× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

উত্তম কুমারের অজানা কথা (৩২) /‘আমার চিত্ত দুর্বল হচ্ছে মাঝে মাঝে’

বই থেকে নেয়া


২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়ক উত্তম কুমার অনন্য অভিনয় জাদুতে মুগ্ধতা বিলিয়েছেন দুর্নিবার। তার অভিনীত ছবি মানেই ভালোলাগার এক বিশাল প্রাপ্তি। পর্দায় এ নায়ক যেমন উজ্জ্বল তেমনই তার ব্যক্তিজীবনের চলাচলেও ছিল নানান রঙের মিশেল। সেই অজানা জীবনের গল্প তার বয়ান থেকে অনুলিখন করেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক-সাহিত্যিক গৌরাঙ্গপ্রসাদ ঘোষ যা পরবর্তী সময়ে ‘আমার আমি’ নামে বই আকারে প্রকাশ হয়। সে বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে উত্তম কুমারের আত্মজীবনী-

১৯৫২ সাল তখনও শেষ হয়নি। এই ‘সঞ্জীবনী’ ছবির কাজ তখন চলছে। বেশ খুশি-খুশি মন নিয়েই আমি আমার কাজ শেষ করে চলেছি!
এই সময় নির্মলবাবু থাকতেন শান্তিনিকেতনে।
সিনেমা শিল্পের সঙ্গে যার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, পরিচালক হিসেবে যিনি অনেকগুলি ছবিই তৈরি করেছিলেন সেই নির্মল দে অনেক পরিশ্রম আর সাধনা করেও যখন হেরে গেলেন, তখন সিনেমা শিল্পের ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে তিনি চলে গিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনে। ওখানে গিয়ে যখন তিনি বসবাস করছেন, যখন তিনি মোটামুটি মানসিক ভাবে সুস্থ, ঠিক তখনই একটা ঘটনা অপ্রত্যাশিতভাবে  ঘটে গিয়েছিল।
নির্মলবাবু ঠিক অতটা আশা করেননি।
আশা করেননি যে মুরলীধরবাবু তাকে তলব দেবেন।
এমপি প্রোডাকশন্সের তখন দারুণ প্রতাপ। খুবই খ্যাতি। সেই এমপি থেকে ডাক পেয়ে নির্মলবাবু কিন্তু বেশি উচ্ছ্বসিত হলেন না। নিতান্ত অনিচ্ছাভরেই তিনি একসময়ে এলেন মুরলীধর চ্যাটার্জির কাছে। মুরলীবাবু তাকে সসম্মানে বসিয়ে একটা গল্প শোনালেন। একটা জাপানি ছোটগল্প।
নির্মলবাবু গভীর মনোযোগ দিয়ে গল্পটি শুনলেন।
গল্প শুনিয়ে মুরলীধরবাবু বললেন, ধরুন এই গল্পটা, এটাকে ডেভেলপ করে একটা সিনারিও করে ফেলুন, যতটা সম্ভব একটু তাড়াতাড়ি করবেন।
মুরলীধর চ্যাটার্জি যা কথা দেন তা রাখেন। সুতরাং এই কথা শোনার পর নির্মলবাবুর সব ব্যাপারটা বুঝে নিতে দেরি হলো না। উত্তরে তিনি বললেন, আমি দিন দশেকের মধ্যে সিনারিও কমপ্লিট করে শোনাব।
কথাটা শেস করে নির্মলবাবু চলে এলেন। চলে এলেন ভবানীপুরে।
ভবানীপুরে ইন্দুভূষণ দাসের একটা দোকান ছিল। সেই দোকানের উপরে ছিল একটা মেস। নির্মলবাবু সরাসরি চলে এলেন সেই মেসে। তারপর থেকে শুরু হয়ে গেল চিত্রনাট্য রচনা।
যথাসময়ে চিত্রনাট্য শেষ হলো। ঠিক দশদিন পর নির্মলবাবু চিত্রনাট্যের ফাইল নিয়ে হাজির হলেন এমপি স্টুডিওতে। মুরলীধরবাবুর কাছে।
মুরলীধরবাবু চিত্রনাট্য শুনলেন। খুশি হলেন বেশি। সঙ্গে সঙ্গে চিত্রনাট্যের রূপায়ণ প্রস্তুত। বললেন, নির্মলবাবু, এবার ছবি শুরু করুন- তার আগে কাস্টিং ঠিক করে নিনÑ
সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেছিলেন, একটা কথা, আমাদের স্টুডিওতে উত্তমকুমার মাইনে করা আর্টিস্ট, তাকে আপনি দেখতে পারেন, তবে আমি এ ব্যাপারে আপনাকে ইনসিস্ট করবো না, আপনি ইচ্ছে করলে বাইরে থেকেও কাউকে নিতে পারেন।
খাটি প্রযোজকের মতো উক্তি। একজন খাঁটি প্রোডিউসার হিসাবে তিনি সেদিন বিন্দুমাত্র মিথ্যে বলেননি।
এসব কথা যখন শুনি তখন ‘সঞ্জীবনী’ ছবির কাজ প্রায় সমাপ্ত।
কথাগুলো শুনেছিলাম ‘বসু পরিবার’ ছবিতে সুযোগ পাবার পর। থাক সে কথা।
নির্মলবাবু কাজে নেমে পড়লেন।
এবার চিত্রনাট্যকে আরও খানিকটা ঝালাই করে নেওয়া দরকার। সুতরাং সে ব্যাপারে নির্মলবাবুকে সাহায্য করতে এলেন কবি শৈলেন রায়। শুরু হলো সংলাপ রচনা। কবি শৈলেন রায় আন্তরিক সাহায্য করলেন নির্মলবাবুকে।
সংলাপ রচনা শেষ হলো। ওদিকে চিত্রনাট্য ঝালাইয়ের কাজও সমাপ্ত। সবাই আসর বসালেন। আসরে এলেন মুরলীধর চ্যাটার্জি, মিল ঘোষ আর স্বয়ং পরিচালক নির্মল দে।
আবার চিত্রনাট্য পড়া হলো। রীতিমতো আলোচনা হলো। আলোচনায় শেষ পর্যন্ত নায়ক নির্বাচিত হলেন অভি ভট্টাচার্য।
একটা বিকল্প হিসাব অবশ্য ধরা হলো। যদি অভি ভট্টাচার্যকে না পাওয়া যায় তাহলে নায়ক হিসাবে আহ্বান জানানো হবে অসিতবরণকে। আমি নেপথ্যে বসে সব খবরই রাখছি।
অভি ভট্টাচার্য তখন বোম্বাইয়ে। আমার চিত্ত দুর্বল হচ্ছে মাঝে মাঝে। আমি মনেপ্রাণে কামনা করে চলেছি ওঁরা যেন একবার আমার কথা দয়া করে ভাবেন। আমার অবস্থায় থাকলে তখন এমন কামনা অনেকেই করতেন নিশ্চয়ই। কিন্তু হায় রে ভাগ্য! ওদের দৃষ্টি কিছুতেই আমার দিকে পড়তে চায় না। আগেই বলেছি, মুরলীবাবুর যে কথা সেই কাজ।
অভি ভট্টাচার্যের কাছে জরুরি টেলিগ্রাম করা হলো বোম্বাইয়েরই ঠিকানায়। হাতে মাত্র কটা দিন। কটা দিনের মধ্যেই টেলিগ্রাম ফিরে এল। বোঝা গেল নির্দিষ্ট ঠিকানায় শিল্পী নেই।
যথাসময়ে নির্মলবাবুরা হাজির হলেন অসিতবরণের কাছে।
আমি তখন প্রহর গুনছি। একটা চাপা অস্থিরতা আমার ভিতরে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর