× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

উত্তম কুমারের অজানা কথা (২১) / ‘সুযোগের খেসারত দিতে হয়েছিল আমাকে’

বই থেকে নেয়া


৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়ক উত্তম কুমার অনন্য অভিনয় জাদুতে মুগ্ধতা বিলিয়েছেন দুর্নিবার। তার অভিনীত ছবি মানেই ভালোলাগার এক বিশাল প্রাপ্তি। পর্দায় এ নায়ক যেমন উজ্জ্বল তেমনই তার ব্যক্তিজীবনের চলাচলেও ছিল নানান রঙের মিশেল। সেই অজানা জীবনের গল্প তার বয়ান থেকে অনুলিখন করেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক-সাহিত্যিক গৌরাঙ্গপ্রসাদ ঘোষ যা পরবর্তী সময়ে ‘আমার আমি’ নামে বই আকারে প্রকাশ হয়। সে বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে উত্তম কুমারের আত্মজীবনী-

সেই তপ্ত আবহাওয়ার মধ্যেই ‘মায়াডোর’ ছবির শুটিং হয়েছিল, যা আগে বলা হয়নি। তারপর এল ১৫ই আগস্ট।
১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্টÑ এই রক্তবর্ণ তারিখটি আমাদের এনে দিল শান্তি আর স্বস্তি! ভারতবর্ষ স্বাধীন হলো। আমরা স্বাধীনতা পেলাম।
তবে ১লা সেপ্টেম্বর আবার নতুন করে দাঙ্গা আরম্ভ হলো। স্বাধীনতার পরেও দাঙ্গা।
সেই দিনগুলোও কাটিয়ে উঠলাম।
১১ই ডিসেম্বর প্রখ্যাত অভিনেতা দেবী মুখার্জি মারা গেলেন শুনতে পেয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল।
এর মধ্যে আমার অভিযান কিন্তু থেমে থাকেনি। আমি যথাসময়ে যথারীতি ধীরেনবাবুর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তিনি এতটুকু বিলম্ব না করে নীতিনবাবুর সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিলেন। পরিচয় করিয়ে দিলেন।
নীতিনবাবু পরিচালক হিসেবে তখন আমার কাছে খুবই পরিচিত। পরিচিত হওয়ার পর নীতিন বসু আমাকে সুযোগ দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা প্রকাশ করলেন না। ‘দৃষ্টিদান’ ছবিতে আবার আমি আমার স্বপ্নকে সার্থক করে তোলার সুযোগ পেলাম।
পোর্ট কমিশনার্সের চাকরিটাই আমার একমাত্র সম্বল জেনেও আমি যেন তার সঙ্গে দিনের পর দিন অন্যায়ের মাত্রা বাড়িয়েই চললাম।
বেশ কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে আমি ‘দৃষ্টিদান’ ছবিতে শুটিং শুরু করে দিলাম। অসিতবরণ ছিলেন এ ছবির নায়ক। তারই ছোটবেলাকার চরিত্রে আমাকে অভিনয় করার সুযোগ দিলেন নীতিন বসু। মনে আছে সেই ছবির নায়িকা ছিলেন সুনন্দা দেবী। আরও মনে আছে তার ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আজকের নাট্যজগতের স্বনামধন্য অভিনেত্রী কেতকী দত্ত।
মনে পড়ছে। এক এক করে সব মনে পড়ছে আমার। স্মৃতির অতল গহ্বর থেকে আমি আমার হারানো অতীত-মুক্তা একটা একটা করে বেছে তুলছি।
মনে পড়ে ‘দৃষ্টিদান’ ছবিতে আমার পারিশ্রমিক ঠিক হয়েছিল সাতাশ টাকার মতো। তবে পুরো সাতাশ টাকাও আমি পাইনি। মনে আছে সুযোগের খেসারত দিতে হয়েছিল আমাকে। কমিশন দিতে হয়েছিল আমার পারিশ্রমিক থেকে। সব বাদ দিয়ে সেদিন আমি পেয়েছিলাম সাড়ে তেরো টাকার মতো। এতে আমার বিন্দুমাত্র ক্ষোভ ছিল না। আমি তখন পারিশ্রমিকের চাইতে সুযোগ পাওয়ার ব্যাপারটাকে প্রাধান্য দিয়েছি বেশি।
এরপর এল ১৯৪৮ সাল।
১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধী আততায়ীর গুলিতে মারা গেলেন। এদিকে ১৯শে এপ্রিল তারাসুন্দরীর মতো নাট্যসম্রাজ্ঞী মারা গেলেন। তারপরই মারা গেলেন ডিসেম্বর মাসে কুসুমকুমারীর মতো পুরোনো দিনের প্রখ্যাত অভিনেত্রী। এই সব ঘটনা আমার মনকে ভেঙে দিয়েছিল। তবুওÑ
তখন আমরা সহজ জীবনের মধ্যে চলে এসেছি। গোটা ভারতবর্ষ তখন স্বাভাবিক বাতাস উপভোগ করছে। মনের আকাশ তখন মেঘমুক্ত। এমন সময় আমি আমার স্বপ্নের সার্থক রূপ দেখলাম।
‘দৃষ্টিদান’ মুক্তি পেল। আমি এক মহা আনন্দে ভরে গেলাম। তবুও তারই পাশাপাশি আর এক হতাশার আঘাতে আমি রীতিমতো কাতর হয়ে পড়েছি।
কাগজের পৃষ্ঠায় বিজ্ঞাপন বেরোল দৃষ্টিদান এর। আমি প্রত্যাশা করেছিলাম যে কাগজের পৃষ্ঠায় ছাপার অক্ষরে হয়তো আমি আমার নামটা দেখতে পাব। প্রত্যাশা মিটল না। প্রত্যাশা মেটার মতো কোনো কাজ তো আমি করিনি। এই বলে আমি মনকে প্রবোধ দিলাম।
অনেকগুলো বছর কেটে গেল।
আশা-আকাক্সক্ষার একটার পর একটা বন্দুর পথ পেরিয়ে আমিও এগিয়ে যেতে লাগলাম। গৌরী তখন তার ভালোবাসা দিয়ে, অনুপ্রেরণা দিয়ে আমাকে যে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকল, পার হয়ে যেতে লাগলাম একটার পর একটা চড়াই-উতরাই।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমরা দুজনে দুজনার সঙ্গে দেখা করি, গল্প করি, কত পথের পর পথ চলি। আবার ফিরে আসি। ১৯৪৮ সালের দিনগুলো ঠিক এমনি করেই চলতে লাগল।
‘দৃষ্টিদান’ তখন চলছে। এমন সময় আমার জীবনে এক ভয়ঙ্কর দুর্যোগের পূর্বাভাস দেখা দিল। গৌরী আসছে না।
তার আকস্মিক অন্তর্ধানে আাম যেন সেদিন একটু বেশিমাত্রায় মুষড়ে গিয়েছিলাম। ভেবে রেখেছিলাম গৌরীকে সঙ্গে নিয়ে দুজনে ছবি দেখে আসব। হলো না। আশাহত হলাম। দিন তিনেক অপেক্ষা করবার পর ভাবলাম আবার অন্নপূর্ণাকে ডেকে আসল কারণটা কী জেনে নেব। অন্নপূর্ণার দ্বারস্থ হবার আগেই শুনলাম, গৌরী নিতান্ত ছেলেমানুষের মতো একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে তার বাড়িতে। সব কিছু শুনে ভীষণ রাগ হলো গৌরীর ওপর। এমন করে মনের সত্যকে এত দ্রুত প্রকাশ করতে কে বলেছিল তাকে!

অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর