চাঁদপুর-ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ নৌপথের বয়া-বিকন বাতি নষ্ট ও চুরি যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে অর্ধশতাধিক নৌযান চলাচল করছে। অনুমান কিংবা ধারণার ওপর নৌযানগুলো চলছে। গুরুত্বপূর্ণ এ পথের বিভিন্ন স্থানে পথনির্দেশক বয়া ও বিকন বাতি না থাকায় বাঁশের ওপর নির্ভর করে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলছে যাত্রীবাহী লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযান। শুধুমাত্র চাঁদপুর-ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ নৌপথে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলে অর্ধশত। এছাড়া ষাটনল থেকে আজাদ বাজার, চাঁদপুর-হিজলা, চাঁদপুর-নন্দির বাজার, চাঁদপুর-মাদারীপুর, চাঁদপুর-মাওয়াসহ বেশকিছু ছোট ছোট শাখা নদীতে বেশ কিছু নৌযান চলছে ঝুঁকিতে। বয়া ও বিকন বাতি না থাকায় মাঝে মাঝে দুর্ঘটনার কবলেও পড়তে হচ্ছে নৌযানগুলোকে। নৌ-পথের চাঁদপুর অংশে প্রয়োজনের তুলনায় বয়া ও বিকন বাতি অনেক কম রয়েছে বলে স্বীকার করেছে নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগ চাঁদপুরের উপপরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান। তিনি দাপ্তরিক সমস্যা তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের স্থানীয়ভাবে মাত্র ১ হাজার টাকা খরচ করার অনুমতি রয়েছে, এর বেশি খরচ করতে হলে হেড অফিসের অনুমতির প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জানা যায়, এ নৌ রুটের ৭০০ কিলোমিটার নৌপথে ১০০ বয়া ও বিকন বাতি রয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
আবার যা রয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশ বিকন ও বয়া বাতি দীর্ঘদিন ধরে বিকল। দীর্ঘদিন ধরে বিকল থাকায় চাঁদপুর-ঢাকা, চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ, ষাটনল-আজাদ বাজার, চাঁদপুর-হিজলা, চাঁদপুর-নন্দির বাজার, চাঁদপুর-মাদারীপুর, চাঁদপুর-মাওয়া রুটে ডুবোচর নির্ধারণ করে ঠিকাদারদের মাধ্যমে প্রতি মাসে ১২০টি বাঁশ বিভিন্ন জায়গায় স্থাপন করা হচ্ছে। এতে করে নৌপথে চলতে গিয়ে নদীতে পানি এবং পথের বিভিন্ন সমস্যা নির্ধারণে বিশেষ করে ডুবোচরের কারণে লঞ্চের সারেংরা পড়েন মহাবিপাকে। অনুমান কিংবা ধারণার ওপরও নৌযান পরিচালনা করেছেন চালকরা। তাই বয়া ও বিকন বাতি না থাকায় মাঝে মাঝে দুর্ঘটনার কবলেও পড়তে হচ্ছে এ রুটের নৌযানগুলোকে।
নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগ চাঁদপুরের উপপরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান জানান, বয়া ও বিকন বাতিগুলো অনেক মূল্যবান। দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা একটি বিকন বাতির দাম ৬০-৭০ হাজার টাকা। এ সব বাতির প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ যেমন সোলার, ব্যাটারি ও বাতি চুরি হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, নদীতে বর্তমানে এত বলগেট চলছে এই বলগেটের ধাক্কায় এসব বাতিসহ এর যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। প্রতি মাসে নষ্ট হওয়া প্রায় ৩০টি বয়া ও বিকন বাতি মেরামত করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে দাফতরিক সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্থানীয়ভাবে মাত্র ১ হাজার টাকা খরচ করার অনুমতি রয়েছে, এর বেশি খরচ করতে হলে হেড অফিসের অনুমতির প্রয়োজন হয়। আর যেগুলো চুরি হয়ে যাচ্ছে, নতুন করে স্থাপনের জন্য হেড অফিসে লেখালেখি করে আনতে একটু দেরি হয়। বয়া ও বিকন বাতি চুরি হলে অথবা নষ্ট হয়ে গেলে নৌপথে নৌযান চলাচল সম্পূর্ণ অচল হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ে। নিরাপত্তাসহ এর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বয়া ও বিকন বাতির, সোলার, যন্ত্রাংশ চুরি হওয়া এবং নৌযানের ধাক্কায় নষ্ট হয়ে যাওয়াই মূল কারণ। তিনি আরো জানান, জেলেরা এসব বয়া ও বিকন বাতির প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে যায়। এসব ঘটনা প্রতিরোধে নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি হলেই কিছুটা হলেও চুরি প্রতিরোধ করা যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো জানান, এছাড়া আমাদের নদীর সীমানায় নাব্যতার কারণে ৪০ থেকে ৫০টি ডুবোচর রয়েছে। ডুবোচর নির্ধারণ করতে আমরা বাঁশ ব্যবহার করে থাকি। ঠিকাদারদের মাধ্যমে প্রতি মাসে ১২০টি বাঁশ বিভিন্ন জায়গায় স্থাপন করছি। বিশেষ করে নদীর যে সকল অংশে নাব্যতা সংকট রয়েছে সে সকল জায়গায় বাঁশ পুঁতে নব্যতার মার্কা দেয়া হয়। যাতে করে নৌযান চালকরা সঠিক পথনির্ধারণ করতে পারে। এই বাঁশগুলো চুরি হয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম নৌপথ। চাঁদপুর নৌ সীমানার ৭০০ কিলোমিটার নৌপথ দিয়ে ৫০ লাখ মানুষ লঞ্চ যোগে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করে থাকে।