বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক দরিদ্রতা নিরসনে কাঠামোগত পরিবর্তন করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক উন্নতি হলে, সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে বাণিজ্য স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। সামষ্টিকভাবে গরিবদেরকে সম্পদের মালিকানায় অংশীদার বানাতে হবে। এছাড়া সামগ্রিক উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তাসহ কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকহারে বাড়াতে হবে এবং বাস্তবায়নের চেষ্টা থাকতে হবে। গতকাল বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘চ্যালেঞ্জিং ইনজাস্টিস ইন সাউথ এশিয়া, অ্যা ওয়ার্ক প্রোগ্রাম ফর ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
আলোচনায় বক্তব্য রাখেন অর্থনীতিবিদ ড. আতিকুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সেলিম রায়হান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মঞ্জুর আহমেদ, বিআইডিএস সিনিয়র ফেলো ড. নাজনিন আহমেদ ও সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।
রেহমান সোবহান বলেন, বাণিজ্য বাড়াতে এশিয়ান হাইওয়ে ও এশিয়ান রেলওয়ে খুবই ভালো ধারণা ছিল। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, ভ্যালু চেইন সৃষ্টি ও আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা গেলে বাণিজ্য বাড়বেই।
তিনি বলেন, কার্যকর ভ্যালু চেইন গড়ে তুলতে হলে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে কাঠামোগত সমতা আনতে হবে। মূলত রাজনৈতিক কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো পরস্পরের কাছে আসতে পারছে না। অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারকে মাথায় রেখে আমরা কোনো উদ্যোগ নিলে তাতে দেখা যায়, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ভেটো দেয়। বাণিজ্য, যোগাযোগসহ নানা প্রস্তাবে এভাবেই নিরাপত্তার প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। তাছাড়া আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেশীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের স্বার্থের বিষয়টি দেশগুলোকে মাথায় রাখতে হচ্ছে। রেহমান সোবহান বলেন, আঞ্চলিক বাণিজ্যে নানা ধরনের বাধা রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো গেলে ও আইনগত সমস্যাগুলো দূর করা গেলে এসব বাধা অনেকটা কমে আসবে। বিশেষ করে নীতি প্রণয়ন, নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্য বাধা দূর ইত্যাদি বিষয়ে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে আয় বৈষম্য অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন খাতে নেয়া নীতিমালাগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এটাই এখন দেশের চিত্র।
সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামো সুবিধা ঠিকমতো না থাকলে ৭৫ ভাগ বাণিজ্য সম্ভাবনা কাজে লাগানো যায় না। এজন্য নীতি, নিয়ন্ত্রণ ও বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, মাথাপিছু আয়, জিডিপি সমান হওয়া সত্ত্বেও ভিয়েতনামের রপ্তানি বাংলাদেশের সাতগুণ বেশি। এটা শুধু দক্ষতা ও সুশাসনের কারণে হয়েছে।
বক্তারা বলেন, আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে হলে এখন দক্ষতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়াতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বাণিজ্য বাড়াতে বাজারকে উৎসাহিত করতে হবে। সেবা বাণিজ্য বাড়াতে হবে। এসব করতে হলে অশুল্ক বাধা দূর করতে হবে। এসব করতে দরকার গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা।