× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিপর্যস্ত সিলেটের রহিমার পরিবার / ‘গাড়িতে ইয়াবার চালান ছিল- সেটি জানতাম না’

দেশ বিদেশ

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শনিবার

 ‘জানতাম না ইলিয়াস ইয়াবা ব্যবসায়ী। সে পিকনিকের কথা বলে আমাদের কক্সবাজারে নিয়ে গিয়েছিল। আর ফেরার পথে আমাদের গাড়িতে করে নিয়ে আসা হচ্ছিল ইয়াবার চালান। গাড়িতে ইয়াবা আছে জানলে আমরা কখনো ওই গাড়ি ব্যবহার করতাম না।’- কথাগুলো বলছিলেন সিলেটে ইয়াবার চালানসহ আটক হওয়া সিলেটের কণ্ঠশিল্পী রহিমা আক্তার রুহি। আর ইয়াবার চালানসহ আটক হওয়ার পর থেকে লাপাত্তা ইলিয়াস ও সিন্ডিকেট সদস্যরা। ইয়াবার চালানসহ সিলেটের কণ্ঠশিল্পী রহিমা আক্তার রুহি আটকের এমন খবর সিলেটে পৌঁছামাত্র তোলপাড় শুরু হয়। রহিমার প্রতি সিলেটে বাউল অঙ্গনের মানুষের ধিক্কার শুরু হয়। সামাজিকভাবে হেয় হয়ে পড়ে রুহি ও তার পরিবার।
পিতা আবুল কালাম আজাদ ও ভাই ইমন ইয়াবা বিক্রির অভিযোগ নিয়ে কারাগারে। তাদের পরিবার এখন বিপর্যস্ত। এই অবস্থায় মুখ খুলেন রুহি। সংবাদ সম্মেলনও করেছেন তিনি। রুহি জানান, ‘ইলিয়াস যে ইয়াবা ব্যবসায়ী সেটি কখনো আমরা জানতাম না। সে আমাদের পিকনিকের কথা বলে কক্সবাজার নিয়ে গিয়েছিল। ওখানে থাকার কথা ছিল কয়েক দিন। কিন্তু মাত্র এক রাত কক্সবাজারের বিশালবহুল হোটেলে রেখে পরদিন তড়িঘড়ি করে সিলেটের পথে রওনা দেয়। আর ফেরার পথে আমাদের গাড়িতে রেখেছিল ইয়াবার চালান। পুলিশের তল্লাশিতে ধরা পড়েছে আমাদের গাড়ি। ঠিক পিছনের গাড়িতে ছিল ইলিয়াস ও তার সহযোগীরা। কিন্তু তারা পালিয়ে যায়।’ ইলিয়াস মিয়ার বাড়ি সিলেট শহরতলীর মাসুক বাজারের পশ্চিম দর্শা গ্রামে। এলাকায় ইলিয়াস মিয়া মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। মাসুকগঞ্জ বাজারে রয়েছে তার বিশাল নেটওয়ার্ক। কক্সবাজার থেকে ইলিয়াস সরাসরি ইয়াবার চালান নিয়ে আসে সিলেটে। এরপর সেটি নেয় মাসুকগঞ্জ বাজারে। সেখান থেকে লোক মারফতে ইলিয়াস ইয়াবা সিলেট নগরের পশ্চিম অংশ, বিশ্বনাথ, ছাতক ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেয়। তিন থানার সংযোগস্থল সিলেট শহরতলীর মাসুকগঞ্জ বাজার। একদিকে বিশ্বনাথ, অন্যদিকে দক্ষিণ সুরমা ও বিশাল অংশ হচ্ছে জালালাবাদ থানার অধীনে। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে খুব বেশি পড়ে না ওই এলাকা। এই সুযোগে ইলিয়াস ওই মাসুকগঞ্জ বাজারে গড়ে তুলেছিল ইয়াবার সম্রাজ্য। মাদক ব্যবসায় ইলিয়াস নতুন নয়। সে একসময় ফেনসিডিল ব্যবসায়ী হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিল। ওয়ান ইলেভেনের সময় ইলিয়াস শহরতলীর বাদাঘাট থেকে হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হয়েছিল। দীর্ঘদিন কারাবরণ করে বেরিয়ে এলেও মাদক ব্যবসা ছাড়েনি। জেল থেকে ফেরার পর দ্বিগুণ গতিতে হেরোইন ব্যবসা শুরু করে। এখন তার হেরোইন ব্যবসার সঙ্গে ইলিয়াসের সম্পৃক্ততা নেই। সে এখন ইয়াবার ডিলার। মাসুকগঞ্জ বাজারসহ কান্দিগাঁও ইউনিয়নের প্রায় সবাই ইলিয়াসকে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে চিনে। সন্ধ্যা নামলেই বাজারে বিক্রি শুরু হয় ইয়াবা। পাইকারি হারে বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা বিক্রি করে কোটিপতি হয়েছেন ইলিয়াস। সিলেট নগরীর তালতলা এলাকায় একটি হোটেল রয়েছে ইলিয়াসের নিয়ন্ত্রণে। প্রতিরাতেই সে ওই হোটেলে এসে আড্ডা দেয় এবং ওখান থেকে ইয়াবার চালান পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয় বিভিন্ন স্থানে। রুহি জানান, তারা পুলিশের হাতে ২০ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পরপরই পালিয়ে যায় ইলিয়াসসহ তার সহযোগীরা। এরপর থেকে ইলিয়াসকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি। পুলিশও তাকে মোবাইলে ধরার চেষ্টা চালিয়েছে  কিন্তু তাকে পায়নি। এ কারণে পুলিশ শেষমুহূর্তে আমার পিতা ও ভাইকে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে অভিযুক্ত করে মামলা রেকর্ড ও আদালতে চালান দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ইলিয়াসের কোনো খোঁজ নেই বলে জানান রুহি। ইয়াবা ব্যবসা নির্বিঘ্নে চালাতে ইলিয়াস নতুন ফর্মুলা মতো রুহির পিতা বাউল শিল্পী আবুল কালামের সঙ্গে সংখ্যতা গড়েছিল। ওই সংখ্যতা বেশি দিনের নয়। এই সময়ের মধ্যে ইলিয়াস অসংখ্যবার রুহিদের বাসায় গিয়েছে। এলাকার মানুষ জানতো রুহির সঙ্গে গোপন সম্পর্কের কারণে ইলিয়াস তাদের বাসায় যেত। কিন্তু রুহি গতকালও জানিয়েছেন, ইলিয়াসের সঙ্গে তার ভালো পরিচয় নেই। সম্পর্ক হওয়ার প্রশ্নই আসে না। রুহির পিতা আবুল কালাম ও ইলিয়াস এই কয়েক মাসে প্রায় প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত একসঙ্গে থাকতেন। মাসখানেক আগেও ইলিয়াস আবুল কালামকে সঙ্গে নিয়ে কক্সবাজার ঘুরে এসেছেন। ওই সময়ও ইলিয়াস বন্ধু কালামকে দিয়ে কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে এসেছে বলে ধারণা করছে পরিবার। ইয়াবার চালান নির্বিঘ্নে সিলেট নিয়ে আসতে গত ২রা ফেব্রুয়ারি ইলিয়াস কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছিল রুহি ও তার পরিবারকে। রুহির মা, রুহি, ভাই ইমনের স্ত্রীসহ মহিলারা যে গাড়িতে ছিলেন সেই গাড়িতে করে কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে আসা হচ্ছিল। আর হবিগঞ্জের মাধবপুরে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে পুলিশি চেকপোস্টে ওই ইয়াবার চালানসহ ধরা পড়েছিল রুহি তার পরিবারের সদস্যরা। তারা ধরা পড়ার কিছু আগে মাধবপুরের একটি হোটেলে ইলিয়াসসহ পরিবারের সবাই একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেন। খাওয়া শেষ করে রুহি ও তার পরিবারের সদস্যরা জিপে করে সিলেটের পথে রওনা দেন। ইলিয়াসের গাড়ি ছিল পেছনে। তবে চেকপোস্টে আসার আগে গাড়িচালককে বারবার ফোন দিয়েছিলেন ইলিয়াস। বলেছিলেন, গাড়ি ফিরিয়ে নিতে। কিন্তু গাড়িচালক ইলিয়াসের সে কথা শুনেনি। সামনে পড়ে যায় পুলিশের চেকপোস্ট- এমনটি জানিয়েছেন রুহি নিজেও। যখন পুলিশ জিপ আটক করে তখন কৌশলে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ড্রাইভারও পালিয়ে যায়। রুহির অভিযোগ সম্পর্কে খবর নিতে ইলিয়াসের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে- বর্তমানে এলাকা ছাড়া ইলিয়াস ও তার ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্যরা। মাধবপুর থানা পুলিশ জানিয়েছে, ইয়াবার চালানসহ পাওয়া যায় বাউল আবুল কালাম ও তার পরিবারকে। এ কারণে আবুল কালাম ও তার ছেলে ইমনকে আসামি করে মহিলা যারা ছিলেন তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার পর তদন্ত চলছে বলে জানায় পুলিশ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর