২১টি দেশের মোট ১১২৩ জন দেশি-বিদেশির অংশগ্রহণে শেষ হলো অনুশীলন শান্তিদূত-৪। গতকাল এর সমাপনী অনুষ্ঠান রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট)-এ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুশীলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন এবং অনুশীলনে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকসহ দেশ ও বিদেশের উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মনোজ্ঞ প্রদর্শনী আয়োজনের মাধ্যমে দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, দু’সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠিত অনুশীলন কার্যক্রমে অংশ নেয়া দেশসমূহ হলো- বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ফিজি, ঘানা, গ্রেট বৃটেন, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, কিরগিজস্তান, মালয়েশিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, নিউজিল্যান্ড, পেরু, ফিলিপাইন, রুয়ান্ডা, সেনেগাল, সিয়েরালিওন, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, ইউএসএ এবং ভিয়েতনাম। আইএসপিআর জানিয়েছে, ইউএস প্যাসিফিক কমান্ড দ্বারা পরিচালিত মাল্টি ন্যাশনাল পিসকিপিং ইভেন্ট যা প্রতি বছর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে পরিচালিত হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ই মার্চ পর্যন্ত রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট)-এ অনুষ্ঠিত হয় ‘অনুশীলন শান্তিদূত-৪’।
অনুশীলনটি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ওপর পরিচালিত একটি বহুজাতিক অনুশীলন। যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ইউএস প্যাসিফিক কমান্ড (ইউএসপ্যাকম) কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত। গ্লোবাল পিস অপারেশনস্ ইনিশিয়েটিভ (জিপিওআই)-এর পৃষ্ঠপোষকতায় শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর পরিচালিত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত শান্তিরক্ষীদের কৌশলগত এবং কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি করাই শান্তিদূত-৪ এর উদ্দেশ্য। অনুশীলন শান্তিদূত-৪ তিনটি ভাগে একই সময়ে পরিচালিত হয়েছে, ফিল্ড ট্রেনিং ইভেন্ট (এফটিই), স্টাফ ট্রেনিং ইভেন্ট (এসটিই) এবং ক্রিটিক্যাল এনাবেলার ক্যাপাবিলিটি এনহান্সমেন্ট (২সিই)। অনুশীলনের অন্যতম বিষয়বস্তু হিসেবে ইউএন মিশন এলাকায় গমনপূর্ব প্রশিক্ষণ, পারস্পরিক যোগাযোগ ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মূল বিষয়গুলোর ওপর ধারণা প্রদান করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের মধ্যে আঞ্চলিক বন্ধন, নিরাপত্তা ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে দক্ষতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। ফিল্ড ট্রেনিং ইভেন্ট প্রশিক্ষণে বিভিন্ন ধরনের লেইন ট্রেনিং-এর পাশাপাশি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাস্তবধর্মী পরিস্থিতির আলোকে প্রশিক্ষণ প্রদান হয়েছে। উক্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অবলোকন করার জন্য ইউএন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিরা সার্বক্ষণিকভাবে উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী শীর্ষ দেশসমূহের মধ্যে অন্যতম। বিপসট-এর মাধ্যমে প্রদানকৃত উন্নত প্রশিক্ষণ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ভূমিকা পালনে অন্যতম সহায়ক বলে প্রতীয়মান হয়। অনুশীলন শান্তিদূত-৪ এর মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও পারস্পরিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক গুণ বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা যায়।