× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনেরই জন্যে

ফেসবুক ডায়েরি

সেলিম জাহান
৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার

খুব সম্ভবত: নব্বুইয়ের মাঝামাঝি সময়। প্রয়াত অধ্যাপক মুশাররফ এসেছেন নিউ ইয়র্কে। একরাত কাটালেন আমাদের সঙ্গে। বেনু আর আমি দু’জনে ভীষণ খুশি। আমাদের দু’জনেরই প্রিয় শিক্ষক, আমি তাঁর সহকর্মীও ছিলাম বহুদিন, পারিবারিক পর্যায়েও হৃদ্যতা বিস্তৃত।
আমাদের কিশোরী কন্যাদ্বয় চমকিত। দেশে তারা সবসময়ে দেখে এসেছে যে তাদের বাবাকেই শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ বলে, কিন্তু তাদের মাতা-পিতারও যে একজন ‘স্যার’ আছেন, যিঁনি অনায়াসে তাদের ধমকাতে পারেন, এটা দেখেই তারা আহ্লাদে আটখানা। সব মিলিয়ে বিরল এক আনন্দঘন পরিবেশ।
রাতের খাওয়ার পরে তুমুল গল্প হচ্ছে। বেনু কথা প্রসঙ্গে একজনের কথা তুলল, যাঁকে স্যারও চেনেন।
হঠাৎ বেনুকে থামিয়ে দিয়ে স্যার জিজ্ঞেস করলেন তাঁর অনানুকরণীয় ভঙ্গিতে, ‘বাঁইচা আছে তো, না মইরা গ্যাছে’?
বিব্রত ও আহত বেনু উত্তর দিল, ‘ছি, ছি, বেঁচে আছেন, মরে যাবেন কেন’?
উদাস দার্শনিকের ভঙ্গিতে স্যার জবাব দিলেন, “কি কইরা কই, কও? প্রত্যেক দিন ইউনিভার্সিটি এলাকায় বহু লোক দেহি, খায়-দায়, ঘোরে-ফেরে; বাঁইচা আছে না মইরা গেছে, বুঝিতো না’। আমরা সবাই সশব্দে হেসে উঠেছিলাম। পরে বুঝেছি যে স্যারের কথার গভীরতর মর্মার্থ। শুধু শ্বাসপ্রশ্বাস নিলেই, নশ্বর দেহের অধিকারী হলেই কি আমরা বেঁচে থাকি? দিনগত পাপ-ক্ষয়ই কি জীবন?
যে বেঁচে থাকা শুধু নিজেকে নিয়ে, তাকে কি বেঁচে থাকা বলে? কখনো-সখনো মরে গিয়ে কতো মানুষ বেঁচে যায়, কিন্তু বেঁচে থেকেও কত মানুষ যে মৃত, তার বেলা? যে জীবন নিজেকে ছাড়া অন্যকে ভাবেনি; যে জীবন উদ্ভাসিত করেনি অন্য জীবনকে; যে জীবন শুধু নিয়েছে, কিন্তু কিছু দেয় নি, সেটা কি জীবন?
যে জীবন ভালোবাসা নিয়েছে শুধু, কিন্তু ভালোবাসা দেয়নি; যে জীবন নিজের সুখে উল্লসিত হয়েছে, কিন্তু ঈর্ষিত হয়েছে অন্যের আনন্দে; যে জীবন নিজের দুঃখে কাতর হয়েছে, কিন্তু ব্যথিত হয় নি অন্যের বেদনায়, তাকে জীবন বলি কি করে?
নিজের জন্য বাঁচি, কিন্তু অন্যের জন্য বেঁচে থাকি, সেটাইতো জীবন। অনেক সময়ই আমাদের অগ্রাধিকার নির্বাচনে ভুল হয়, আমরা জীবিকা আর জীবনকে গুলিয়ে ফেলি, আমরা জীবিকাকেই জীবন বলে মনে করি। আমরা ভুলে যাই জীবনের জন্য জীবিকা, জীবিকার জন্য জীবন নয়। জীবিকা ভোগের, জীবন উপভোগের। জীবিকা-জীবনের এ বিভ্রান্তির কারণে, আমরা সময় নষ্ট করি যা জীবনে গুরুত্বপূর্ণ নয় তার জন্য, টেরও পাই না কখন প্রিয়জন দূরে সরে গেছে, কখন জীবন আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। শুধু পড়ে থাকে আমাদের জীবিকা আর পড়ে থাকি আমরা। মানুষ তখন রিক্ত হয়ে যায়, নিঃস্ব হয়ে যায়, জীবনের কিছুই আর তার থাকে না।
জীবিকা এতো ছোট ক্যান, এ ক্ষোভ বড় বালখিল্য। ‘জীবন এত ছোট ক্যানে’, সে আর্তিটাই বড। কারণ, চূড়ান্ত বিচারে, ‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনেরই জন্যে’।

অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর