গুণী সংগীতশিল্পী সামিনা চৌধুরী। ধারাবাহিকভাবে এরই মধ্যে অনেক শ্রোতাপ্রিয় গান তিনি উপহার দিয়েছেন। বিশেষ করে মানসম্পন্ন গানে সামিনা চৌধুরীর তুলনা কেবল তিনি নিজে। চলচ্চিত্রে অনেক কালজয়ী গান তিনি উপহার দিয়েছেন, যা এখনও মানুষের মুখে মুখে। পাশাপাশি অডিও অ্যালবামের গানেও সফল তিনি। অ্যালবামে তার গাওয়া অনেক গানই এখনও একই রকম জনপ্রিয়। প্লেব্যাক ও অ্যালবামের বাইরে সামিনা ব্যস্ত সময় পার করে আসছেন স্টেজে। দেশে-বিদেশে নিয়মিত শো করে যাচ্ছেন দীর্ঘ সময় ধরে।
তবে এতটা পথ পাড়ি দিয়েও ক্লান্ত নন তিনি। এখনও একই উদ্যম নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন এ শিল্পী। সব মিলিয়ে কেমন আছেন? দিনকাল কেমন কাটছে? সামিনা উত্তরে বলেন, বেশ ভালো আছি। তবে ইদানীং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন বেশি ঘটছে। অনেক প্রিয় মানুষেরা চলে যাচ্ছেন। সবাইকে চলে যেতে হবে। তবে কেন যেন মনে হচ্ছে প্রিয় মুখগুলো পর পর চলে যাচ্ছে। আবার বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনাও ভালো থাকতে দেয় না। এইতো কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশের বিমান বিধ্বস্ত হলো। এতগুলো প্রাণ ঝরে গেল। তাদের পরিবারের আজ কি অবস্থা। যাই হোক, সব সময় চাই সবার সঙ্গে যেন ভালো হয়। সবাই যেন ভালো থাকে। শুধু নিজে ভালো থাকলেই তো আর হলো না। এখনকার ব্যস্ততা কি নিয়ে আপনার? সামিনা বলেন, ব্যস্ততাতো গান নিয়েই। স্টেজ শো করছি। দেশে-বিদেশের শোতে অংশ নিচ্ছি। বিভিন্ন গানের রেকর্ডিং করছি। এভাবেই চলে যাচ্ছে সময়টা। ব্যস্ততা ঘুরে ফিরে গান নিয়েই। নতুন গানের কি খবর? সামিনা বলেন, নতুন বেশ কিছু গানের কাজ চলছে। সময়মতো এ গানগুলো প্রকাশ হবে। এখন আসলে তারিখ স্পষ্ট করে বলা কঠিন। কবে নাগাদ প্রকাশ হবে তা আরো পরে বলতে পারবো। আপনি এবারের চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সফলভাবে শেষ হয়েছে এ আসর। কেমন মনে হয়েছে? সামিনা বলেন, আমাদের দেশে অনেক ভালো ও মেধাবী শিল্পী রয়েছেন। এ আসরেও সেখান থেকে অনেক ভালো শিল্পী অংশ নিয়েছে। আমরা বিচারক হিসেবে চেষ্টা করেছি সঠিকভাবে মেধাবীরাই যেন বের হয়ে আসে। আবার দর্শক ভোটও ছিল। আমার মনে হয় এবার যারা বের হয়ে এসেছে তারা সামনে ভালো করবে। তবে, একটি প্রতিযোগিতায় ভালো করলেই কিন্তু সেটা সফলতা না। নিজেকে আরো উপরের দিকে নিয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে শেখার কোনো বিকল্প নেই। আমি তাই সব সময় তরুণদের বলি শেখার জন্য। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শেখা দরকার। ছোট-বড় সবার কাছ থেকে শেখা যায়। আর গানের ক্ষেত্রেতো শেখা ও রেওয়াজের কোনো বিকল্প নেই। আমি মনে করি সঠিক পথে থাকলে মেধাবীরা সামনে ভালো করবে আরও। এই সময়ে গানের অবস্থা কেমন মনে হচ্ছে আপনার কাছে? সামিনা চৌধুরী বলেন, ঐযে বললাম অনেক ভালো শিল্পী রয়েছে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। নবীনদের মধ্যে তারকাখ্যাতি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাটা বেশি। তারকাখ্যাতি রাতারাতি পাওয়া যায়। কিন্তু প্রকৃত শিল্পী হয়ে ওঠা হয় না। যারা তারকাখ্যাতি পেতে গান করবে তারা খুব দ্রুতই হারিয়ে যাবে। আর যারা ধৈর্য ধরে গান করবে তারাই টিকে থাকবে। সঙ্গে গানের প্রতি ভালোবাসাটাও থাকতে হবে। এ প্রজন্মের শিল্পীদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি? সামিনা বলেন, প্রথমত হলো এখন সবাই শিল্পী বনতে চাইছেন। কিন্তু সেটা সহজ না। সবাই যেন গান গাওয়ার চেষ্টা করছে। এটা কেন করতে হবে। এই প্রবণতাটা পুরো ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুব খারাপ। টেনেটুনে গান গাইতে পারলেই কি শিল্পী হওয়া যায়! না। এটা সাধনার ব্যাপার। সুতরাং, যাদের মেধা আছে, কণ্ঠ আছে তাদের সাধনা করতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। ভালোবাসা থেকে গান করতে হবে। তারকাখ্যাতির জন্য নয়। তাহলেই সে দীর্ঘ সময় ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতে পারবে।