× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মৌলভীবাজার বিএনপির বিভেদের অবসান!

দেশ বিদেশ

ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার

ভুল বোঝাবুঝি থেকে বিভেদ-বিভক্তি। ছিল মান-অভিমানও। আর এ কারণে কেউ কাউকে ছাড় দিতে চাননি এক চুলও। এভাবেই চলছিল মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির গত ৭-৮ বছর। কিন্তু দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাস সব পাল্টে দিয়েছে। বিভেদ ভুলে জেলার নেতারা এখন একাট্টা। কেন্দ্রের নির্দেশনা মতে তারা রাজপথে। লক্ষ্য নেত্রীর আশু মুক্তির শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গড়ে তোলা।
কর্মীরাও সক্রিয়। মামলা-হামলা ঝুঁকি মেনে নিয়েই তারা মাঠে অভিন্ন অবস্থানে। বিরোধী নেতাকর্মীদের ভাষ্য মতে, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট একটুও বদলায়নি। নিয়মিত বিরতিতে তাদের ওপর চলছে মামলা-হামলা ও নির্যাতনের খড়গ। এমনকি তারা ঘরেও ঘুমাতে পারছেন না। কিন্তু তারপরও সুযোগ পেলেই তারা ঝটিকা মিছিল ও সমাবেশ করছেন। সম্প্রতি জেলা শহরে এমন অনেক মিছিল চোখে পড়ে। যার বেশির ভাগই ছিল কেন্দ্রীয় ঘোষণার অংশ। চেয়ারপারসনের মুক্তির আন্দোলনে নেতাদের বিভেদের অবসান এবং আচমকা সক্রিয়তায় কেবল দলের কর্মীই নয়, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরাও উজ্জীবিত। বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নিজেদের বদলে ফেলার প্রত্যয়ে কৌতূহলী জেলার সর্বমহল। বলতে গেলে জেলা বিএনপির চেনা দৃশ্যে এখন অনেকটাই পরিবর্তন। তবে জেলার শীর্ষ নেতাদের গ্রুপিং-দ্বন্দ্বে এতদিন যারা সুবিধা নিয়েছেন তাদের একটি অংশ এখনও নাখোশ। অবশ্য সেই সংখ্যা হাতেগোনা। তারা চাইছেন না জেলা কমিটি নিয়ে গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব পুরোপুরি মিটে যাক! তাদের ভাষ্য মতে, জেলা বিএনপি তিন ভাগে বিভক্ত। তবে সেই বিভক্তি আগের মতো অতটা বাধা হচ্ছে না। বরং তিন নেতার নেতৃত্বে তাদের অনুসারীরা পৃথক ভাবে পালন করছেন কেন্দ্রীয় কর্মসূচি। চলমান কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে নামে বে-নামে পুলিশি মামলা আর হামলার ভয় থাকলেও তারা ছাড়ছেন না রাজপথ। এমন দৃশ্য কয়েক মাস আগেও দেখা যায়নি জেলায়। অন্য একটি সূত্রের দাবি- কারাবাস নয়, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সিলেট সফরের সময় থেকেই মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির পরিবর্তনের সূচনা। এরপর থেকে ধীরে ধীরে এটি আরও ইতিবাচক হয়েছে। এখন নেতাদের বিরোধ বা বিভেদের বিষয়টি ভেতরে ভেতরে থাকতে পারে, তবে এর দৃশ্যমান কোন চিহ্ন নেই। বরং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার সাজার রায় ঘোষণার দিন দুপুর থেকেই জেলা বিএনপি রাজপথে সোচ্চার। তাদের সঙ্গে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও। কেবল জেলা শহর নয়, ইতিবাচক এ পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে উপজেলায়ও। নেতাকর্মীদের মুখে মুখে এখন একটাই স্লোগান, ‘দলের দুর্দিন, প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।’ সূত্র মতে, এতদিন ধরে (গত ৮ বছর ধরে) জেলা বিএনপির একটি বলয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন জেলা সভাপতি ও সাবেক এমপি এম নাসের রহমান। অপর দুটি অংশের নেতৃত্বে নব নিযুক্ত সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ভিপি মিজানুর রহমান মিজান এবং সদ্য সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ফয়জুল করিম ময়ূন। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৭ সালের ২৫শে মে জেলা বিএনপির নতুন কমিটি আসে। সেখানে মহাসচিব স্বাক্ষরিত প্যাডে ৪৮ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে বিবদমান গ্রুপিং লবিংয়ের বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতেই সমন্বিত কমিটির ঘোষণা হয়। কিন্তু নতুন কমিটি ঘোষণার পর পুরনো দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যায়। গোপন দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়। এটি এমন অবস্থায় পৌছায় যে অভিমানে দলীয় সকল কার্যক্রম থেকে নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নেন সাবেক জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দু’বারের পৌর মেয়র (সাবেক) ফয়জুল করিম ময়ূন। কিন্তু বেগম জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তিনি ফের রাজপথে সক্রিয় হন। দলে বিভেদ বিরোধী এক নেতা মানবজমিনকে সমপ্রতি বলেন, জেলা কমিটির অধিকাংশ নেতা দ্বন্দ্ব নিরসনের পক্ষে অনেক দিন ধরেই বিরোধ নিষ্পত্তিতে কাজ করছেন। শুনেছি এটি অনেক দূর এগিয়েছে। খুব শিগগিরই সবাই একমঞ্চে বসবেন। একসঙ্গে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি রাজপথে পালন করবেন। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন মানবজমিনকে বলেন, জেলা কমিটি নিয়ে অনেকের মতো আমারও অভিমান ছিল। তবে দলের একজন নিবেদিত কর্মী কখনো দুর্দিনে ঘরে বসে থাকতে পারে না। দলের চেয়ারপারসন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় জেল খাটবেন। আর তার প্রতিবাদে মাঠে আন্দোলন না করে ঘরে বসে থাকি কী করে। তিনি জেলা বিএনপির আগামীর পথ চলায় বিভেদ-বিভক্তি দূরে রাখতে কেন্দ্রীয় কমিটির হস্তক্ষেপ এবং মনিটরিং কামনা করেন। একই সঙ্গে তিনি কমিটিতে দলের নিবেদিতদের অন্তর্ভুক্তির জোর দাবি জানান। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান অবশ্য বলেন, আগে যাই থাকুক, কমিটি ঘোষণার পর থেকে দ্বন্দ্ব নিরসনেই ছিল তার সমুদয় প্রচেষ্টা। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে, আগামীতেও থাকবে। ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে কিন্তু আগামীর পথ চলায় দলে দ্বন্দ্ব থাকবে না এমন আশা করে মিজান বলেন, রাজনীতির দুর্দিনে আজ সকলের ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বকশী মিনবাহুর রহমান মনে করেন বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম আগের চাইতে এখন অনেকটাই শক্তিশালী। দলের চেয়ারপারসন কারাগারে, এই মুহূর্তে দলাদলির মুখ্য নয় এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, বড় দল তাই সবাই কাঙিক্ষত পদ-পদবি অনেক সময় পান না- এনিয়ে নেতাকর্মীদের মান অভিমান থাকাটা স্বাভাবিক, কিন্তু বিরোধ নয়। তার মতে, সাইফুর রহমান তনয় নাসের রহমান সভাপতি হিসাবে জেলার নেতাকর্মীদের মান-অভিমান দূর করে ঐক্যবদ্ধ জেলা বিএনপিই চাইছেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর