সবার অংশগ্রহণে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে ‘স্বাধীন ও বিশ্বস্ত’ নির্বাচন কমিশন দেখতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সফররত ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি দল গতকাল বুধবার বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সঙ্গে বৈঠকে এমনটাই জানিয়েছে। নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত প্রায় ৪৫ মিনিটের ওই বৈঠকে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন ব্যবস্থার খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা হয়। আট সদস্যের ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ইইউ পার্লামেন্টের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক কমিটির সদস্য জ্যঁ ল্যামবার্ট। সিইসি ছাড়াও বৈঠকে কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে জ্যঁ ল্যামবার্ট সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় ইইউ। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, স্বাধীন ও বিশ্বস্ত নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এটা আগামী নির্বাচনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ যেন সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোটার তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। এই লক্ষ্যে যেন সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ইইউ অবগত কিনা এবং এই পরিস্থিতিতে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন সম্ভব কিনা- এমন প্রশ্নে জ্যঁ ল্যামবার্ট খোলাসা করে কিছু বলেননি। পুরো বিষয়টি আদালতের বিবেচ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, মামলার বিষয়টি আদালত নিষ্পত্তি করবে। পরে নির্বাচন কমিশনে আসলে সেটা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত। তবে কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত একান্ত ওই দলের। বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। সচিব জানান, সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়নি। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও কোনো আলোচনা হয়নি। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, তারা সুনির্দিষ্ট কোনো ফোকাসের মধ্যে নেই। তারা কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছেন। কোনো পরামর্শ দেননি। ইইউ বলেছে, নির্বাচন কমিশন সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে- সেটাই তারা প্রত্যাশা করেছে। নির্বাচন কমিশনকে ‘স্বাধীন ও বিশ্বস্ত’ ভূমিকায় আনতে ইইউ কোনো সুপারিশ বা পরামর্শ দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইসি’র ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, এরকম কোনো প্রস্তাব দিয়েছেন কিনা আমাদের জানা নাই। আমরা বলেছি যে, সংবিধান ও আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদার জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণের আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রীর বিষয় নিয়ে একজন জিজ্ঞেস করেছেন। সিইসি বলেছেন, সেটি আদালতের বিষয়। আদালত যদি অনুমতি দেয় এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার থাকে না। অনুমতি না দিলে সেখানেও নির্বাচন কমিশনের কোনো ভূমিকা নেই। বৈঠকে বাংলাদেশের সংবিধান এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে ইইউ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানতে চেয়েছেন। সিইসি বলেছেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট একক প্রার্থী হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। এমপিদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে থাকে। আর সংসদীয় নির্বাচন প্রতি ৫ বছর পরপর হয়ে থাকে। আগামী ডিসেম্বরে যে সংসদ নির্বাচন হবে সেখানে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। নির্বাচনীয় ব্যয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। সিইসি জানিয়েছেন, সরকারের তরফ থেকে এই অর্থ বহন করা হয়ে থাকে। নির্বাচন কমিশন থেকে যে পরিমাণ বরাদ্দ চাওয়া হয় সেই পরিমাণ সরকার দিয়ে থাকে। আমাদের বিভিন্ন প্রার্থীদের ডোনেশন দেয়া হয় এবং তারা অতিরিক্ত ব্যয় করে থাকেন সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। যদি কেউ অভিযোগ করে থাকে এবং ইসি জানতে পারে সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেয়া হয়। বৈঠকে প্রবাসী ভোটার নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানান ইসি’র ভারপ্রাপ্ত সচিব। তিনি বলেন, প্রবাসে যারা বসবাস করে তাদের কিভাবে ভোটার করা যায় তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ভোটার তালিকা কিভাবে তৈরি করা হয় সে বিষয়টিও ইইউ প্রতিনিধি দলকে অবগত করা হয়েছে। আমরা জানিয়েছি, আমাদের ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা আছে এবং জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে মূলত ভোটাররা ভোট দিয়ে থাকে।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি দল আশা প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশে নির্বাচনের আগের দিনগুলোতে ‘সংঘাত ও জিম্মিদশা’ কমে আসবে। সেই সঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে সরকারের প্রতি তাগিদ দিয়েছে প্রতিনিধি দল। সংবাদ সম্মেলনে ইইউ পার্লামেন্টারি সদস্য জ্যাঁ ল্যামবার্ট বলেন, বাংলাদেশের জনগণ যেন ব্যালটবাক্সে তাদের প্রকৃত মতের প্রতিফলন ঘটাতে পারে সে ব্যাপারে সকল রাজনৈতিক দল স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।