× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শুদ্ধি অভিযান একদিনে ৩০ কর্মকর্তাকে বদলি

দেশ বিদেশ

স্টাফ রিপোর্টার
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে বিভিন্ন দপ্তরে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল একযোগে প্রভাবশালী ৩০ জনকে বদলি করা হয়েছে। যাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, কেনাকাটায় সিন্ডিকেট, ফলাফল টেম্পারিংসহ নানা অভিযোগ ছিল। এরমধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর সাবেক এপিএস মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে রাজশাহীতে বদলি করা হয়েছে। বিতর্কিত এসব কর্মকর্তা দীর্ঘ ১০ বছর ধরে বিভিন্ন দপ্তরে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে শিক্ষা প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাদের কারণে ইমেজ সংকটে পড়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইমেজ উদ্ধারে বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে অচিরেই আরও বড় বদলি করা হচ্ছে। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভিযান শুরু করা সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন শিক্ষামন্ত্রীর সাবেক এপিএস ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সহকারি কলেজ পরিদর্শক মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈ, কলেজ পরিদর্শক ড. মো. আশফাকুস সালেহীন, বিদ্যালয় পরিদর্শক এটিএম মঈনুল হোসেন, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাসুদা বেগম, ফজলে এলাহী, অদ্বৈত কুমার, উপ-সচিব নাজমুল হক। বোর্ডের ইতিহাসে এক যোগে ছয় জন কর্মকর্তাকে ঢাকা বাইরে বদলি করা হলো।
গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয় পৃথক বদলি আদেশে ঢাকা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. মো. আশফাকুস সালেহীনকে যশোরের সরকারি এমএম কলেজে বদলি করা হয়েছে। তিনি ২০০৯ সাল থেকে প্রেষণে বোর্ডে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি মাউশি’র উপ-পরিচালক (কলেজ) পদে ছিলেন। বিভিন্ন কলেজে স্বীকৃতি, কমিটির অনুমোদনের নামে ঘুষ আদায় করার অভিযোগ ছিল। বিদ্যালয় পরিদর্শক এটিএম মঈনুল হোসেনকে খুলনা সরকারি মহিলা কলেজে বদলি করা হয়েছে। তিনি ২০১৩ সাল থেকে বোর্ডে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে মাউশি’র উপ-পরিচালক (কলেজ-১) পদে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে স্কুলের পাঠদান, স্বীকৃতি, কেন্দ্র দেয়ার নামে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ ছিল। উপ-সচিব (প্রশাসন ও সংস্থাপন) মোহাম্মদ নাজমুল হককে শরীয়তপুর সরকারি কলেজে বদলি করা হয়েছে। তিনি ২০০৯ সাল থেকে বোর্ডে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাসুদা বেগমকে বরিশালের বিএম কলেজে বদলি করা হয়েছে। তিনি ২০০৯ সাল থেকে বোর্ডে কর্মরত আছেন। এই কর্মকর্তা নিজের মেয়ের ফলাফল টেম্পারিং, পুরান ঢাকার একটি স্কুলে ম্যানেজিং কমিটিতে পদ বাগিয়ে নিয়ে কোটি টাকা বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ ছিল। তার বিরুদ্ধে মাউশি দু’টি তদন্ত করে এর প্রমাণ পেয়েছে। উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অদ্বৈত কুমার রায়কে ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে পাঠানো হয়েছে। তিনি ২০১৩ সাল থেকে বোর্ডের বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে মাউশি’র উপ-পরিচালক (কলেজ-১) পদে ছিলেন। বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈকে রাজশাহী কলেজে বদলি করা হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে তিনি বোর্ডের এ পদটি দখল করে ছিলেন। এর আগে তিনি শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস ছিলেন। শিক্ষা প্রশাসনে সিন্ডিকেট করে নানা অনিয়ম করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ঢাকা বোর্ডের ছয় জনকে বদলি করা হলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থাকা বোর্ডের সচিব শাহেদুল খবির ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকারকে বদলি করা হয়নি। তথচ তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। শাহেদুল খবির ২০০৯ সালে স্কুল পরিদর্শক হিসেবে বোর্ডে প্রেষণে দায়িত্ব পান। পরে ভারপ্রাপ্ত সচিব। টানা নয় বছর এই বোর্ডে প্রেষণে আছেন। চাকরি বিধি অনুযায়ী তিন বছরের বেশি সরকারি কর্মকর্তারা প্রেষণে থাকতে পারেন না। এ বিধি লঙ্ঘন করেই তিনি বোর্ডে বহাল আছেন। বিসিএস সাধারণ শিক্ষক সমিতির এই নেতা সংগঠনে অনুমোদন ছাড়াই তিনি জাতীয়করণের তালিকায় থাকা বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের পদমর্যাদা নিয়ে আদালতে একটি মামলা করেছেন। যে কারণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সরকারি কলেজবিহীন উপজেলায় একটি কলেজ সরকারিকরণ আটকে গেছে। আর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার ২০০৯ সালে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হয়ে বোর্ডে আসেন। এখন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। এই পদটিও সিনিয়র অধ্যাপক পদ মর্যাদার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অর্থের বিনিময়ে অখ্যাত প্রতিষ্ঠানে পাবলিক পরীক্ষার কেন্দ্রের অনুমোদন দেয়ার। প্রশ্নফাঁস হওয়ার বড় কারণ হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এটি চিহ্নিত করেছে। তারপরও তিনি বহাল আছেন স্বপদে।
একই বদলি আদেশে মাউশি’র পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইং) মো. সেলিম, উপ-পরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) মো. ফজলে এলাহী, উপ-পরিচালক (প্রশাসন) শফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী, উপ-পরিচালক (কলেজ-২) মো. মেসবাহ উদ্দিন সরকার, উপ-পরিচালক এসএম কামাল উদ্দিন, সহকারী পরিচালক (কলেজ-৪) জাকির হোসেন, উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষণ) খ ম রাশেদুল হাসান, সহকারী পরিচালক (কলেজ-২) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের প্রেষণ বাতিল করে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন সরকারি কলেজে পাঠানো হয়েছে। এনসিটিবি’র উৎপাদন নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আবদুুল মজিদ, সম্পাদক দিলরুবা আহমেদ, বিশেষজ্ঞ ফাতেমা নাসিমা আক্তার, বিশেষজ্ঞ মনিরা বেগম ও শাহীনারা বেগম, গবেষণা কর্মকর্তা মারুফা বেগম, মো. হাবিবুল্লাহ, মোহাম্মদ শাহ আলম এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক মো. কাওসার হোসেনকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য শিক্ষা বোর্ড ও মাউশি’র আঞ্চলিক কার্যালয়ের ছয়জনকে বদলি করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মাদ্‌রাসা ও কারিগরি বোর্ড, মাউশি, এনসিটিবি, ডিআইএ, নায়েমসহ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন প্রকল্পে আরও অর্ধ শতাধিক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা রয়েছে। বদলিকৃত ও অভিযুক্ত কর্মকর্তারা সবার মূল পদ সরকারি কলেজ। তবে প্রভাব খাটিয়ে প্রেষণে প্রশাসনিক পদ আঁকড়ে আছেন। তারা মূলত শিক্ষক হলেও ক্লাসে পড়াতে মনোযোগী নন; তারা প্রাশসনিক পদে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন।
এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব (কলেজ) এজেডএম নুরুল হক বলেন, আগামী সপ্তাহে আরও বড় ধরনের বদলি করা হবে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে এবং দীর্ঘদিন একই পদে কর্মরত আছেন কেউই রক্ষা পাবেন না। আমরা অতি গোপনে তালিকাটি করছি। জানা জানি হলে বিভিন্ন পর্যায়ের তদবির আসে। কোন প্রতিষ্ঠানে কতজন রয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অপেক্ষা করেন, আগামী সপ্তাহে আরও চমক দেখতে পাবেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর