× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আমিরের ঘর আলোকিত করলো কুড়িয়ে পাওয়া শিশু নিঝুম

বাংলারজমিন

আশরাফুল ইসলাম/ সাখাওয়াত হোসেন হৃদয়, পাকুন্দিয়া (কি
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শনিবার

গত বছরের ১৯শে ফেব্রুয়ারি রাতে পাকুন্দিয়া পৌরসদরের হোসেনপুর সড়কের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কয়েক পথচারী পাশের পতিত জমি থেকে ভেসে আসা এক নবজাতক শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পান। পথচারী চরপাকুন্দিয়া গ্রামের হোসেন মিয়া ও তার সঙ্গীরা সেখানে গিয়ে তারা জমির ময়লার স্তুপে একটি সদ্যপ্রসূত শিশুকে বস্ত্রহীন অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন। ওই সময় শিশুটির চারপাশে একটি শিয়াল ঘোরাঘুরি করছিল। হোসেন মিয়া ও তার সঙ্গীরা শিয়ালটিকে তাড়িয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে রিকশাযোগে পাকুন্দিয়া হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যান। দীর্ঘক্ষণ খালি গায়ে মাটিতে পড়ে থাকায় ঠান্ডা বাতাসে অসুস্থতায় আক্রান্ত শিশুটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালে ভীড় জমায় হাজারো উৎসুক জনতা। এক পর্যায়ে মাছুম ও আমির উদ্দিন নামে দুই ব্যক্তি শিশুটিকে নিয়ে গিয়ে লালন-পালন করার আগ্রহ দেখান। ঘটনাস্থলে গিয়ে পাকুন্দিয়া থানার তৎকালীন ওসি মোহাম্মদ সামসুদ্দীন সেখানে উপস্থিত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. কামরুল হাসান, পাকুন্দিয়া ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভিপি মো. ফরিদ উদ্দিন, পৌর কাউন্সিলর মোবারক হোসেন ও উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মোহাম্মদ এখলাছ উদ্দিনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে সুরাহা দেন বিষয়টির।
আমির উদ্দিন নিঃসন্তান হওয়ায় তাকেই শিশুটি দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এ সময় শিশুটিকে তুলে দেয়া হয় আমির উদ্দিনের কোলে। দাম্পত্য জীবনে ১৬ বছরেও সন্তানের মুখ দেখতে না পারা আমির উদ্দিনও নবজাতক এই কন্যা শিশুকে নিজের কোলে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তার স্ত্রী নীলাও হাসেন পূর্ণতার আনন্দে। ময়লার স্তূপ আর শিয়ালের কবল থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুটিই এখন আলোকিত করে রেখেছে আমিরের ঘর।
আমির উদ্দিন পাকুন্দিয়া পৌরসদরের শ্রীরামদী গ্রামের হাফিজ উদ্দিনের ছেলে এবং পাকুন্দিয়া বাজারের একজন মোটর সাইকেল ব্যবসায়ী। দীর্ঘ ১৬ বছর নিঃসন্তান থাকা আমির-নীলা দম্পতি নবজাতক ওই শিশুর দায়িত্ব নিয়ে নিজ সন্তানের মতো লালন পালন করে যাচ্ছেন। সুন্দর নামও দিয়েছেন ওই শিশুর। অহনা আমির নিঝুম। নিঝুম বড় হয়ে পড়ালেখা করে গাইনী চিকিৎসক হয়ে বন্ধ্যা নারীদের চিকিৎসা সেবা দিবে এমন আশায় বুক বেঁধেছেন আমির-নীলা দম্পতি।
শিশুটির এক বছর পূর্ণ হওয়ায় শুক্রবার আমির উদ্দিনের বাড়ি পৌরসদরের শ্রীরামদী গ্রামে শিশুটির জন্মোৎসবকে উপলক্ষ করে ভোজন এর আয়োজন করা হয়। স্থানীয় গণ্যমান্যসহ পাঁচ শতাধিক লোককে সুস্বাদু হরেক রকমের আইটেম দিয়ে ভোজেন করানোর আয়োজন করেন আমির উদ্দিন।
শুক্রবার দুপুরে আমির উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মনোমুগ্ধকর গেইট ও প্যান্ডেলে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে বাড়ি। দূর-দূরান্তের আত্মীয়স্বজনসহ এলাকার মানুষজনের পদচারণায় মুখরিত পুরো বাড়ি। সবাই দেখছেন নিঝুমকে। হাত বুলিয়ে আদর করছেন, দোয়া করছেন। নিঝুমও আদরিণীর মতো সবার আদর-সোহাগ নিচ্ছে। আমির উদ্দিন আগত সকল মেহমানদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন ও কুশল বিনিময় করছেন। ভোজনে এত আইটেম দিয়ে খেয়ে তৃপ্তিমাখা মুখ নিয়ে আমির উদ্দিনের প্রশংসা করছেন সবাই। দোয়া করছেন তার ও তার পরিবারের জন্য।
আমির উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে কোন সন্তান আসেনি আমার সংসারে। আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানিতে নিঝুমকে পেয়েছি। ওকে পেয়ে আমাদের শূণ্য আর হাহাকারে ভরা জীবনে আনন্দ ফিরে এসেছে। মা-বাবার আদর স্নেহ দিয়ে বড় করছি নিঝুমকে। বড় হয়ে নিঝুম বড় গাইনী বিশেষজ্ঞ হয়ে নিঃসন্তান সংসারে আলো ফেরাতে, এখন এই স্বপ্নই আমাদের।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর