‘আমার পারফরম্যান্স যদি মূল্যায়ন করতে বলেন তাহলে বলবো, একেবারেই বাজে খেলছি। শ্রীলঙ্কাতে টি-টোয়েন্টি অভিষেকটাই একটু ভালো ছিল। এরপর ওয়ানডের কথা বললে, সেটিও ভালো হয়নি। এক কথায় আমি এখন পর্যন্ত আমার শক্তির অনুপাতে ভালো বল করতেই পারিনি।’ নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের পারফরম্যান্স এভাবেই মূল্যায়ন করলেন তরুণ পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। বয়স ২১ ছুয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের গণ্ডি পার হয়েই ঢুকে পড়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। কিন্তু অভিষেকের পর থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটে দাগ কাটার মতো কোনো পারফরম্যান্স করতে পারেননি সাইফ উদ্দিন। চট্টগ্রামের এ ক্রিকেটার যতটা আলো ছড়িয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে, ততটাই আঁধারে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।
গেল বছর তার অভিষেক হয়েছিল টি-টোয়েন্টি সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এরপর খেলেছেন ৬টি ম্যাচ। একই বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডেতেও তার অভিষেক হয়। কিন্তু এ ফরম্যাটে তার শুরুটা টি-টোয়েন্টির চেয়েও বেশি বাজে। দিন দুয়েক আগে মিরপুর স্টেডিয়ামে অনুশীলনের এক ফাঁকে কথা বলেন দৈনিক মানবজমিনের সঙ্গে।
এখন পর্যন্ত দেশের হয়ে খেলেছেন ৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। মাত্র ১৮ ওভার বল করে ৪ উইকেট পেলেও ৪৯.৭৫ গড়ে খরচ করেছেন ১৯৯ রান। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকাতে ৪ ওভারে ৫৩ ও সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪৬ রান দেন তিনি। এছাড়া তিন ওয়ানডেতে মাত্র ১১ ওভার বল করে ৭৫ রান খরচ করে নিয়েছেন একটি উইকেট। এমন পারফরম্যান্স বলে দেয়া যায় ব্যাটসম্যানরা তাকে কতটা সাধারণ মানে নামিয়ে এনেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় মিলার তার এক ওভারে হাঁকিয়েছেন ৫টি ছয়ের মার। এছাড়া ওয়ানডে অভিষেকে তার এক ওভারে চারটি ৪ হাঁকান হাসিম আমলা। বল হাতে এ দুর্বলতা কেন! এখনই ফিসফাস শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এ তরুণ পেসারের বল চলেই না। নিজের দুর্বলতা নিয়ে সাইফউদ্দিন বলেন, লাইন লেন্থ ঠিক রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমার যে অন্যতম শক্তি ইয়র্কার সেটিও হচ্ছে না। মনে হয় যে, খারাপ সময় যাচ্ছে আমার। এটিও সত্যি যে, প্রতিটি ক্রিকেটারের জীবনে এমন একটা সময় পার হয়। হয়তো আমার ক্যারিয়ারের শুরুতেই হচ্ছে। আর বয়স কম, অভিজ্ঞতাও। আমার মতো বোলারদের আসলে খেলতে খেলতে শিখতে হয়।’
অন্যদিকে ঘরোয়া ক্রিকেটে অন্যরকম এক সাইফউদ্দিন। এ পেসার ২৫টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে নিয়েছেন ৫৩ উইকেট। আর ২৯টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে তার শিকার ৪২ উইকেট। আর ঘরোয়া ২৮টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নিয়েছেন ২৯ উইকেট। ঘরোয়া ক্রিকেটের এ সাইফউদ্দিন তাহলে আন্তর্জাতিকে এমন খাপ ছাড়া? এ বিষয়ে এ তরুণ পেসার বলেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে বেশ পার্থক্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের। এখানে একটি দলের সেরা ক্রিকেটাররা থাকে। তারা কোনো বাজে বলেই ছাড় দিতে চায় না। ঘরের ক্রিকেটে কিন্তু অনেক বলেই ছাড় পাই। আসলে দুই জায়গার চাপটা দুই রকম। উইকেটও আলাদা। তবে উইকেটের দোষ দিয়েও লাভ নেই। আমিই খারাপ বল করেছি।’ তবে এ নিয়ে কোনাভাবেই ভেঙে পড়ছেন না তিনি। সাইফউদ্দিন বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি ম্যাচে রান বেশি দিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু আপাতত এ নিয়ে ভাবছি না কারণ এ ফরমেটে বোলারদের খুব বেশি কিছু করার থাকে না। আপনি অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড দেখেন সেখানে ২০ ওভারে ২৫০ রানও চেজ হচ্ছে। সেখানে বোলাররা বেশ অসহায়। আবার দেখা যাচ্ছে, সেই বোলারই ১০ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছে। আমি আসলে সেই দিনটির অপেক্ষাতে। আমি আশা করছি নিজেকে একদিন ঠিকই খুঁজে পাবো। খারাপ সময়টি চলে যাবে আশা করি।’
বোলিংয়ের ভুল ত্রুটি শুধরে নিতে কাজ শুরু করেছেন সাইফ। তিনি বলেন, ‘আমি আসলে ওয়ালশের সঙ্গে খুব বেশি কাজ করার সুযোগ পাইনি। পেস বোলারদের নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে কোচের সঙ্গে আলাপ করছি। আমি নিজের ত্রুটিগুলো সবার সামনে বলতে চাই না। কোচদের সঙ্গে আলাপ করেছি। কাজও করছি ভুলগুলো শুধরে নিতে।’