× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ধর্ষিত রোহিঙ্গা নারী উপযুক্ত সেবা পাচ্ছেন না

বিশ্বজমিন

স্কাই হুইলার
(৬ বছর আগে) ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮, শনিবার, ১:১২ পূর্বাহ্ন

আশ্রয়স্থল। আপনার কাছে এ কথাটির অর্থ কি?
সম্ভবত আপনার দৃষ্টিতে এর অর্থ বাঁশ ও তারপুলিন দিয়ে কর্দমাক্ত পথের পাশে গড়ে তোলা এক বিশাল আশ্রয় শিবির নয়, কেখানে মৌসুমী বৃষ্টি ও রোগের প্রকোপ রয়েছে। আগস্টের শেষের দিকে শুরু হওয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জাতি নিধন শুরু হয়। এর ফলে সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। তাদের কাছে বাংলাদেশে গাদাগাদি করে বসবাস করা এসব ক্যাম্পই হলো আশ্রয়শিবির, যতটুকু তারা পেয়েছে।
অক্টোবরে আমি ওই আশ্রয়শিবিরগুলো পরিদর্শন করেছি। তখন গণহত্যা, গণহারে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া, সেনাবাহিনীর পোশাক পরা ব্যক্তিদের ভয়াবহ যৌন সহিংসতার ফলে যেসব নারী ও মেয়ে পালিয়ে এসেছেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। নৃশংস গণধর্ষণের পর যেসব নারী, মেয়ে বেঁচে আছেন তাদের জননাঙ্গ ছিড়ে গেছে।
সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। না হয় ক্ষত দেখা দিয়েছে। জাতি নিধনের জন্য একটি শক্তিশালী অস্ত্র হলো ধর্ষণ। এর ফলে ভীতসঙ্কিত নির্যাতিতরা তাদের বাড়ি ছাড়তেই বাধ্য হয় নি। একই সঙ্গে তারা সেই বাড়িতে ফিরে যাওয়ার প্রশ্নেও আতঙ্কিত। একজন এমন নারী জিজ্ঞাসা করেছিলেন ‘কিভাবে আমি সেখানে ফিরে যাবো?’
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। তবে এখনও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবায় যথেষ্ঠ ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাপকহারে যৌন নৃশংসতার বিষয়ে অনুল্লেখিত প্রতিক্রিয়া। আন্তঃএজেন্সি ওয়ার্কিং গ্রুপ অন রিপ্রোডাকটিভ হেলথ ইন ক্রাইসিস (আইএডব্লিউজি) একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসার পাঁচ মাস পরেও তাদের মাত্র ক্ষুদ্র একটি অংশ ধর্ষণ পরবর্তী সেবা পাচ্ছেন।
কেন?
আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে কাজ করছে এমন এজেন্সিগুলোর মতে একটি কারণ হলো, বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা খাত ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এখানে কাজ করতে চায় এমন নতুন বেসরকারি সংগঠনগুলোকে নিবন্ধন দেয়ার কার্যক্রম ধীর গতির।  এ ছাড়া যেসব এনজিও নিবন্ধন পেয়েছে কাজ করার জন্য তারা তাদের নতুন নতুন কর্মকান্ড অনুমোদন পাওয়া নিয়ে লড়াই করছে।
দ্বিতীয়ত: এজেন্সিগুলোর মতো, নারীরা পছন্দ করেন এমন জন্মবিরতিকরণ ব্যবস্থার সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘদিন সক্রিয় থাকে এমন জন্মবিরিতিকরণ ব্যবস্থা। যেমন, ইঞ্জেকশন অথবা ইন্ট্রা-ইউটেরিন ডিভাইস। উপরন্তু দীর্ঘমেয়াদী জন্মবিরতিকরণ ব্যবস্থায় বিধিনিষেধ রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের। এই জন্মবিরতিকরণ ব্যবস্থা যেকোনো সময় খুলে ফেলা যায়। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ডাক্তার ও সিনিয়র মেডিকেল কর্মকর্তারা শুধু নারীদের নাম, ঠিকানা নিবন্ধিত করছে। এই ঠিকানা নেই শরণার্থীদের। আবার অনেক রোহিঙ্গা জানেই না যে, বাংলাদেশে গর্ভপাত বৈধ কিনা। এ ছাড়া গর্ভপাতের সুযোগসুবিধার স্থান খুঁজে পাওয়াও কঠিন।
রোহিঙ্গাদের প্রজনন্ন স্বাস্থ্যসেবার অপর্যাপ্ততার তৃতীয় কারণটি হলো তহবিল। তাই দাতা দেশগুলোর উচিত এই সহায়তা তহবিলে অর্থ দেয়া। বিশেষভাবে প্রজন্ন বিষয়ক মৌলিক অধিকারের বিষয়টিতে মনোযোগ দেয়া উচিত। অবশ্য, যদি তারা ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গা নারীদের প্রকৃত আশ্রয় দেয়ার কথা ভেবে থাকেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে একটি বিষয়ক স্বীকার করতে হবে। তা হলো রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেয়া মানে হলো তাদেরকে স্বল্প মেয়াদ থেকে দীর্ঘমেয়াদে সহায়তা দেয়া। নারী ও বালিকারা যে ভয়াবহ ক্ষত নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তাকে অস্থায়ী একটি সমস্যা হিসেবে দেখা ঠিক হবে না।
(স্কাই হুইলার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওমেনস রাইটস ডিভিশনের গবেষক। তার এ লেখাটি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মূল সাইটে প্রকাশিত হয়)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর