× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অমর একুশে গ্রন্থমেলা /চাহিদা বাড়ছে অনুবাদ সাহিত্যের

দেশ বিদেশ

মুনির হোসেন
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, রবিবার

যুগ যুগ ধরেই মানুষ নিজস্ব ভাষার বাইরের সমাজ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিল। আর এটি জানার অন্যতম মাধ্যম ছিল অনুবাদ গ্রন্থের। বিশ্বের সব সাহিত্যে অনুবাদ সাহিত্যের রয়েছে একটি অসামান্য প্রভাব। বিশেষ করে আরবি ও বাংলা সাহিত্যে এর প্রভাব স্পষ্ট বিদ্যমান। দেশি লেখকদের বাইরে বিদেশি লেখকদের লেখা বই দিন দিন বাঙালি পাঠকের কাছেও জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রাচীন আর্য, মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও অন্য রাজাদের সময় থেকেই বাংলা সাহিত্যে অনুবাদের প্রচলন হয়। বাংলা সাহিত্যে প্রথম অনুবাদ গ্রন্থ রচনা করেন কৃত্তিবাস ওঝা। তার অনূদিত প্রথম গ্রন্থটির নাম ছিল শ্রীরাম পাঁচালী।
শাহ মুহাম্মদ সগীর, জৈনুদ্দিন, চাঁদ কাজি, শেখ কবিররা মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যকে আরো সমৃদ্ধ করে তোলেন তাদের নানা অনুবাদ সাহিত্যের মধ্যদিয়ে। মুসলিম শাসনামলে বাংলায় অনুবাদ সাহিত্য তার সর্বোচ্চ সমৃদ্ধি অর্জন করে। কালের বিবর্তনে এর চাহিদা এখন তুঙ্গে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম অনুবাদ সাহিত্য অধ্যয়নের মাধ্যমে অন্য যেকোনো ভাষায় লেখা বই পড়ে তাদের আচার-আচরণ, সভ্যতা, সংস্কৃতি কিংবা রণকৌশল সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হচ্ছে। বরাবরের মতো এবারও অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বেশ কিছু অনুবাদ গ্রন্থ বের হয়েছে। প্রকাশকরা জানান, পাঠকদের একটা শ্রেণি আছে যারা অনুবাদ গ্রন্থ খোঁজেন। এদের মধ্যে মাঝ বয়সী ও তরুণই বেশি। তারা মেলায় এসে অনুবাদ গ্রন্থই খোঁজেন। বিদেশি বিভিন্ন লেখকের লেখা বাংলা অনূদিত বই কিনে নেন তারা। এটি প্রকাশনা জগতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রোদেলা প্রকাশনীর ম্যানেজার মো. হাবীব খান বলেন, ‘আমরা আসলে পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী অনুবাদ গ্রন্থ সরবারহ করতে পারছি না। পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী অনুবাদ গ্রন্থ মেলায় কম বের হয়। আর এর জন্য বাংলা একাডেমির বেঁধে দেয়া কিছু রীতিনীতিও দায়ী।’ অনুবাদ গ্রন্থ কেন পড়েন? জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহদী বলেন, ‘অনুবাদ গ্রন্থ পড়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের জানার পরিধি বাড়াতে পারি। এর মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন দেশ, সমাজ ও সভ্যতা সম্পর্কে বিষদভাবে জানতে পারি। অন্যের সভ্যতা সংস্কৃতির সঙ্গে তুলনা করে নিজেদের আরো সমৃদ্ধ করতে পারি।’ শুধু অনুবাদ গ্রন্থই বিক্রি হওয়া অন্যধারা প্রকাশনীর বিক্রয় কর্মী ফারুক হোসাইন বলেন, ‘আমাদের এখানের অধিকাংশ বই হচ্ছে অনুবাদ ধর্মী। আমাদের নিজস্ব কিছু পাঠক আছে। তারা আসছেন এবং কিনছেন। তাছাড়া তরুণ ও মাঝ বয়সী লোকজনও আমাদের এখান থেকে অনুবাদগ্রন্থ সংগ্রহ করছেন। ভালোই চলছে অনুবাদমূলক গ্রন্থ।’ বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বিক্রয়কর্মী রাজিব হাওলাদার বলেন, ‘অনুবাদ করা বই ভালোই চলে। এবারো খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে। মূলত তরুণ ও মাঝ বয়সী লোকজনই এসব বই বেশি কিনছেন।’ এবারের মেলায় আসা উল্লেখযোগ্য অনুবাদ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- অন্যধারা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত অরুন্ধতী রায়ের দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস- বইটির অনুবাদ করেছেন প্রমিত হোসেন, ফিদেল কাস্ত্রোর মাই লাইফ বইটির অনুবাদ করেছেন হাসান বায়েজীদ, ড্যান ব্রাউন এর লেখা অরজিন বইটির যৌথ অনুবাদক অমিত রহমান ও রাব্বি উস সানী, জওহরলাল নেহেরুর অ্যা লেটার ফ্রম অ্যা ফাদার টু হিজ ডটার বইটির অনুবাদ করেছেন সৈয়দ ফারুক হোসেন। অন্বেষা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে আবদুল গাফফার রনির অনূদিত কৃষ্ণগহ্বর ও থিওরি অব রিলেটিভিটি, আকরামুল ইসলাম সিয়ামের অনূদিত ডেভিড উড এর ডোরাডো, লি চাইল্ড-এর লেখা ও আদনান আহমেদ রিজন-এর অনূদিত কিলিং ফ্লোরসহ ৪টি অনুবাদ গ্রন্থ। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র থেকে বের হয়েছে- ভিক্টর হুগোর লেখা ও সুধাংশুরঞ্জন ঘোষের অনূদিত লে মিজারেবল, লিও তলস্তয়-এর লেখা ও মাণীন্দ্র দত্তের অনূদিত আনা কারেনিনা, এরখি মারিয়া রেমার্ক-এর লেখা ও আব্দুল হাফিজের অনূদিত প্রত্যাগত, ফেডরিক নিটশে এর লেখা ও সালেহ মাহমুদ রিয়াদ-এর অনূদিত আমি জরথুস্ত্র বলছি, ডেভিট হিউম-এর লেখা ও একুশে পদক প্রাপ্ত আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়ার অনূদিত মানবীয় উপলব্ধির অন্বেষণ, গুলবদন বেগম-এর লেখা ও মোস্তফা হারুন-এর অনূদিত হুমায়ুননামাসহ ১৫টি অনুবাদ গ্রন্থ। রোদেলা প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে ১৪টি অনুবাদ গ্রন্থ। এর মধ্যে রয়েছে- গ্রাহাম ব্রাউন-এর লেখা দ্য ইডেন প্রফেসি বইটির অনুবাদ করেছেন অসীম পিয়াস, শ্যাডো প্রিন্সেস বইটির মূল লেখক হলেন ইন্দু সুন্দরেসান আর অনুবাদ করেছেন শাহেদ জামান, জোসেফিন টে এর লেখা ও মাহিদা মৌ-এর অনূদিত দ্য ডটার অব টাইম ইত্যাদি। ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত হয়েছে দুটি অনুবাদ গ্রন্থ। দুটি বই হলো- রাজু রাজের লেখা ও মু. জালালউদ্দীন বিশ্বাস-এর অনূদিত মোঘল সাম্রাজ্যের সেনা ব্যবস্থা এবং সেনেকা-এর লেখা ও সাবেদনি ইব্রাহীমের অনূদিত অন দ্য মর্টনেস অব লাইফ।গতকালকের মেলা: গতকাল ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৪তম দিন। মেলা চলে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১৮২টি। ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত গ্রন্থমেলায় ছিল শিশুপ্রহর। সকাল সাড়ে ১০টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সংগীত প্রতিযোগিতা, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ-এর ভিসি অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে ছিল দেশ বিভাগের সত্তর বছর শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইমানুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সৈয়দ হাসান ইমাম। সভাপতিত্ব করেন কামাল লোহানী।

গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার ঘোষণা:  অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চারটি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৭ সালে প্রকাশিত বিষয় ও মানসম্পন্ন সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য প্রথমা প্রকাশনকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০১৮, ২০১৭ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য অলকানন্দা প্যাটেল রচিত ‘পৃথিবীর পথে হেঁটে’ গ্রন্থের জন্য বেঙ্গল পাবলিকেশনস, সুফি মুস্তাফিজুর রহমান রচিত ‘বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক উত্তরাধিকার’ গ্রন্থের জন্য জার্নিম্যান বুকস, মঈন আহমেদ সম্পাদিত ‘মিনি বিশ্বকোষ পাখি’ গ্রন্থের জন্য সময় প্রকাশনকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৮, ২০১৭ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে মানের বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য চন্দ্রাবতী একাডেমিকে রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০১৮ এবং ২০১৮ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কথা প্রকাশকে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৮ প্রদান করা হয়েছে। আগামী ২৮শে ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮-র সমাপনী অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব পুরস্কার পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে তুলে দেয়া হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর