× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মাটি দিয়ে বানানো হয় কিশোরগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনার

বাংলারজমিন

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার

২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পুলিশের গুলিতে রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারদের শহীদ হওয়ার খবর পরদিন বিকালে পত্রিকা মারফত কিশোরগঞ্জে এসে পৌঁছে। তাৎক্ষণিক কিশোরগঞ্জের ভাষা সৈনিকদের নেতৃত্বে গুরুদয়াল কলেজ হোস্টেল চত্বরে কালো পতাকা উত্তোলন করে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক মসজিদ ও মন্দিরে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আবেদনপত্র প্রেরণ ও মাইকযোগে ঘোষণা করা হয়। ২৩শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় শোক মিছিল। শোক মিছিলে ন্যাশনাল গার্ড নামধারী চার তারা টুপি পরিহিত লাঠিয়াল বাহিনীর হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হন। ২৫শে ফেব্রুয়ারি শহীদদিবস ঘোষণা করে নগ্নপায়ে প্রভাতফেরি করে বিকাল ৩টায় রথখলার মাঠে মাটি দিয়ে শহীদমিনার তৈরি করে তাতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সমাবেশে ভাষা আন্দোলনের উপর কবিতা ও গান রচনা করে জনতাকে উদ্বুদ্ধ করেন পুলেরঘাট এলাকার শামসুল ইসলাম হায়দার। রথখলার মাঠে মাটি দিয়ে তৈরি করা শহীদমিনারই কিশোরগঞ্জের প্রথম শহীদমিনার।
ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ফেব্রুয়ারি ও মার্চে প্রায় প্রতিদিনই শত শত ছাত্রের মিছিল ও সমাবেশ চলতো।
এ অবস্থায় আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী গঙ্গেশ সরকার, আবু তাহের খান পাঠান, আশরাফউদ্দিন মাস্টার, মিছিরউদ্দীন আহমেদসহ আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে হুলিয়া ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে আন্দোলনের একপর্যায়ে তারাসহ আরো বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হন। তাদের গ্রেপ্তারের পর আন্দোলনের মাত্রা আরো তীব্র হয়। কারাগারে বন্দি অবস্থায় রাজবন্দিরা ইট দিয়ে অস্থায়ীভাবে শহীদমিনার তৈরি করে সেখানেও ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। অন্যদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে যারা ভাষা আন্দোলনে অসাধারণ অবদান রেখেছেন, কিশোরগঞ্জের ডা. এ এ মাজহারুল হক তাদের অন্যতম। ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন ছাত্র হিসেবে ডা. এ এ মাজহারুল হক মাতৃভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ২২শে ফেব্রুয়ারি রাতে ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছাত্রদের নির্মিত প্রথম ইটের শহীদমিনার তৈরিতে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া ১৯৫২’র সেই ভাষা আন্দোলন ঢাকা কেন্দ্রিক হলেও মহকুমা শহর কিশোরগঞ্জেও এখানকার সংগ্রামী জনতা আন্দোলনে শরীক হয়েছিলেন যোগ্য সহযোদ্ধা হিসেবে। তৎকালীন মুসলিম লীগ ও প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন কিশোরগঞ্জের সচেতন বীর ছাত্র-জনতা। ১৯৬৩ সালে কিশোরগঞ্জ শহরে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ২১শে ফেব্রুয়ারি উদযাপিত হয়। সে বছরই আবু তাহের খান পাঠানের নেতৃত্বে বের করা হয় প্রভাতফেরি। প্রভাতফেরিতে বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী নারায়ণ সরকারের লেখা ও অশ্বিনী রায়ের সুর করা কয়েকটি সংগীত পরিবেশিত হয়। সেদিন সুরের মুর্ছনায় শহরে একটি শোকবিহ্বল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। প্রভাতফেরিটি কিশোরগঞ্জ স্টেডিয়ামে নির্মিত একটি প্রতীকী শহীদমিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল। সেখানে সমবেত হয়েছিল হাজার হাজার লোক। সেই থেকে কিশোরগঞ্জে প্রভাতফেরির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। কিশোরগঞ্জ শহরে প্রথম শহীদমিনার নির্মিত হয় গুরুদয়াল কলেজ মাঠে ১৯৬৬ সালে। এই শহীদমিনার নির্মাণের জন্য সেসময় গুরুদয়াল কলেজের ফান্ড থেকে মোট ৭শ’ টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মো. ওয়াসিমুদ্দিন। শহীদমিনার নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তৎকালীন ছাত্র সংসদের ভিপি এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো. আবদুল হামিদ। সেই শহীদমিনারে সাদা মার্বেল পাথরে খোদাই করে একটি কবিতাও উৎকীর্ণ করা হয়েছিল। সেই কবিতাটি ঢাকার আবদুর রউফ নামক জনৈক ছাত্রনেতার লেখা। মো. আবদুল হামিদ শ্বেতপাথরে খোদাই করে নবনির্মিত শহীদমিনারে সেই কবিতাটি স্থাপন করেছিলেন। ৭১’র সালে পাক বাহিনী সেই শহীদমিনারটি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। স্বাধীনতার পর ছাত্র সংসদের ভিপি নূরুল ইসলাম নূরুর নেতৃত্বে শহীদমিনারটি পুনঃনির্মিত হয়। সেই থেকে প্রতিবছর ২১শের প্রথম প্রহর থেকে জনতার ঢল নামে। নগ্নপায়ে প্রভাতফেরি আর শহীদমিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় স্মরণ করেন শহীদ ভাষা সৈনিকদের।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর