সবদলের অংশগ্রহণের জন্য নতুন কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে না বলে সিইসির দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেছেন, তাহলে কী কমিশন একতরফা নির্বাচনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে? যদি তাই হয়, নির্বাচন নির্বাচন জিকিরের তো দরকার নেই। শিডিউল ঘোষণা করে পরের দিনেই ক্ষমতাসীন দলকে বিজয়ী ঘোষণা করলেই পারেন। গতকাল দুপুরে দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। রিজভী বলেন, নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দল যে অনাচার শুরু করেছে সে বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিশ্চুপ। প্রধানমন্ত্রী সরকারি খরচে হেলিকপ্টারে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন, আর কমিশন দেখেও না দেখার ভান করছে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে সব দলকে সমান সুযোগ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু সিইসির বক্তব্য ও আচরণে মনে হচ্ছে না তিনি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আগ্রহী। তিনি মালিক পক্ষের অনুগত থেকে স্বার্থরক্ষা করতেই যেন উঠেপড়ে লেগেছেন।
রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি ও নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি পূরণ হলেই নির্বাচনের মাঠ সমতল হবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ও সরকার সেদিকে কোনো দৃষ্টি দিচ্ছে না। এখন সিইসি যদি শেখ হাসিনার দুর্বিনীত দুঃশাসনকে প্রলম্বিত করতে ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে গেলে দেশে চরম অরাজকতা তৈরি হবে। আর এজন্য দায়ী থাকবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির অনুমতি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে ‘বেসামাল মিথ্যাবাদী’ আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির মুখপাত্র। রিজভী বলেন, তিনি (কাদের) বলেছেনÑ বিএনপি বেআইনিভাবে সমাবেশ করেছে। এত বড় টাটকা মিথ্যা কথা তিনি কীভাবে বললেন? তাকে বেসামাল মিথ্যাবাদী ছাড়া আর কী বা বলতে পারি? একজন রাজনীতিবিদ যদি এভাবে অবলীলায় মিথ্যা কথা বলেন, তাহলে দেশের জনগণ ও ও শিক্ষার্থীরা কী জানবে যে রাজনীতিবিদরা অনর্গল মিথ্যা কথা বলেন, সত্যের অপলাপ ঘটান। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনে আমাদের অনুমতি দিয়েছিল পুলিশ। আমরা যে কর্মসূচির অনুমতি চেয়ে পুলিশকে চিঠি দিয়েছি, তার রিসিভড কপি আমাদের কাছে আছে। পুলিশ কমিশনার আমাদের মহাসচিবকে মৌখিকভাবে অনুমতির কথা বলেছেন। আমরা তো অবস্থান কর্মসূচি আমাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে করতে চেয়েছিলাম। পুলিশই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে করতে বলেছে। আমরা তাদের কথা অনুযায়ী প্রেস ক্লাবের সামনে করেছি। রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে দেড় মাসে সারা দেশে প্রায় ছয় হাজারের মতো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বলেন, বিরোধী নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে নেতা-কর্মীদের না পেলে স্ত্রী-সন্তান, পিতা-মাতা-ভাই-বোনকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। থানায় নিয়ে গিয়ে তাদের উপর চালানো হচ্ছে নির্যাতন। বিএনপির আটক নেতাকর্মীদের জামিন পাওয়ার যে অধিকার সেটিও সরকার নিম্ন আদালতকে কব্জা করে বন্ধ করে রেখেছে। আদালতের দুয়ার যেন বিএনপি ও বিরোধী দল ও মতের মানুষদের জন্য বন্ধ। জেলখানাগুলো এখন নাৎসিদের গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি থেকে টেনেহিঁচড়ে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ সময় বৃহস্পতিবারের অবস্থান কর্মসূচি থেকে ‘নির্মমভাবে টেনে-হেঁচড়ে’ গ্রেপ্তার করা ছাত্রদল নেতা মিজানুর রহমান রাজকে রিমান্ডে নেয়ার নিন্দাও জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
(কাফি)