× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ভালোবাসার গল্প /সুখে থাকুক শুকুর আলীরা

রকমারি

ফররুখ মাহমুদ
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বুধবার
নাসির উদ্দিন

শুকুর মিয়া। বয়স ৫০ ছুঁইছুঁই। গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে টানাপোড়েনের সংসার। স্ত্রী ফাতেমা মানসিক ভারসাম্যহীন। একসময়ের বর্গাচাষী শুকুর মিয়া সচ্ছল জীবনের আশায় পাড়ি জমান জাদুর শহর ঢাকায়। ওঠেন তেজগাঁওয়ের একটি বস্তিতে। গ্রামে থাকতে শুনেছেন ঢাকা শহরের বাতাসে টাকা ওড়ে।
কিন্তু অনেক চেষ্টাতেও সেই টাকা শুকুর আলীর কাছে আজও ধরা দেয়নি। শুকুর আলীর সংসার চালান বিভিন্ন পার্কে প্লাস্টিক, লোহা-লক্কড় কুড়িয়ে। মাঝে মাঝে কাঠ বাদাম কুড়িয়ে বিক্রিও করেন। সেই টাকায় এক বেলা বা আধা বেলা খেয়ে চলে চারজনের সংসার। স্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় দুই সন্তানকে সঙ্গে রাখেন তিনি। প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার সকালে বাসা থেকে দুই সন্তান রেহানা ও জীবনকে নিয়ে বের হন শুকুর আলী। ঘুরতে ঘুরতে দুপুরে শাহবাগ মোড় আসেন। ফুটপাতে এলিয়ে দেন ক্লান্ত শরীর। পাশে বিক্রি হচ্ছে খিচুড়ি। রেহানা ও জীবনের ক্ষুধার্ত মন বারবার সেই খিচুড়ির দিকে চলে যাচ্ছে। বাবা শুকুর আলী বুঝতে পেরে মাংস ছাড়া ২০ টাকা দিয়ে এক প্লেট খিচুড়ি কেনেন। পরম আদরে খাইয়ে দিতে থাকেন সন্তানদের। বাদ সাধে ছোট্ট জীবন। এক লোকমা খেয়েই মুখ ঘুরিয়ে নেয় সে। বায়না ধরে মাংস দিয়ে খাবে। শুকুর আলী নিরুপায়। মাংস দিয়ে খিচুড়ি খেলে লাগবে ৫০ টাকা। তার পকেটে সেই টাকা নেই। নিজের অক্ষমতা সন্তানকে বোঝাতে শুরু করেন। কিন্তু জীবনও নাছোড়বান্দা। তাদের এই মান অভিমানের দৃশ্য ধরা পড়ে এক পথচারীর চোখে। এগিয়ে আসেন তিনি। খিচুড়ি বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করেন কি সমস্যা। বিক্রেতা জানালেন, মাংস না দেয়ায় বাচ্চাটা খিচুড়ি খাচ্ছে না। তার বাবার মাংস দিয়ে খিচুড়ি কিনে দেয়ার সামর্থ্য নাই। পথচারীর মাংসসহ এক প্লেট খিচুড়ি কিনে তুলে দেন শুকুর আলীর হাতে। কৃতজ্ঞতায় ছলছল করে ওঠে তার চোখ। মুখে হাসি ফুটে ওঠে। খিচুড়ির প্লেটে মাংস দেখে হৈহৈ করে ওঠে জীবন। শুকুর আলী জীবনের এমন উচ্ছ্বাসে মুখ ঘুরিয়ে মাংসসহ খিচুড়ির লোকমা তুলে ধরেন তার দিকে। পাশ থেকে মুখ বাড়িয়ে দেয় রেহানাও। বাচ্চাদের এমন হৈহৈ রব আর শুকুর আলীর হাসি মুখ দেখে গন্তব্যের দিকে পা বাড়ান পথচারী। ভাবেন সুখে থাকুক শুকুর আলীরা। বেঁচে থাকুক ভালোবাসা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর