× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হাওর কন্যা লক্ষ্মী বাঁওড়

বাংলারজমিন

মখলিছ মিয়া, বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) থেকে
১৩ মার্চ ২০১৮, মঙ্গলবার

ভূ-গঠনিক অবনমন ভূমির রূপ-বৈচিত্র্যের ধারক নদ-নদী, হাওর-বাঁওড় ও জলাভূমি অধ্যুষিত অঞ্চল বানিয়াচং। বর্ষার ছয় মাস হাওরে রাশি রাশি জলের উচ্ছ্বলতা আর শুষ্ক মৌসুমে নয়ন জুড়ানো দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। এই রূপ-বৈচিত্র্যের সুবর্ণভূমিকে আরো লীলাময় করে তুলেছে জলজবন ‘হাওর কন্যা লক্ষ্মী বাঁওড়’। সৃষ্টি করেছে এক মোহিনী পরিবেশ। পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং থেকে প্রায় ৬/৭ কিলোমিটার দূরবর্তী উত্তরের হাওরে এ জলজবনের অবস্থান। চারদিকে বিস্তীর্ণ হাওর। ধারণা করা হয় লক্ষ্মী নামক বাঁওড় (নদী নয়, নদীর মতো ৪/৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের জলা ভূমি) পলি মাটি জমে চর গজিয়ে উঠে এবং প্রাকৃতিকভাবেই ৫শ’ থেকে ৬শ’ বছর আগে এ বন গড়ে উঠে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই বাঁওড়ের নামেই এই বন ও হাওরের নামকরণ হয়েছে।
লক্ষ্মী বাঁওড় জলজবনটি মূলত একটি সমন্বিত সোয়াম্প ও রিড ফরেস্ট। নল, খাগড়া, তৃণ গুল্ম লতা ও বিভিন্ন প্রজাতির ফার্নে গড়ে উঠা বনকে ফরেস্ট এবং হিজল, করচ, বরুণসহ বিভিন্ন উভজীবী প্রজাতির উদ্ভিদ বনকে সোয়াম্প ফরেস্ট বলা হয়ে থাকে। এ ছাড়া হাওরে ছোট ছোট হিজল-করচ বৃক্ষবনকে ‘বাগ’ বলা হয়। যে বনভূমিতে জোয়ার-ভাটার পানি উঠানামা করে এবং হাওরে ছয় মাস শুকনো ও বাকি ছয় মাস জলমগ্ন থাকে এ জাতীয় বনই সোয়াম্প ও রিড ফরেস্ট হিসেবে স্বীকৃত। বৈচিত্র্যময় এ জলারণ্যকে প্রাকৃতিক কন্যা ও হাওরাঞ্চলে হাওর কন্যা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী চার লাখ ৪০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সারা বিশ্বে এ জাতীয় ২৬টি সোয়াম্প ও রিড ফরেস্ট রয়েছে। এ তালিকায় বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট তালিকাভুক্ত হলেও হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার লক্ষ্মী বাঁওড় সোয়াম্প ও রিড ফরেস্ট অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বানিয়াচং সদরের সৈদরটুলা (সাতমহল্লা) ছান্দের মালিকানাধীন প্রায় ৩শ’ একর আয়তন বিশিষ্ট এই বনের ভেতর পাঁচ একরের নিচে ২৬টি বিল ও ডোবা রয়েছে। বর্ষার পানি উঠার পর এ বন মাছের অভয়াশ্রম এবং শীতকালে ও অন্যান্য মৌসুমেও নিরাপদ অনুকূল পরিবেশে হয়ে উঠে পাখির অভয়াশ্রম। বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে ভিন্ন ভিন্ন রূপ বৈচিত্র্যে আবির্ভূত হয়ে এ রূপসী বন। শুষ্ক মৌসুমে (শীত ও বসন্তকালে) এ রূপসী ‘হাওর কন্যার’ চারদিকের দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠে সবুজ ধান গাছের কচি ডগায় মৃদু হাওয়ায় দুলে উঠা ঢেউয়ের খেলায় জুড়িয়ে যায় মন। ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখির উড়াউড়ি ও কিচিরমিচির কল-কাকলিতে প্রাণবন্ত হয়ে উঠে সৌম্য এ বন। দেখা মিলে দেশজ প্রজাতির বিরল পাখি ডাহুক, কালীম, শিকারী কুড়া, সবুজ তেওড়া। শামুক ভাঙ্গা, গুটি ঈগল, কুড়া ঈগল, কালো বক, লাল বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির বক। পানকৌড়ি, ভুবন চিল, শঙ্খ চিল ও গাংচিল। মাঝে মধ্যে রাজ শকুন ও বাংলা শকুনেরও দেখা মেলে।
এ ছাড়া নানা প্রজাতির উভচর প্রাণি গিরগিটি, সরীসৃপ, সাপ ও কীটপতঙ্গের বিচরণ রয়েছে। গ্রীষ্মকালে (বৈশাখ মাসে) সোনালী হয়ে উঠে ধানসিঁড়ি ফসলের মাঠ। পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধে ও নবান্নের কলতানে মুখরিত হয়ে উঠে মাঠ-ঘাট তেপান্তর। বর্ষায় হাওরে থৈ থৈ জলকেলির সঙ্গে সবুজ বনের মিতালিতে রূপ বৈচিত্র্যে নতুন মাত্রা যোগ করে। ৩/৪ মিটার পানিতে ডুবে থাকা পুরো বনের ছোট বৃক্ষের পুরো অংশ ও নল, খাগড়াসহ অপেক্ষাকৃত কম উচ্চতার বৃক্ষের অর্ধেক অংশ ডুবে থাকা স্বচ্ছ পানিতে দৃশ্যমান হয়ে এ জলারণ্য অপূর্ব রূপ ধারণ করে। অপরূপে বিমোহিত করা নয়নাভিরাম এ জলারণ্য পরিদর্শনে গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা কালেই সৌন্দর্য পিপাসু ও প্রকৃতি বিলাসী দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন ঘটে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর