রাজধানীতে এক ঠিকাদারকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল সকাল পৌনে ৮টার দিকে বনানী থানাধীন মহাখালী দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ (বড় মসজিদ) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ঠিকাদারের নাম নাসির কাজী (৪৫)। তিনি ওই মসজিদের ঠিকাদারির কাজ করছিলেন। ঘটনার পর পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। তার শরীরে ৮-৯টি গুলির দাগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বনানী থানায় গতকালই একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত ঠিকাদার নাসির কাজী পরিবার পরিজন নিয়ে দীর্ঘদিন রাজধানীর দক্ষিণখানের ৪ নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা রোডের ১৪২ নং বাড়িতে বাস করছিলেন।
তিনি শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার মাসুরাখালী গ্রামের মৃত আবদুর রহমানের ছেলে। এদিকে নিহতের স্বজনদের দাবি, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি গোসাইরহাট উপজেলার নিদুলপুর ইউনিয়নের খালেক চেয়ারম্যান হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। ওই মামলায় ১৪ মাস জেলও খেটেছেন তিনি। ওই ঘটনার জের ধরেও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।
মহাখালী থানার এসআই আহসান হাবিব বলেন, মহাখালীর দক্ষিণপাড়া বড় মসজিদের ঠিকাদারি কাজ করছিলেন নাসির কাজী। গতকাল কাজ পরিদর্শনে সেখানে গেলে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, নিহতের বুকে ২টি, পেটে ২টি ও রানে ১টি সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মোট ৯টি গুলির ক্ষত পাওয়া গেছে। তবে কি কারণে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে পুলিশ তা জানতে পারেনি। এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যক্ষদর্শী কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি বলেও তিনি জানান। শ্রমিকরা ঘটনাস্থলে আসার আগেই দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে পালিয়ে গেছে বলে তার ধারণা। তিনি বলেন, তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। নিহত নাসির কাজীর ভাই আল ইমরান বলেন, বেশকিছু দিন ধরেই ওই মসজিদের কাজ চলছিলো। আগের দিন পৃষ্ঠা ১৭ কলাম ৪
ভাই নাসির কাজী তাকে জানান, মসজিদের টাইলস্ লাগানোর কাজ চলছে। আর একদিন হলেই শেষ হয়ে যাবে। তাই রোববার তাকেও যেতে বলেন। তিনি বলেন, ভাইয়ের কথামতো গতকাল রোববার ৮টার দিকে সেখানে যাই। গিয়ে দেখি লোকজনের জটলা। পরে জটলা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখি তার ভাইয়ের লাশ পড়ে আছে। তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই মসজিদ কমিটির লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। তিনি বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার ভাইয়ের শরীরে মোট ৮টি গুলির দাগ রয়েছে। আল ইমরান আরো বলেন, তার ভাই প্রতিদিনই মসজিদের কাজ পরিদর্শনে যেতেন। প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি ঠিকাদারির কাজের সঙ্গে যুক্ত। তারও পাঁচ বছর আগে থেকে তিনি ঢাকায় বসবাস করেন বলে ইমরান জানান। নিহত নাসিরের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
এদিকে কী কারণে বা কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে নিহতের স্বজনদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের গ্রামের বাড়িতে ২০০৪ সালে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিএম খালেক খুন হন। ওই হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন নাসির কাজী। ওই মামলায় নাসিরকে ১৪ মাস জেলও খাটতে হয়। জেল থেকে বের হওয়ার প্রথমদিকে তাকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দেয়া হতো। নিহতের ছোট ভাই মামুন কাজী জানান, চেয়ারম্যান হত্যা মামলায় জেল খাটার পর আমার ভাই ঢাকায় ভালোই দিন কাটাচ্ছিলেন। সমপ্রতি চেয়ারম্যানের স্বজনরা আমার ভাইকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। এ ব্যাপারে থানায় জিডি করার প্রস্তুতি নেয়া হয় কিন্তু জিডি করার আগেই আমার ভাইকে মেরে ফেলা হলো। ‘হুমকির বিষয়টি ভাই তার স্ত্রীর কাছে জানিয়ে গেছেন’ বলে দাবি করেন নাসিরের ভাইরা জসিম। তিনি বলেন, সমপ্রতি কারা কারা আমার ভাইরা ভাইকে হুমকি দিয়েছিল, সে তথ্য আমার শালিকার (নাসিরের স্ত্রী) কাছে আছে। তবে নিহতের স্ত্রী সেলিনা আক্তার এ ব্যাপারে কোনো কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, এখন আর তাদের কথা বলে কী লাভ? তারা অনেক টাকা-পয়সার মালিক। তাদের সঙ্গে আমরা পারবো না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এ হত্যার বিচার কি প্রধানমন্ত্রী করবেন? আমরা গরিব, আমাদের দিকে কি কেউ তাকাবেন?’ পরিবারের স্বজনরা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় গতকালই একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বনানী থানা সূত্রে জানা গেছে, নিহতের স্ত্রী সেলিনা আক্তার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।