× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

একি হলো!

এক্সক্লুসিভ

লবী রহমান
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, রবিবার

ঝর্ণার মৃদু চঞ্চল চরণ প্রান্তরে নূপুর বাজিয়ে অনুষ্টুপ ছন্দে যে সময় কাটতো- তা যেন আজ প্রকৃতির মতো প্রশান্ত। বনহরিণীর সে চঞ্চলতা আজ নেই। ফুল ঝরে গ্যাছে উন্মুক্ত সবুজ চত্বরে। দুর্বাদলের মৃদু শিহরণ আজ বিদায় নিয়েছে। গিরিলালিত জীবন স্পন্দের শিশির বিন্দু শুকিয়ে গ্যাছে করালগ্রাসী সূর্যদাহের নিষ্ঠুর সামাজিকতার কঠিন বিষবাষ্পে; হারিয়ে গ্যাছে হেমন্তের ঝরা  ফসলের মতো আমার সোনালি দিন।
ঠিক যেন শৈলচূড়ায় বরফের আলো ঠিকরে পড়েছে, কিন্তু বরফ এখনও গললো না, আমি জানি- সে ছিল অকলঙ্ক শুভ্র, সে কি নিবিড় পবিত্র। সাড়া দেয়া বিজয়ের পর বিসর্জনের সানাইয়ের সুরের মাঝে শুনতে পাই আজও সেই মধুর ডাক- ‘লবী তুমি কোথায়?’
একি হলো?! এমন তো কথা ছিল না! এতগুলো প্রাণ অকালে কেনই বা কেড়ে নিলো হায়নার কালো থাবায়। এই অপূরণীয় ক্ষতির মাসুল কি সম্ভব? কাকে করবো এ প্রশ্ন? কে ছিল এই লোমহর্ষক কাহিনীর নেপথ্যে? কী ছিল তার স্বার্থ? কীসের ওপর চালিয়ে দিল ব্রেকহীন বুলড্রোজার? স্তব্ধ করে দিল জীবনের গতি। ভাবছেন বলবো ‘প্রশ্ন করুন বিবেককে’; জানি, বিবেকের বিকৃত লাশ এখন নর্দমার ভেতর।
সেদিন ছিল ২৫শে ফেব্রুয়ারি, নিয়মিত উঠেছিল সূর্য, দিন শেষে অস্তও গিয়েছিল। কিন্তু আমার জীবনে সুখের সূর্যটা কালের করালগ্রাসে অস্ত হলো অনন্তকালের জন্য। এখন একমাত্র অবলম্বন- স্মৃতি, সেই মধুর স্মৃতির মাঝে নিজেকে সান্ত্বনা দেই-

“পৃথিবীটা সুন্দর ছিল
তুমি ছিলে বলে
আজও আছে সুন্দর
সেই পৃথিবী
অনুভবে তুমি আছো বলে”।

জীবনের নিয়মে হচ্ছে সকাল, কাকডাকা ভোরে ঘুম ভাঙছে সবার, দখিনা জানালাও খুলছে, হিমেল স্নিগ্ধ বাতাসও বইছে, ঘরে কল্পনার রঙ রাঙাচ্ছে সবার জীবন। দীর্ঘ সুখময় ক্লান্তি শেষে ঘুমাচ্ছে সবাই- আর আমার অন্তর্দহনে জ্বলছে বুক, বইছে খরাময়ী বিষবাষ্প ভরা দূষিত বাতাস, আর গড়ানো নয়ন জলে ভিজছে বালিশ। সেই সঙ্গে চিন্তার ক্লান্তি শেষে দীর্ঘশ্বাস!
কিন্তু কেন? কী ছিল অপরাধ? সততার তো কোনো ঘাটতি ছিল না। শপথ অনুযায়ী ছিল কর্ম-তৎপরতা। অন্যায়ের সঙ্গে ছিল না কোনো আপস। তবে কি এটাই অপরাধ ছিল? মাঝেমধ্যে মনে হয় কবর থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে চিৎকার করে বলি, আর একদিনের জন্য জাগিয়ে ধরো অস্ত্র, নির্দেশ দাও তোমার প্লাটুনকে-সবার মুখোশ দাও খুলে-কোরো না তাদের কোনো ক্ষমা-এসব ভেবে আবার ক্লান্ত হয়ে যাই, আর অস্থিরতায় এপাশ-ওপাশ করি।
জানি, সারাজীবন কলম চালিয়ে আমার লেখা হবে না শেষ। জানতেও পারবো না কাকে লিখবো। লিখে আর জানিয়েও কোনো লাভ হবে না কারও। পূরণ হবে না সে ক্ষতির। এ বিষবাষ্পপূর্ণ সমাজ শুধু ব্ল্যাকহোলের মতো কেড়ে নিতেই জানে, জানে না কিছু দিতে। যারা করেছে আমার এ হাল, তাদের বলছি:
আজ যদি জানতে, ভালো লাগার মানুষকে এভাবে কেড়ে নিলে যে কী যন্ত্রণা হয়, তাহলে করতেন না এ তাণ্ডবলীলা। ডানাভাঙা পাখির মতো এতগুলো পরিবারকে করতে না সর্বস্বান্ত; এ যে কী কষ্ট! প্রতিটি নিঃশ্বাসেই শুধু হতাশা, হাহাকার...

ইলাহী তোমাকেই লিখছি:
“জানিনা তো শুনছো কি ওপারে বসে
আমার এ বেদনার ডাক
তোমায় পেয়েও যদি সব হারাতাম
মিছে যত থাক পড়ে থাক”

লেখক: শহীদ কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফীক-এর স্ত্রী
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর