‘আমার আমি’ নামে বই আকারে প্রকাশ হয়। সে বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে উত্তম কুমারের আত্মজীবনী-

আবার শুরু করে দিলাম আমি আমার সেই পুরনো দশটা-পাঁচটা। সেই বাড়ি-চাকরি-ক্লাব, আবার বাড়ি আবার চাকরি-আবার- আমি যেন চক্রাকারে শুধু ঘুরে চলেছি। ভালো লাগে না। কোনো কাজেই যেন মন বসাতে পারি না।
তখন আর এক নতুন চিন্তা আমার। চিন্তা সেই ‘মায়াডোর’ নিয়ে। কবে মুক্তি পাবে! কবে রুপোলি পর্দায় আমি আমাকে দেখতে পাব শুধু সেই চিন্তার একঘেয়েমি। আমার শুধু অপেক্ষা করে থাকা। একটা অস্বস্তিকর অবস্থা। একরাশ অশান্তির পোকা যেন আমার মাথাটাকে কুরে কুরে খাচ্ছে।
ঠিক এমন সময় একদিন সাদার্ন পার্কের পাশ দিয়ে বল খেলে ফিরছি হঠাৎ একেবারে সামনাসামনি ধীরেনবাবুর সঙ্গে দেখা।
থিয়েটার, সিনেমা, যাত্রায় ড্রেস সাপ্লাই করেন ধীরেনবাবু। আমি থিয়েটার করি বলেই তার সঙ্গে আমার পূর্বপরিচয় ছিল। দেখা হতেই ধীরেনবাবু সরাসরি আমাকে প্রশ্ন করলেন, এই যে, কেমন আছ?
বিরক্তিসূচক অভিব্যক্তি নিয়েই বলেছিলাম, আমি ভালোই।
কথাটা বলে ধীরেনবাবুকে উপেক্ষা করেই চলে আসছিলাম, হঠাৎ আমার মনে হলো তাকে একবার টোকা মেরে দেখলে কেমন হয়। ভাবলাম তার তো সিনেমা মহলের সঙ্গে যোগাযোগ আছে।
কথাটা আর আমাকে বলতে হলো না। আমার মুখে ভাষা ফোটার আগেই ধীরেনবাবু বললেন, শোনো, তুমি সিনেমায় অভিনয় করবে?
এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! কথাটা শুনে আমি অত্যন্ত খুশি হয়ে গেলাম। আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম। যথেষ্ট আগ্রহ নিয়ে বললাম, কী বই?
ধীরেনবাবু হাঁটতে শুরু করলেন। আমিও তার পাশে পাশে চলতে লাগলাম। ধীরেনবাবু চলতে চলতেই বললেন, ছবিটার নাম ‘দৃষ্টিদান’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দৃষ্টিদান’। এসবি প্রোডাকশন্সের ছবি। পার্টটা ছোট, যদি রাজি থাকো তো বলো-
সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হলাম! আবার সেই একস্ট্রা। বললাম, নিশ্চয়ই করব, আপনি দয়া করে একটু ভালোভাবে চেষ্টা করবেন তো?
ধীরেনবাবু সহাস্যে আমাকে দেখা করতে বলে চলে গেলেন। আমি বেশ খুশি-খুশি ভাব নিয়েই বাড়ি ফিরলাম।
দেশের রাজনৈতিক তপ্ত আবহাওয়ার ভেতর দিয়ে তখনও আমরা এগিয়ে চলেছি। প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে আমাদের চারদিকে সন্ত্রাস। পরাধীনতার নাগপাশ থেকে ভারতকে মুক্ত করবার জন্য জননেতারা তখন মরিয়া। সবারই মাতৃমুক্তিপণ। অশান্তির শেষ নেই। গোটা শহরে আজ বিক্ষোভ, কাল হরতাল। চারদিকে কেমন যেন একটা চাপা আগুন। আগস্ট মাসে সেই আগুন যেন বাড়তে থাকল। ব্রিটেনের ক্যাবিনেট মিশন ভারতে এসেছে, ভারতের স্বায়ত্তশাসনে সাড়া দিয়ে। তাদের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম লিগের প্রাদেশিক শাখা কলকাতায় শুধু নয়, সারা পশ্চিমবঙ্গে হরতাল ডাকল। হরতাল মোটামুটি সার্থক হলো বটে, কিন্তু ষোলোই আগস্ট কলকাতায় দাঙ্গা শুরু হলো দুপুরবেলা থেকে। দেখতে দেখতে সারা শহরে ছড়িয়ে পড়ল আতঙ্ক। চারদিকে শুধু খুন আর খুন। শহরের পথে পথে শুধু মানুষের রক্তের নদী। আকাশে শকুন। গোটা শহরটা স্তব্ধ। আমরা বাড়ি থেকে বেরুতে পারছি না কেউ। সিনেমা-থিয়েটার বন্ধ। আমরা পাড়ার বন্ধুরা এই হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গার সময় কোমর বেঁধে রিলিফের কাজে নেমে পড়লাম। আমরা অনেক মানুষকে তখন নানাভাবে সাহায্য করেছি।
মাসখানেক পর দাঙ্গা অনেকটা স্তিমিত হলো বটে কিন্তু তবুও আতঙ্ক মুছে গেল না। হিন্দু-মুসলমান কেউ সহজ হতে পারছে না। ১৯৪৬ সাল গেল।
চলে গেল ১৬ই আগস্টের প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস ইতিহাসের পাতায় রক্তের আলপনা এঁকে রেখে!
১৯৪৭ সাল এসে দাঁড়াল আমাদের সামনে আর এক ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে।
১৯৪৭ সালের গোড়ার দিকে আমার প্রিয় গায়ক সায়গল মারা গেলেন! এই সালের ২৬শে মার্চ থেকে আবার হিন্দু-মুসলমানের ভয়ঙ্কর দাঙ্গা আরম্ভ হলো। চতুর্দিকে শুধু মৃতদেহ। সে এক রোমহর্ষক ব্যাপার। মে মাসে বেলেঘাটা তালতলা অঞ্চল মিলিটারি নিয়ে নিল।
এল সেই দিন। কংগ্রেসের অখ- ভারতের স্বাধীনতার স্বপ্ন হারিয়ে গেল। ৩রা জুন ব্রিটেন ঘোষণা করল, ভারত আর পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের কথা। ভারত দ্বিখ-িত হলো, আর ২০শে জুন বাংলাও দ্বিখ-িত হলো। ভারতবাসীর সেই চরম দুঃখের দিন, আমরা দু’চোখে দেখলাম। সে এক চরম মানসিক অস্থিরতা-অসুস্থতা আমাদের।
এর মধ্যে আমরা আবার রিলিফ দিলাম। খিচুড়ি রান্না করে আমরা খাওয়াতাম। তার মধ্যে আমার রক্তে আগুন জ্বলত। একদিন একটি গান লিখলাম আমি। সেই গান আমরা গেয়ে গেয়ে পাড়া পরিক্রমা করলাম। সেই গানের সুরও দিয়েছিলাম আমি। পরে সেই গান অনেক জায়গায় আমাকে শোনাতে হতো। গানটি ছিল এরকম-
হিন্দুস্তান মে কেয়া হ্যায় তুমারা
ও ব্রিটিশ বেচারা
আভি চলি যাও ইংল্যান্ড বাজা কর ব্যান্ড
মন্দির মসজিদ মে পূজা আরতি
মসজিদ মে শুনো আজান পূকার্তি
দিলছে দিলাও দিল হিন্দু মুসলমান
সারি হিন্দুস্তান মে আয়ি তুফান
গরিবোঁকে দুখো কি হোগি আসান।

অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর