× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

পর্ব-১ /উভয় সংকটে সাদ হারিরি অরিয়ের দাহেল

বিশ্বজমিন


(৬ বছর আগে) মার্চ ১০, ২০১৮, শনিবার, ৯:১৮ পূর্বাহ্ন

ফের রিয়াদ সফরে গেলেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি। গত নভেম্বরে রিয়াদ থেকেই তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে ‘পদত্যাগের’ ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে তা বাতিল করা হয়। হারিরিকে এক রকম জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করেছিল সৌদি আরব। কিন্তু এখন অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, সৌদি আরবের সঙ্গে লেবানিজ প্রধানমন্ত্রীর দহরম মহরম ফের তুঙ্গে। বেশিরভাগ বিশ্লেষক মনে করেন, সাদ হারিরিকে পদত্যাগে বাধ্য করে বড় ধরনের কৌশলগত ভুল করেছিলেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)। তাহলে কি সৌদি আরব ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে? তিক্ত অধ্যায় ভুলে হারিরিও কি সৌদি আরবের ব্যাপারে স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন?
আগে পেছন ফিরে দেখা যাক কী হয়েছিল। গত ৩রা নভেম্বর সাদ হারিরিকে ‘জরুরি ভিত্তিতে’ রিয়াদ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
ওই সফরে বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা ছিল তার। কিন্তু সাক্ষাৎ তো হয়ইনি, উলটো পরদিন সৌদি টেলিভিশনে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফার ঘোষণা দেন হারিরি। নিজের বক্তৃতায় তিনি ইরান ও হিজবুল্লাহর কড়া নিন্দা জানান। অভিযোগ করেন, হিজবুল্লাহ তাকে ‘হত্যার পরিকল্পনা’ করছে।
হারিরির পদত্যাগের ঘোষণা নিয়ে লেবাননে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়। কারণ, বিষয়টি ছিল আকস্মিক। দ্বিতীয়ত, হিজবুল্লাহ তার সরকারের জোটগত মিত্র। ২০১৬ সালের অক্টোবরে হিজবুল্লাহ সমর্থিত দলসমূহ সহ দেশের সব রাজনৈতিক দল একমত হয়ে সাদ হারিরিকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী বানায়। প্রেসিডেন্ট হন মিশেল আয়োন। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মিশেল আয়োন হিজবুল্লাহর মিত্র।
পরবর্তীতে হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠজন, পশ্চিমা কূটনৈতিক সূত্র ও সৌদি সূত্র থেকে জানা যায়, হারিরিকে জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। এমনকি তাকে একপ্রকার বন্দি অবস্থায় রাখা হয় সৌদি আরবে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, হারিরিকে পদত্যাগে বাধ্য করে সৌদি আরবের উদ্দেশ্য ছিল লেবাননের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা। যাতে করে লেবাননের সুন্নি গোষ্ঠীগুলো শিয়া ও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে বাগাড়ম্বর বৃদ্ধি করে। এসবের ফলে সরকারের পতন ঘটিয়ে লেবাননে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা ছিল মূল উদ্দেশ্য।
কিন্তু পুরো পরিকল্পনাই মাঠে মারা যায়। লেবাননের সুন্নিরা শিয়াদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেনি। বরং, সৌদি আরবের বিরুদ্ধেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সুন্নি নেতৃবৃন্দ। লেবাননের প্রায় প্রত্যেক সম্প্রদায়ই এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ হয় যে, তাদের স্বার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন ঘটিয়েছে সৌদি আরব। মোদ্দাকথা, দেশের নেতাকে একটি দেশ বন্দি করে রেখেছে, এই বিষয়টি লেবাননের কেউই মেনে নিতে পারেননি।
সৌদি আরব প্রথম দিকে আরো আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করে। দেশটি এমনকি ঘোষণা দেয়, লেবানন সৌদি আরবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এমনকি লেবানন থেকে নিজ নাগরিকদের দেশে ফেরত আসার নির্দেশ দেয় সৌদি আরব। এমন উত্তাল পরিস্থিতিতে সবার আশঙ্কা ছিল, মধ্যপ্রাচ্য বুঝি আরেকটি যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছে। প্রতিবেশী সিরিয়া ও ইরাকে এতদিন সহিংসতা থাকলেও, তার আঁচ লেবাননে আসেনি। কিন্তু তখন সবার আশঙ্কা ছিল, লেবাননের স্থিতিশীলতা বুঝি ফুরালো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফরাসি ও মার্কিন চাপে পিছু হটে সৌদি আরব। মুক্তি পান সাদ হারিরি। ফিরে যান লেবাননে। পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রীর।
কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, লেবাননের রাজনৈতিক এলিটদের প্রতি ইতিবাচক বার্তা দেয়ার চেষ্টা করছে রিয়াদ। কয়েকদিন আগে সৌদি আরব একজন দূত পাঠিয়ে সাদ হারিরিকে দেশটি সফরের আমন্ত্রণ জানায়। যেই দূতকে পাঠানো হয়েছিল তিনি হলেন নিজার আলাওলা। সৌদি আরবের লেবানন-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি তিনিই এখন দেখাশোনা করেন। নিজার আলাওলা কূটনৈতিকভাবে দক্ষ ব্যক্তি। অপরদিকে তার পূর্বসূরি থামের সাবান, যার সময়ে ওই সংকট সৃষ্টি হয়েছিল, তিনি ছিলেন খুবই আক্রমণাত্মক। নভেম্বরের ঘটনায় তার বড় ধরনের ভূমিকা ছিল। লেবানিজ ও পশ্চিমা কর্মকর্তারা মনে করেন, তার মধ্যে কূটনৈতিকসুলভ প্রজ্ঞার অভাব আছে।
সৌদি আরবের সুর নরমের আরো লক্ষণ আছে। রিয়াদ প্রথম থেকেই হিজবুল্লাহর মিত্র লেবানিজ প্রেসিডেন্ট আয়োনকে বয়কট করে আসছে। কিন্তু এবার সৌদি দূত আলাওলা প্রথমেই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আলাওলা বেশিক্ষণ লেবাননে অবস্থান করেননি। তবে তিনি প্রকাশ্যে অনেকটা আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে বলে গেছেন, লেবাননের সার্বভৌমত্বের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও স্থিতিশীলতার প্রতি সমর্থন রয়েছে সৌদি আরবের। শুধু তা-ই নয়। আলাওলা সাক্ষাৎ করেছেন পার্লামেন্টের স্পিকার নাবিহ বেরির সঙ্গে, যিনি হিজবুল্লাহর প্রধান মিত্র ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিয়া দল এএমএএল’র প্রধান। আলাওলা এমনকি বেরিকে ‘দেশের আশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতীক’ বলেও বর্ণনা করেন। এখানেই ক্ষান্তি দেননি আলাওলা। নিজের সফরে তিনি আশরাফ রিফির সঙ্গে সাক্ষাত করেননি, যাকে ভাবা হয় লেবাননে রিয়াদের সবচেয়ে কট্টরপন্থি মিত্র। গত সংকটের সময় আশরাফ রাফি সৌদি অবস্থান বজায় রেখেছিলেন। অথচ এবার তার সঙ্গেই সাক্ষাৎ করেননি সৌদি দূত।
তার মানে কি সৌদি আরব পূর্বের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে? সেক্ষেত্রে আরো প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন। গত বারের মতো, এবারও কি হারিরিকে ‘ডেকে পাঠিয়েছে’ সৌদি আরব নাকি নিয়মমাফিকভাবে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে, যেমনটি একজন সরকার প্রধানকে কোনো রাষ্ট্র জানিয়ে থাকে? আলাওলা বৈরুতে আসার পরদিনই হারিরি রিয়াদ সফরে যান। লেবাননে এক সপ্তাহ থাকার কথা ছিল আলাওলার, কিন্তু হারিরি পরদিনই সৌদি সফরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে, অগত্যা আলাওলা তাকে সঙ্গ দেন।
রিয়াদে সাদ হারিরির বর্তমান সফর নিয়ে খুব বেশিকিছু জানা যায়নি। নভেম্বরের সফরে সাদ হারিরি বিমানবন্দরে অবতরণের পরপরই রাজরক্ষীরা তার ও তার দেহরক্ষীদের মোবাইল ফোন নিয়ে নেন। কিন্তু এবার হারিরিকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন উচ্চপদস্থ সৌদি কূটনীতিকরা। পরের দিনই হারিরি সাক্ষাৎ করেন বাদশাহ সালমানের সঙ্গে। অবশ্য ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয় দুই দিন পর। তার সফর চলাকালে মিডিয়াকে অন্ধকারেই রাখা হচ্ছে। এ থেকে অবশ্য বোঝা যাচ্ছে হারিরি অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন।

(অরিয়ের দাহেল ফ্রান্সের প্যারিস-ডফাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো ও প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট-ডক্টোরাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ছিলেন। তিনি শিয়াবাদ, হিজবুল্লাহ, লেবানন ও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে বিশেষজ্ঞ। তার এই নিবন্ধ মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট লোবলগ-এ প্রকাশিত হয়েছে।)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর