× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সম্পাদকীয় /সুচি, আপনার বিবেক কি জাগ্রত হয় না?

এক্সক্লুসিভ


২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, সোমবার

মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস জাতি নিধনের চিহ্ন মুছে দিচ্ছে মিয়ানমার। এর মধ্য দিয়ে তারা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। ২০১৭ সালের আগস্টের শেষ ভাগ থেকে রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ এক সহিংসতা শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তারা হত্যা করে রোহিঙ্গাদের। পুড়িয়ে দেয় গ্রামের পর গ্রাম। এসবের মাধ্যমে তারা জোর করে সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য করে। এরই মধ্যে স্যাটেলাইটে ধারণ করা সেখানকার ছবি প্রকাশ করেছে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এতে দেখা যায়, মিয়ানমার তাদের অপরাধ ঢেকে দিচ্ছে আগুনে ভস্মীভূত গ্রামগুলোতে বুলডোজার চালিয়ে।
ছবিতে দেখা যায়, ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ৩৬২টি গ্রামের মধ্যে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে কমপক্ষে ৫৫টি গ্রামের সব বসতি এবং তাদের ‘ভেজিটেশন’ বা সবজির ক্ষেত। এসব গ্রাম সেনাবাহিনীর টার্গেটে পরিণত হয়েছিল। ছবিতে দেখা যায়, আরো কমপক্ষে ১০টি গ্রামে কয়েক শত বসতি ছিল। সেগুলো অগ্নিসংযোগের ফলে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত। সেসব গ্রাম এখন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে সমান করে দেয়া হয়েছে।
বুলডোজার ও ‘ব্যাকহু’ (যে মেশিন দিয়ে ময়লা সরিয়ে নেয়া হয়) ব্যবহার করে অপরাধের স্থানগুলো পরিষ্কার করে ফেলা হচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাহসী সাংবাদিকরা সম্প্রতি একটি তথ্য ফাঁস করেছেন। তাতে দেখা গেছে, একটি গ্রামের ১০ জন অধিবাসীকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের দেহকে অল্প গভীর গর্তে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছিলেন জেলে, দোকানি, দু’জন টিনেজ ছাত্র ও একজন ধর্মীয় নেতা। এমন অভিশপ্ত অঞ্চলজুড়ে এমন আরো কত অগভীর গণকবর ছড়িয়ে আছে? এখানে উল্লেখ্য, বিধ্বস্ত অঞ্চল পরিদর্শনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক বা বিদেশি সাংবাদিকদের অনুমতি দেয় নি মিয়ানমার। তাই সেনাবাহিনীকে তার কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহিতার অধীনে আনার জন্য গুরুতরভাবে প্রয়োজন ফরেনসিক পরীক্ষা।
পৃথিবীর ওপর থেকে গ্রামগুলো মুছে দেয়া ইতিহাসের ও স্মৃতির প্রতি এক অপমান। এ থেকে মনে হয়, অপরাধীরা ভেবেছে তারা দায়মুক্ত। কি ভয়াবহতার শিকার হয়ে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। এর আগে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে যেকোনো নৃশংসতার জন্য নিজেদের দায় থেকে মুক্ত ঘোষণা করেছে সেনাবাহিনী। এসব বিষয়ে সরকারের কোনো কোনো মহল ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তারা বলেছেন, পুনর্গঠনের জন্য বুলডোজার ব্যবহার করা হয়েছে। তবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর দীর্ঘ যে নিষ্পেষণের ইতিহাস আছে তার প্রেক্ষিতে তাদের এ দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সংশয় রয়েছে। উল্টো জেনারেলরা প্রমাণকে তাড়াতাড়ি মুছে দেয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করছেন, যাতে তাদের বিরুদ্ধে মানবতার অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে কোনো বিচার হতে না পারে কোনোদিন।
আরো একবার বেদনার সঙ্গে আমাদেরকে অবশ্যই একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে হচ্ছে। তা হলো- শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের চ্যাম্পিয়ন অং সান সুচি আপনি এখন কোথায়? আপনি না আপনার দেশের মূল নেত্রী? আপনার দেশের ক্ষমতা এখনো জেনারেলদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তা সত্ত্বেও আপনার বিবেক জাগ্রত হয় না? আপনি এই বিবেকের কথা ২০১২ সালের ১৬ই জুন নোবেল পুরস্কার নেয়ার সময় উচ্চারণ করেছিলেন। সেখানে আপনি ঘোষণা দিয়েছিলেন- ‘আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত এমন একটি পৃথিবী সৃষ্টি করা যা হবে বাস্তুচ্যুত, গৃহহীন ও নিরাশ মানুষমুক্ত। এমন একটি পৃথিবী সৃষ্টি করতে হবে যার প্রতিটি প্রান্ত হবে সত্যিকার ভয়মুক্ত আশ্রয়স্থল, যেখানে অধিবাসীরা স্বাধীনভাবে ও শান্তিতে বসবাস করার সক্ষমতা রাখবে’। মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা শান্তিতে নেই। তাদের প্রকৃত আশ্রয়স্থল বলতে যা অবশিষ্ট ছিল তা ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে বুলডোজার চালিয়ে। এখনো এই ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টাকে থামানো যেতে পারে। আর তা থামাতে পারেন একমাত্র অং সান সুচিই। রাখাইনের উত্তরাঞ্চলকে কাতিন ফরেস্ট, বিবি ইয়ার ও সেব্রেনিৎসার পাশাপাশি ইতিহাসে ঠাঁই দিতে চান না কেউই।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর