সারাবিশ্বে প্রতিবছর মানুষ মৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে হৃদরোগ। হৃদরোগের কিছু পূর্ব লক্ষণ আক্রান্তদের মধ্যে আগে থেকে পরিলক্ষিত হলেও অনেক নারীদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হয় না। আর সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায়, আক্রান্ত হওয়া নারীদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ নারীদের হৃদরোগ সংক্রান্ত লক্ষণগুলো সনাক্ত করা যায় না। এমনকি তারা চিকিৎসকের কাছে গেলেও অর্ধেকের বেশি চিকিৎসকই নিশ্চিত করতে পারেন না যে, তাদের রোগ হার্ট-সংক্রান্ত।
ইয়েল স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষকরা হৃদরোগে আক্রান্ত প্রায় তিন হাজার রোগীর সাক্ষাৎকার নেন। তাদের মধ্যে ছিলেন দুই তৃতীয়াংশ নারী যাদের বয়স ৫৫ বছরের কম। তাদের নিকট প্রশ্ন ছিল যে তারা রোগের কোনো লক্ষণ উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন কিনা? এবং হাসপাতালে সেবা পাবার আগে হার্ট এট্যাক সম্বন্ধে কোন ধারণা পেয়েছিলেন কিনা? গবেষণার ফলাফলে লক্ষণগুলোর ক্ষেত্রে লিঙ্গগত কিছু পার্থক্য দেখা গেছে।
হৃদরোগের ক্ষেত্রে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ সাধারণত বুকে ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ অনুভব করে।
তবে আপাতদৃষ্টিতে নারীরা বদহজম, বমি বমি ভাব, পাকস্থলীতে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, নিঃশ্বাসের দুর্বলতা, চোয়াল, ঘাড় এবং কাঁধে ব্যথার মতো কিছু অসংশ্লিষ্ট ব্যথা অনুভব করে। প্রায় ৬২ শতাংশ নারীর মধ্যে তিনটি বা তার বেশি লক্ষণ দেখা যায় এবং পুরুষের ক্ষেত্রে যা ৫৫ শতাংশ। আর এইসব লক্ষণগুলো চিকিৎসকদেরকে রোগ নির্ণয় করতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।
গবেষণায় আরো দেখা যায়, নারীরা পুরুষদের তুলনায় হাসপাতালে যেতেও বেশি সময় লাগায় যেহেতু তাদের শরীরে সঠিক লক্ষণ আগে থেকে বোঝা যায় না। সংকটজনক লক্ষণগুলো দেখা দিলে নারীরা গড়ে ৩ ঘন্টা ২০ মিনিটের মধ্যে এবং পুরুষরা গড়ে ২ ঘন্টা ৪০ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছে যান।
বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী লক্ষণগুলো নারী-পুরুষ সবার ক্ষেত্রেই হতে পারে, কিন্তু এই সমস্যাটি সাধারণত নারীদের মধ্যে বেশি প্রচলিত। গবেষণাটি দেখিয়েছে, এই ধরনের লক্ষণ নিয়ে ২২ শতাংশ পুরুষ হাসপাতালে ভর্তির আগে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে ৩৬ শতাংশকে ভুল চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে।
হৃদরোগের লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা চিকিৎসক এবং সাধারণ মানুষদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা এই গবেষণায় পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে উঠতি প্রজন্মের জন্য এটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এসব সতর্কীকরণ লক্ষণগুলো তাদেরকে দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিতে সহায়তা করবে।