× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

রোহিঙ্গা সংকট, দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগই ভরসা

শেষের পাতা

কূটনৈতিক রিপোর্টার
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, সোমবার

আগস্টে শুরু হওয়া আচমকা রোহিঙ্গা ঢলের ৬ মাস পূর্ণ হয়েছে গতকাল। কিন্তু এখনো থামেনি মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত লোকজনের  বাংলাদেশে আসা। স্থানীয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, গতকালও একদল বাস্তুচ্যুত নারী-পুরুষ ও শিশু সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। গত ১০ দিনে এসেছে ১ হাজার ২৩ জন। আর গত ২৫শে আগস্টের পর রাখাইনের মৃত্যুকূপ থেকে প্রাণে বাঁচতে এখানে আশ্রয় নিয়েছে ৬ লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা। আগের বছর এসেছে প্রায় ৮৭ হাজার। এক যুগ আগে থেকে বাংলাদেশে অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকা ৩-৪ লাখ রোহিঙ্গা মিলে ১১ লাখ বাড়তি জনসংখ্যার বোঝা বইতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। তবে এবারে রাখাইনে রোহিঙ্গা সমপ্রদায়কে ‘জাতিগতভাবে নির্মূল চেষ্টা’য় তাদের ওপর বর্মী বাহিনী বাছ-বিচারহীনভাবে যে নির্যাতন, গণহত্যা ও গণধর্ষণ চালিয়েছে তাতে বিশ্বব্যাপী নিন্দা ও সমালোচনার মুখে পড়েছে ‘গণতান্ত্রিক’ মিয়ানমারের সুচি সরকার।
অবশ্য আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের চাপ হালকা করতে চটজলদি গত নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে উপনীত হয় মিয়ানমার। চুক্তি মতে, ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর থেকে আসা (নবাগত) মোট ৭ লাখ ৭৫ হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। চুক্তির শর্ত মতে পূর্ণ নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বাস্তুচ্যুতদের তাদের নিজ ভূমে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করবে মিয়ানমার। তবে তার আগে স্বেচ্ছায় ফিরতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে। যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বাংলাদেশ ১৬ শ’ পরিবারের প্রায় ৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা হস্তান্তর করেছে। ঢাকায় চলতি মাসে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চাও সোয়ের সঙ্গে এক বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রত্যাবাসনের প্রাথমিক তালিকা হস্তান্তর করেন। ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান চায় বাংলাদেশ। এতে চীনের পরামর্শে সই হওয়া প্রত্যাবাসন বিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতেই ভরসা রাখতে হচ্ছে। অবশ্য দ্বিপক্ষীয়ভাবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার আলোচনা এগিয়ে চললেও রাখাইন এখনো প্রত্যাবাসন উপযোগী নয় বলে মনে করে বিশ্ব সমপ্রদায়। এ নিয়ে বাংলাদেশেরও উদ্বেগ রয়েছে। তবে দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে কোনো সমাধানই টেকসই হবে না বলে মনে করে ঢাকা। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ গোটা পশ্চিমা দুনিয়া মনে করে টেকসই সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আরো চাপ বাড়াতে হবে। গণহত্যার জন্য দায়ী বর্মী জেনারেলদের বিরুদ্ধে দেশে দেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করাসহ তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতনসহ দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আজ ব্রাসেলসে এক বৈঠকে বসছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। মিয়ানমারের জেনারেলদের বিরুদ্ধে ‘নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা’ নেয়ার বিষয়েই সেখানে আলোচনা হবে বলে আভাস মিলেছে। ইইউ’র পররাষ্ট্র বিষয়ক কাউন্সিলের ওই ২৮ রাষ্ট্রের ইউরোপীয় জোটের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তাবিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি ফেদেরিকা মোঘেরিনি সভাপতিত্ব করবেন। ইইউ কাউন্সিলের ওই সভা থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইইউ’র ‘খুবই কড়া বার্তা’ আশা করছে বাংলাদেশ। গত সপ্তাহে মিয়ানমার সফর করেছেন ইইউ পার্লামেন্টের সদস্যরা। সেখানে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বিচারে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন জরুরি বলে মত দিয়েছেন সফরকারীরা। তারা উদ্দীপনা ও তিরস্কারভিত্তিক ইইউ-ইয়াংগুন সম্পর্কের  নতুন নীতি গ্রহণেরও তাগিদ দিয়েছেন। কাছাকাছি সময়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরকারী বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার সফরের পরপরই বৃটেনের শতাধিক সংসদ সদস্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের মুখোমুখি করতে বৃটেনের এখনই উদ্যোগী হতে খোলা চিঠি দিয়ে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিরাপত্তা পরিষদে চীন ও রাশিয়ার ইতিবাচক ভূমিকা আশা করেছেন বৃটিশ এমপিরা। উল্লেখ্য, গতকাল ঢাকায় নবনিযুক্ত মিয়ানমারের দূতের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর বৈঠকেও বিদ্যমান রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরের ওই বৈঠক শেষে মিয়ানমার দূত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নতকরণের মধ্য দিয়ে সব সমস্যার সমাধানের আশা প্রকাশ করেছেন। মিয়ানমারে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরীকেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাল আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানিয়েছেন। তার বিদায় অনুষ্ঠানেও মন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের তাগিদ দিয়েছেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর