নারায়ণগঞ্জের বন্দরে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিত করার ঘটনার দুই বছর পর এবার এক মহিলা শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করেছেন জেলা জাতীয় পার্র্টির নেতা। রোববার রাতে শহরের হাজীগঞ্জ এলাকায় বাড়িতে ঢুকে ওই স্কুল শিক্ষিকাকে মারধর ও জুতাপেটা করে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে ওই নেতা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সোমবার দুপুরে আহত স্কুল শিক্ষিকার বাবা বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় অভিযুক্ত জেলা জাতীয় পার্র্টির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খোন্দকার ও তার স্ত্রী রোকেয়া খোন্দকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। বিকালে ওই জাপা নেতাকে আটক করে পুলিশ।
শিক্ষিকার অপরাধ ছিল, ওই আইনজীবীর নাতিকে বাড়িতে গিয়ে পড়াতে রাজি হননি তিনি। ঘটনার পর আহত অবস্থায় ওই শিক্ষিকাকে নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর এলাকায় ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পর্যবেক্ষণ-২ কক্ষে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়।
আহত শিক্ষিকা শহরের হাজীগঞ্জ এলাকার প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষিকা শাহীনূর পারভীন শানু।
লাঞ্ছিত শিক্ষিকা শাহীনূর পারভীন শানুর অভিযোগ, একই এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী বাসিন্দা জাতীয় পার্টির নেতা ও আইনজীবী আবদুল মজিদ খন্দকার রোববার রাত দশটার দিকে তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তার বাসায় এসে তাদের নাতিকে বাসায় গিয়ে পড়ানোর প্রস্তাব দেন।
দীর্ঘ ছয় মাস যাবত কিডনিজনিত রোগে অসুস্থতার কারণে তাদের এ প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দেন। আর এ অপরাধে ওই আইনজীবী ও তার স্ত্রী প্রথমে তাকে মোখিকভাবে হুমকি দেন এবং এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে নাবালক ছেলেমেয়ে ও স্বজনদের সামনেই তাকে মারধর করতে থাকেন। পায়ের জুতা খুলে তাকে জুতাপেটাও করেন।
লাঞ্ছিত শাহীনূরের মা রাবেয়া ইসলাম জানান, তার মেয়ে শাহীনূর পারভীন শানু দীর্ঘ ৬ মাস ধরে কিডনিজনিত রোগে ভুগছে। এ কারণে প্রাইভেট পড়ানো ছেড়ে দিয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী আইনজীবী আবদুল মজিদ খন্দকার ও তার স্ত্রী সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বাড়িতে ঢুকে আমার মেয়েকে ছেলেমেয়ের সামনে কিল ঘুষি মেরেছে এবং জুতাপেটা করেছে। একজন আইনজীবী হয়ে তিনি বেআইনি ও জঘন্য কাজ করেছেন।
শাহীনুরের বাবা সাইফুল ইসলাম জানান, আবদুল মজিদ খোন্দকার একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও আইনজীবী। আমি প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের কাছে আইনগত সহায়তা চাই যেন অভিযুক্ত আইনজীবী ও তার স্ত্রীর সুষ্ঠু বিচার হয়।
একজন আইনজীবী হয়ে এভাবে শিক্ষিকাকে বাড়িতে গিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন এলাকাবাসীও।
এ বিষয়ে আইনজীবী আব্দুল মজিদ খোন্দকার বলেন, আমরা তাকে আমাদের নাতিকে বাসায় এসে পড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু সে মুখের উপর না করে দিয়েছে। সে আমার স্ত্রীকে অশালীন কথা বলেছে। বুড়ি-টুড়ি বলেছে। এ নিয়ে আমার স্ত্রীর সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়েছে। এই টুকুই। মারধরের কোন ঘটনা ঘটেনি।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি কামাল উদ্দিন জানান, সোমবার দুপুরে শাহীনূর পারভীনের বাবা সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে আবদুল মজিদ খন্দকার ও তার স্ত্রী রোকেয়া খন্দকারকে আসামি করে মামলা করেছেন। পুলিশ এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিবে।