× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

উত্তম কুমারের অজানা কথা (২২) / ‘আমার মনটা সেদিন অপমানে কেঁদে উঠেছিল’

বই থেকে নেয়া


৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়ক উত্তম কুমার অনন্য অভিনয় জাদুতে মুগ্ধতা বিলিয়েছেন দুর্নিবার। তার অভিনীত ছবি মানেই ভালোলাগার এক বিশাল প্রাপ্তি। পর্দায় এ নায়ক যেমন উজ্জ্বল তেমনই তার ব্যক্তিজীবনের চলাচলেও ছিল নানান রঙের মিশেল। সেই অজানা জীবনের গল্প তার বয়ান থেকে অনুলিখন করেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক-সাহিত্যিক গৌরাঙ্গপ্রসাদ ঘোষ যা পরবর্তী সময়ে ‘আমার আমি’ নামে বই আকারে প্রকাশ হয়। সে বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে উত্তম কুমারের আত্মজীবনী-

শুনলাম ‘দৃষ্টিদান’ দেখতে গিয়েই সেই অঘটন ঘটিয়েছে গৌরী। ছবি দেখতে গিয়েছিল ঠাকুরমার সঙ্গে। ছবি তখন চলছিল। ঠাকুরমা ঠাট্টার সুরে বলেছিলেন ছবির পর্দায় কয়েকজন শিল্পীকে দেখিয়ে, হ্যাঁ রে, দেখ তো ওদের মধ্যে তোর কাউকে মনে ধরে কি না, কাকে তোর পছন্দÑ
এ যেন কেঁচো খুঁড়তে সাপ! অবশ্য আসলে যা বেরিয়ে পড়ল তা সাপ নয়, সত্য।
তার গায়ে খোঁচা দিলে সে তো ফোঁস করে উঠবেই। গৌরীও সত্য। গৌরী সরল। তাকে প্রকাশ করলে ক্ষতি কী? এই ভাব নিয়ে ঠাকুমার ঠাট্টার জবাবে রুপোলি পর্দার বুকে আমাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল গৌরী।
ঠাকুরমা ভাবলেন ঠাট্টার জবাবে ঠাট্টা। তিনি রীতিমতো বিস্মিত। এত ছেলে থাকতে ওই রোগাটে ছেলেটা। ব্যাপারটা যাচাই করবার জন্য তিনি আবার বলেছিলেন, ও মা! ওই রোগা ফিনফিনে ছেলেটাকে তোর মনে ধরল কি রে!
সেই মুহূর্তে সে কথার প্রত্যুত্তরে গৌরী কী বলেছিল আমি জানি না! তবে পরক্ষণে ঠাকুমা গৌরীর সেই ইঙ্গিতকে নিছক ঠাট্টা বলে ধরে নিতে পারেননি। পরদিন থেকে তাই তিনি গৌরীকে সব সময় নজরে নজরে রেখেছিলেন।
সত্যি তো! মেয়ে তো মিথ্যে বলেনি দেখছি! তা না হলে একটা বায়োস্কোপ-করা ছেলেকে নিয়ে এত ভাবনা কেন! মেয়ের এত মাতামাতিই বা কীসের! ঠাকুমার বড় আদুরে এই নাতনি, তবুও তিনি তার মুখের দিকে তাকিয়ে বংশমর্যাদা অস্বীকার করতে পারলেন না। গৌরীর মনের ইচ্ছে তিনি বাড়ির সকলের কাছে এক সময় প্রকাশ করে দিলেন। স্পষ্ট ভাষায় বললেন, দেখো বাছা, তোমাদের মেয়ের মতিগতি খুব সুবিধের মনে হচ্ছে না।
তারপর সব কথা তিনি খুলে বলেছিলেন। এরপর থেকে অভিভাবকরা রীতিমতো সজাগ হলেন। বাড়ির বাইরে যাবার পথ গৌরীর বন্ধ হয়ে গেল।
আমার সঙ্গে দেখা না করার এই হলো প্রধান কারণ। সে কারণ অবশ্য আমি অনেক পরে জেনেছিলাম।
অনেক ভেবেচিন্তে অন্নপূর্ণাকে একদিন ডেকে বললাম, তোর সেই গৌরীর কী হলো রে! যা না ভাই, একটু খবরটা এনে দেÑ
অন্নপূর্ণা যেন সত্যিই অন্নপূর্ণা। মুখ খুললেইÑ তথাস্তু। রাজি হয়ে গেল সে। আমাকে প্রতিশ্রুতি দিল গৌরীর খবর সে এনে দেবে। প্রতীক্ষায় রইলাম।
কথা রাখল অন্নপূর্ণা। গৌরীর বাড়ি থেকে ফিরে এসে সে সব কথা আমাকে খুলে বলল। একটু আগেই যে ঘটনা আমি শোনালাম সে সব ঘটনা আমার ওই বোনের মুখ থেকে শোনা।
অগত্যা ধরে নিলাম গৌরীর সঙ্গে আর আমার দেখা হবে না।
ভীষণ উৎকণ্ঠার মধ্যে আমার দিন কাটছিল। সে যে কী তীব্র জ্বালা তা লিখে বোঝাতে পারব না। প্রকাশ্যে কারও সামনে চোখের জল ফেলিনি বটে তবে ভেতরে ভেতরে কাঁদতে আর বাকি রেখেছিলাম কোথায়!
এখন মনে হয় কত ছেলেমানুষ ছিলাম সেদিন আমি।
যত দিন যায় ততই মনের জ্বালা যেন আমার তীব্রতর হতে থাকে। বিছানায় শুয়ে যখন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ি তখন গৌরীর ফ্যাকাশে বিবর্ণ মুখটা যেন আমি আমার চোখের সামনে দেখতে পাই। মনে হয় আমার কাছে ছুটে আসার জন্য সেও যেন ঠিক আমারই মতো কাতর হয়ে পড়েছে।
গৌরীকে ঘিরে আমি নানা স্বপ্ন দেখে চলেছি। কখনো মনের পর্দায় দেখেছি সে আমার কাছ থেকে চলে যাচ্ছে দূরেÑ অনেক দূরে। আর আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেও তার নাগাল পাচ্ছি না।
এদিকে অফিসের কাজেও মন বসাতে পারছি না। তার উপরে আমার অভিনয় করার যে আগ্রহ, যে উৎসাহ, তাও যেন স্তিমিত হয়ে পড়ছে। অফিস থেকে সরাসরি বাড়ি ফেরার চেষ্টা যেটা ছিল, তাও যেন আর থাকছে না।
এই ভাবেই দিন এগিয়ে চলে। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কেরানি-জীবন অতিবাহিত করি। দিন কাটাই।
১৯৪৮ সালের প্রায় মাঝামাঝি আবার একটা সুযোগ পেলাম।
নবেন্দুসুন্দর পরিচালিত ‘কামনা’ ছবিতে কাজ করেছিলাম। যে কথা বলা হয়নি তা হলো এই, এই ছবিতে আমি প্রথম নায়ক আর আমার প্রথম নায়িকা (তিনিও প্রথম নায়িকা) ছবিদি। ছবি রায়। আমি প্রথম থেকেই ছবি রায়কে ছবিদি বলতাম। তিনি আমার চেয়ে বয়সে ছোট কিন্তু কর্মক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সিনিয়র। তাই দিদি বলতাম তো বটেই, তবে প্রায় সকলকেই আমি প্রধানত একটা সম্মান দেবার চেষ্টা করতাম। একদিন এই ছবির শুটিং চলাকালীন আবার একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম আমি। আমার মনটা সেদিন অপমানে কেঁদে উঠেছিল। সে যে কত বড় দুঃখ সেদিন পেয়েছিলাম তার একমাত্র সাক্ষী ছবিদি আর শেতলদার বিবেক।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর