× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

উত্তম কুমারের অজানা কথা (২৪) /‘আমার দুটো কান বোধহয় লাল হয়ে গিয়েছিল লজ্জায়’

বই থেকে নেয়া


১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, রবিবার

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়ক উত্তম কুমার অনন্য অভিনয় জাদুতে মুগ্ধতা বিলিয়েছেন দুর্নিবার। তার অভিনীত ছবি মানেই ভালোলাগার এক বিশাল প্রাপ্তি। পর্দায় এ নায়ক যেমন উজ্জ্বল তেমনই তার ব্যক্তিজীবনের চলাচলেও ছিল নানান রঙের মিশেল। সেই অজানা জীবনের গল্প তার বয়ান থেকে অনুলিখন করেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক-সাহিত্যিক গৌরাঙ্গপ্রসাদ ঘোষ যা পরবর্তী সময়ে ‘আমার আমি’ নামে বই আকারে প্রকাশ হয়। সে বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে উত্তম কুমারের আত্মজীবনী-

কেউ আমার সঙ্গে কথাটিও বলছে না। আমি নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ফ্লোরের একপাশে দাঁড়িয়ে রইলাম। কথা বলার সঙ্গী নেই। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমি শুধু স্বপ্নের জাল বুনছিলাম।
এমন সময় একজন সহকারী পরিচালক আমার কাছে এলেন। তার একটু পরেই এলেন রাজেনবাবু। আমাকে কাছে ডেকে বুঝিয়ে দিলেন কী করতে হবে আমাকে।
শুনলাম প্রভাদেবীর বিপরীতে অভিনয় করতে হবে আমাকে। তখন প্রভাদেবীর অভিনেত্রী হিসেবে খুব নামডাক। কেতকী দত্তের মা। প্রভাদেবীর নামটা আমার অনেক শোনা। সেই প্রভাদেবী অভিনেত্রী-গায়িকা। আমি ডাক্তার, তাকে দেখতে গেছি। স্টেথোসকোপ দিয়ে তাকে পরীক্ষা করতে হবে, এই হলো আমার চরিত্র।
গভীর মনোযোগ সহকারে ব্যাপারটা বুঝে নিলাম। অনেকক্ষণ ধরে দৃশ্য আর চরিত্রটা নিয়ে নিজের মনে মনে ছবি আঁকলাম।
শুটিং জোনো আলো প্রস্তুত হলো। দাঁড়িয়ে দেখলাম। অবাক হয়ে গেলাম। দেখলাম কলাকুশলীদের। কী কঠিন পরিশ্রম তারা করে চলেছেন। দৃশ্য প্রস্তুত। যথাসময়ে আমাকে ডাকা হলো। সহকারী পরিচালক এগিয়ে এলেন। তিনি আমাকে রিহার্সাল দেওয়ালেন। আমার সারা মন জুড়ে তখন সেই কাজ। আমি গভীরভাবে চিন্তিত। এমন সময় আমাকে উদ্দেশ করে কে যেন বলে উঠলেন, রাজেনদা, এ কলির ভীমকে কোথা থেকে পেলেন? পায়ে পাথর বেঁধে না রাখলে ঝড়ে উড়ে যাবেÑ
আর একজন তার সেই মন্তব্যে ইন্ধন দিলেন, একেবারে নতুন আলু আমদানি হয়েছে গাঁ থেকেÑ
এমনি কত বাঁকা-বিকৃত উক্তি তারা বর্ষণ করলেন আমাকে উদ্দেশ করে। কথাগুলো বড় বিশ্রী লাগছিল। এক একটা মন্তব্যের এক একটা বিষাক্ত তির মেরে ওরা যেন আমার মনটাকে ক্ষতবিক্ষত করতে বদ্ধপরিকর। নিজেকে শক্ত করলাম। কোনো দিকে দৃকপাত করলাম না। কোনো কথায় কর্ণপাত করলাম না। মনে পড়ল সেই চিরপরিচিত তিনটি বাঁদরের কথা। একজনের এক হাতে কান চাপা, অন্যজনের এক হাতে মুখ চাপা আর একটি বাঁদরের এক হাতে দু’চোখ বন্ধ করে রাখা। ভাবলাম তা না হলে উপায় নেই। কিছু শুনব না, কিছু বলব না, কিছু দেব না। আমি তাই আমার সমস্ত মন ঢেলে দিলাম সেই সহকারী পরিচালকের নির্দেশ বুঝে নেবার তাগিদে। বার বার অবচেতন মনে আমার দু’চোখের দুটো মণি এদিকে ওদিকে গিয়ে পড়তে লাগল তবুও। দেখলাম দীপকবাবুকে।
দীপক মুখার্জি ছিলেন এ-ছবির নায়ক। দেখছিলাম প্রভাদেবীকেও।
তখন সিনেমা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দেখার আমার যে একটা আগ্রহ ছিল এ কথা স্বীকার করে রাখাই ভালো। বিশেষ করে প্রভাদেবীকে আমি দেখছিলাম সেদিন। সেদিন প্রভাদেবী একটি উজ্জ্বল নামই বটে। এই ছবির সহকারী পরিচালক প্রভাদেবীকেও দৃশ্যটা বুঝিয়ে দিলেন। যথাসময়ে প্রয়োজনমতো আলো জ্বলল।
আমি অভিনয় করতে শুরু করলাম। ফাইন্যাল টেকিং-এর আগে মনিটারের জন্য প্রস্তুত হয়েছি। স্টেথোসকোপ প্রভাদেবীর বুকে ঠেকেছে কী ঠেকেনি এমন সময় তিনি তার স্বভাবসিদ্ধ স্বরে বললেন, বলি এ ছেলে অভিনয় করবে কী, এর তো এখন থেকেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে! এ তো ভয়ে কাঁপছে!
প্রভাদেবীর এই ঠাট্টায় আমার দুটো কান বোধহয় লাল হয়ে গিয়েছিল লজ্জায়। আমার ভেতরকার মানুষটা ভীষণ আহত হয়েছিল। তবুও মাথা নিচু করে আমি সেই সব কটাক্ষ উক্তি হজম করেছিলাম। তা ছাড়া তখন আমার অন্য কোনো পথ ছিল না। মনে করলাম এটা তো আমার কর্মস্থল। এখানে আমি কাজ করতে এসেছি, সুতরাং আমার সব ভাবনা কাজ নিয়েই হওয়া উচিত। সেন্টিমেন্ট বলে যে বস্তু আছে তা মন থেকে মুছে ফেলা দরকার, তা না হলে কাজ দেখা যাবে কী করে!
নানা অপমানের ক্ষত ভিতরে চিপে রেখেই আমি নিজেকে সহজ করবার চেষ্টা করলাম।
তবে সত্যি কথা বলতে কি প্রভাদেবীর এই উক্তির পর আমি বেশ খানিকটা দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। কারণ ছেলেবেলায় দেখা প্রভাদেবীর সেই অবিস্মরণীয় ‘সীতা’ তখনও আমার সারা মনে বেঁচে ছিল। আজও আছে। বার বার চেষ্টা করেও বেশ মনের মতো কাজ করতে পারলাম না। আমাকে দিয়ে আর সেদিন কাজ করালেন না রাজেনবাবু।
একরাশ ব্যথা নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম সেদিন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর