২০১৪ সালে জাতীয় দলে অভিষেক। ভালোই চলছিল আরাফাত সানির। ঘরোয়া ক্রিকেটের সফলতা তার জন্য খুলে দিয়েছিল জাতীয় দলের দরজা। শুরুটা টি- টোয়েন্টি দিয়ে। এরপর ওয়ানডে দলেও অভিষেক হয়। অপেক্ষা ছিল টেস্টে অভিষেকেরও। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন সব এলোমেলো হয়ে যায় এ স্পিনারের ক্রিকেট ও ব্যক্তিগত জীবন। শুরুটা ২০১৬ ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।
অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের জন্য নিষিদ্ধ হন আরাফাত। তবে অ্যাকশন শুধরে পরীক্ষা দিয়ে আইসিসির ছাড়পত্রও পান। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ধাক্কা সামলে অপেক্ষা ছিল মাঠে ফেরার। কিন্তু গেল বছরের শুরুতে বড় আঘাত আসে ব্যক্তিগত জীবনেও। তথ্য-প্রযুক্তি আইনে বান্ধবীর করা অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার হন তিনি। পরে সেই বান্ধবী নিজেকে সানির স্ত্রীও দাবি করেন। যদিও দীর্ঘদিন যাবত নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে আসছিলেন এ ক্রিকেটার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জানা গেল একটি নয়, দুটি বিয়ে করেছেন তিনি। এ মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে। তবে ঘরের ক্রিকেটে খেলে যাচ্ছেন তিনি। এ বছর প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে খেলছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে।
আরাফাত সানি নিজেও মানেন জাতীয় দলে ফেরা এখন অনেকটাই অনিশ্চিত। তবে হাল ছাড়েননি, মানবজিমনকে বলেন, ‘প্রতিটি মানুষের জীবনেই উত্থান-পতন থাকে। আমার দুটি সমস্যা। একটি হলো বোলিং অ্যাকশন যার জন্য আমি জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছিলাম। এখন সেই সমস্যা নেই। আরেকটি হলো ব্যক্তিগত জীবন। তবে আমি মনে করি না এটি আমার বাদ পড়ার কারণ। হ্যাঁ কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে সব মানুুষেরই ভুল হয়। কিন্তু ভুল শুধরে সামনে চলার নামই জীবন।’
জাতীয় দলের হয়ে ১৬ ওয়ানডে ও ১০ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন সানি। ২৫ বছর বয়সে অভিষেক হওয়ার পর কেটে গেছে আরো ৪টি বছর। এখন বয়স প্রায় ৩০ ছুঁই ছুঁই। তাই যত বয়স বাড়ছে সেই সঙ্গে ফেরার সম্ভাবনাও কমছে। আর তরুণ স্পিনাররাও এসে জায়গা দখল করে নিচ্ছে। এ চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফেরা কতটা সম্ভব? আশাবাদী সানি বলেন, ‘প্রথমত আমি মনে করি ক্রিকেটে কারো জায়গা স্থায়ী নয়। এখানে যে কেউ জায়গা হারাতে পারে আবার পারফরম্যান্স দিয়ে ফিরতেও পারে। আর এখন ক্রিকেটে বয়সের চেয়ে পারফরম্যান্সটাই বেশি বিবেচনাতে আনা হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশে এটি কম, তারপরও আমি মনে করি পারফরম্যান্সটাই আসল।’
এমন অনুপ্রেরণা কার কাছ থেকে পাচ্ছেন? তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বয়সটা খুব বড় বিষয়। কিন্তু যখন দেখলাম রাজ্জাক ভাই ফিরেছে তখন ভেবেছি আমি কেন পারবো না! আমি যদি তার মতো ঘরের ক্রিকেটে পারফরমম্যান্স করে যেতে পারি তাহলে হয়তো নির্বাচকরা আমাকে একদিন সুযোগ দিতে পারেন।’
আবদুর রাজ্জাক জাতীয় দলে ফিরেছেন ৩৫ বছর বয়সে। কিন্তু তার জন্য তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করেছেন। তেমনি ফিটনেসটাও ধরে রেখেছেন দারুণভাবে। তবে সানি কতটা ফিটনেস ধরে রাখতে পারছেন? তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি পারবো। আর আমার বোলিং নিয়ে যে সমস্যা ছিল সেটি এখন নেই। নতুন অ্যাকশনে ভালো হচ্ছে। যদিও এবার দোলেশ্বরের হয়ে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচে ৪ উইকেট পেয়েছি। রাজ ভাইয়ের মতো ভালো বল করার পাশাপাশি নিজের ফিটনেসটা নিয়ে কাজ করে যাব।’
ক্রিকেট ক্যারিয়ারে পরিশ্রম দিয়ে সব ভুল শুধরাতে প্রস্তুত সানি। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে যে দাগ লেগেছে সেটি সারাবেন কিভাবে? বললেন, ‘আসলে আমি ক্রিকেট দিয়েই সব কিছু ভুলতে চাই। ব্যক্তিগত জীবনে কী হয়েছে তা নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চাই না। আল্লাহ হয়তো ভালো কিছুই লিখে রেখেছেন তা বিশ্বাস করি।