× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় /পাকিস্তান মডেল?

দেশ বিদেশ


২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, রবিবার

১৯৫০-এর দশকের গোড়ায় লাহৌরে সামপ্রদায়িক সংঘাত এমন মাত্রায় পৌঁছাইয়াছিল যে, শেষ অবধি সেনার ডাক পড়িল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনিবার পর সেনাদের যখন ব্যারাকে ফিরিয়া যাওয়ার পালা, তখন সেই বাহিনীর প্রধান নাকি একটি অনুরোধ করিয়াছিলেন- বাহিনীকে বাড়তি দুইদিন লাহৌরে রাখিবার অনুমতির অনুরোধ। সম্মতি মিলিলো। সেই দুইদিনে শহর পরিষ্কার করিয়া, ভাঙা রাস্তা সারাইয়া, গাছ পুঁতিয়া, বেআইনি কাঠামো ভাঙিয়া শহরের চেহারা পালটাইয়া দিয়া ফিরিয়া গেল সেনাবাহিনী। মানুষ অতি খুশি। কয়েক বৎসর পর, ১৯৫৮ সালে, পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল যখন গণতান্ত্রিক শাসনকে সরাইয়া সামরিক শাসন চালু করিবার হুকুম দিলেন, মানুষ অসন্তুষ্ট হয় নাই। সেই সামরিক শাসনের ট্র্যাডিশন- রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর অনুপ্রবেশ- শেষ অবধি পাকিস্তানকে কোথায় লইয়া গিয়াছে, জানিতে গবেষণা করিতে হয় না। ভারত ও পাকিস্তান-  ১৯৪৭-এর আগস্টের দুই জাতকের যাত্রাপথ গত সাত দশকে যতখানি ভিন্ন হইয়াছে, রাজনীতির সহিত সামরিক বাহিনীর নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখিতে পারা এবং না পারা তাহার অন্যতম কারণ।
লাহৌরের আখ্যানটি জরুরি, কারণ সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীকে কোন চোখে দেখিতেছে, তাহা যে নির্ণায়ক হইতে পারে না, এই আখ্যানটি সেই সাক্ষ্য দেয়। জওহরলাল নেহরুর ভারত সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও উচ্চাশা হইতে দূরে রাখিতে পারিয়াছিল। নরেন্দ্র মোদির ভারত কি নেহরু যুগের সেই অভিজ্ঞানটিকেও মুছিয়া দিতে তৎপর? ‘পাকিস্তান মডেল’-ই তাহার লক্ষ্য?
‘যে সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতার উপর নির্দ্বিধায় ভরসা করা চলে না, সেই বাহিনী দেশের পক্ষে অতি বিপজ্জনক।’ ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে সেনাবাহিনীর সদস্যদের এক সমাবেশে এই কথাগুলো বলিয়াছিলেন জওহরলাল নেহরু। বিপিন রাওয়াত তখনও জন্মান নাই। কিন্তু, কথাগুলো নিশ্চয় তাহার শোনা। সেনাবাহিনীকে কেন নির্বাচিত সরকারের অধীনেই থাকিতে হইবে, কেন সেনার রাজনৈতিক উচ্চাশা থাকিতে পারে না- সে বিষয়ে ভারতে এতদিন নেহরুর মতবাদই গ্রাহ্য ছিল। সরকারের সামান্য সমালোচনা করিয়া জেনারেল কারিয়াপ্পা নেহরুর নিকট তিরস্কৃত হইয়াছিলেন এবং সেই তিরস্কারই সম্পর্কের সুর বাঁধিয়া দিয়াছিল। সেনাবাহিনী কখনও সীমারেখা অতিক্রম করে নাই। রাওয়াত অসমে গিয়া যে মন্তব্যগুলো করিয়া আসিলেন, তাহাতে এই রেখা ভাঙিবার চেষ্টাটি স্পষ্ট। এই প্রথম কোনো সেনাপ্রধানের বক্তব্যে ধর্মীয় বিভাজন এতখানি প্রকট, রাজনৈতিক আনুগত্যের সংকেত এত তীব্র। অনুমান করা চলে, সীমা অতিক্রম করিবার ছাড়পত্র তিনি প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানে পড়িয়া লইয়াছেন।
 সেনাপ্রধানের অনধিকারচর্চায় প্রধানমন্ত্রী প্রতিক্রিয়া জানান নাই। জানাইবেন, সেই ভরসাও ক্ষীণ। তাহার আমলে ভারতে সেনাবাহিনীর- অথবা, ‘সিয়াচেনের ঠাণ্ডায় দেশের সীমান্ত রক্ষায় অতন্দ্র জওয়ানের’- রাজনৈতিক ব্যবহার নজিরবিহীনভাবে বাড়িয়াছে। মানুষের মনে সেনাবাহিনীর প্রতি যে শ্রদ্ধা আছে, তাহাকে নিজেদের দিকে টানিয়া লইবার জন্য বিজেপির নেতারা সুকৌশলে সেনা ও সরকারের পরিচিতিকে ‘অদ্বৈত’ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করিতে চেষ্টা করিয়া গিয়াছেন। জেনারেল ভি কে সিংহের মন্ত্রিত্বপ্রাপ্তিও বেনজির- সেনাপ্রধানের রাজনৈতিক উচ্চাশার এহেন স্বীকৃতি ভারত আগে কদাপি দেয় নাই। আশঙ্কা, রাওয়াতরা নিজেদের উচ্চাশা পূরণে আরো তৎপর। মোদি ভুলিয়াছেন, সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে সরকার ও সেনার মধ্যবর্তী পাঁচিলটি ভাঙিলে তাহার পরিণতি শেষ অবধি সুখকর হয় না। পাকিস্তান ঠেকিয়া শিখিতেছে। মোদির ভারত কি সেই বহুমূল্য শিক্ষা লইতে চাহে? পাকিস্তানই কি তাহার জীবনের ধ্রুবতারা?
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর