× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বৈশ্বিক উষ্ণতা /ভুক্তভোগী দরিদ্ররা

অনলাইন

অনলাইন ডেস্ক
(৬ বছর আগে) মার্চ ১৩, ২০১৮, মঙ্গলবার, ৪:৫৫ পূর্বাহ্ন

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীতে বাড়ছে দুর্যোগ। বিজ্ঞানীরা বরাবর বলেন, এই দুর্যোগ যতটা প্রাকৃতিক তার চেয়ে বেশি মানবসৃষ্ট। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বিশ্বের দরিদ্র অঞ্চলগুলো। যার মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশ অন্যতম। আফ্রিকার মরু অঞ্চলে খরার মৌসুম একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। সে সময় নদী শুকিয়ে যায়। অনাহারে ভোগে গবাদিপশু। অনেক সময় খাদ্য সঙ্কটে মারাও যায়।
তবে প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে এরপর আসে বর্ষার মৌসুম। বৃষ্টিতে উর্বর হয় ভূমি। জন্মে নতুন ফসলাদি। খরার ক্ষতি পুষিয়ে নেন কৃষক। গবাদিপশু বংশবিস্তার করে। বাচ্চারা প্রতিবেলা দুধ খেতে পারে। সপ্তাহে দুই একদিন আহারে মাংস জোটে। এমনই ছিল সেখানকার সাধারণ জীবনচক্র।
তবে এখন সময় দ্রুত বদলে যাচ্ছে। অন্যান্য আফ্রিকান প্রতিবেশি অঞ্চলগুলোর মতো কেনিয়ার উত্তরাঞ্চলও দিন দিন উত্তপ্ত ও রুক্ষ হয়ে উঠছে। বিজ্ঞানীরা সেখানে বৈশ্বিক উষ্ণতার আগ্রাসন দেখতে পাচ্ছেন। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিংশ শতাব্দীতে ওই অঞ্চল যেভাবে খরতপ্ত হয়েছে, তা গত দুই হাজার বছরের মধ্যে দ্রুততম। দুই দশকে অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষ হানা দিয়েছে ৪ বার। বারবার দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হবার ফলে পৃথিবীর দরিদ্রতম ওই অঞ্চলের অধিবাসীদের অস্তিত্ব পড়েছে হুমকির মুখে। ক্ষুধা এবং দারিদ্র চরম আকার ধারণ করেছে। এমতাবস্থায়, আফ্রিকান উপমহাদেশের কেনিয়া, সোমালিয়া ও ইথিওপিয়ার সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। তিনটি দেশেই দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। কমপক্ষে এক কোটি বিশ লক্ষেরও বেশি মানুষ খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভর করে জীবনযাপন করছে। তাদেরই একজন মারিও তেদে। তার জন্ম এমন এক অঞ্চলে যেখানে অনেকেরই বয়সের হিসেব নেই। মারিও বর্তমানে বার্ধক্যে উপনীত। তিনি জানান, একটা সময়ে তার দুই শতাধিক ছাগল ছিল। ২০১১ সালের দুর্ভিক্ষে যার অধিকাংশ মারা যায়। ২০১৭'র দুর্ভিক্ষে মারা যায় আরও কিছু। বর্তমানে মাত্র ৫ টি ছাগল অবশিষ্ট আছে। যা দিয়ে তার জীবনধারণের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানো সম্ভব নয়। দুর্ভিক্ষে যে শুধু গবাদিপশুই বিলীন হয়ে গেছে এমনটা নয়। দেখা দিয়েছে ভয়াবহ পানি সঙ্কট। কেনিয়ার তুরকানা নামক অঞ্চলে পানি সংগ্রহ করতে মহিলাদের হেটে দৈনিক গড়ে সাড়ে সাত মাইল পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। প্রচ- দাবদাহে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে গাছপালা। ওই অঞ্চলের আরেক বাসিন্দা মোহাম্মদ লোশানি। দুর্ভিক্ষে নিজ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানিয়ে তিনি বলেন, ১ বছর আগেও আমার ১৫০ টি ছাগল ছিল। বর্তমানে আছে মাত্র ৩০ টি। তিনি বলেন, যদি এভাবেই দুর্ভিক্ষ আসতে থাকে, তবে আমাদের আর করার কিছুই থাকবে না।
অনাবৃষ্টি হলেই 'শেষ'
আফ্রিকান অঞ্চলে বৃষ্টির আচরণ পাল্টে গেছে। দিন দিন পুরো অঞ্চল আরও বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। আবহাওয়া পূর্বাভাষে সামনের দিনগুলোতেও ইতিবাচক কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অনাবৃষ্টির ধারা বজায় থাকলে অঞ্চলের অধিবাসীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী জেসিকা টিয়ারনি ওই অঞ্চলের ভূ-উপাদান বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, পুরো অঞ্চলটি বর্তমানে অতীতের চেয়ে দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি মানবসৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণতার ক্রমাগত বৃদ্ধিকে দায়ি করেন। কেনিয়ার জাতীয় দুর্ভিক্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান জেমস ওডর শঙ্কা ব্যক্ত করেছেন, এখন থেকে প্রতি ৫ বছর অন্তর ১ বার করে দুর্ভিক্ষ হানা দেবে। ইথিওপিয়ার অবস্থা কেনিয়ার চেয়েও করুণ। দেশটির দক্ষিন-পূর্ব অঞ্চলে তিন বছর ধরে বৃষ্টি হয় না। এর সঙ্গে রাজনৈতিক সঙ্কট যোগ হয়ে এ সময়ে মারা গেছে দুই লাখেরও বেশি মানুষ। সোমালিয়ায় ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কটে ভুগছে ২৭ লাখেরও বেশি মানুষ। এ অবস্থাকে জাতিসংঘ 'গুরুতর খাদ্যসঙ্কট' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় ২০১৭ সালে দুর্ভিক্ষ এড়াতে সক্ষম হয় দেশটি। এর আগে ২০১১ সালের দুর্ভিক্ষে দেশটিতে মারা যায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ। যার অর্ধেকই ছিল শিশু।
উত্তপ্ততা, শুষ্কতা এর ক্ষুধাকাতরতা আফ্রিকান দরিদ্র অঞ্চলসমূহকে শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখেই ঠেলে দিচ্ছে না। এ অঞ্চলে সৃষ্টি হচ্ছে সংঘাত, হানাহানি। অভাবের তাড়নায় অধিবাসীরা এক সম্প্রদায় আরেক সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আফ্রিকান অঞ্চলের একটা বড় অংশ বিরানভূমিতে পরিণত হবে।
(নিই ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত নিবন্ধের সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন নাজমুস সাদাত পারভেজ)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর