× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন /রাখাইনে উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন প্রকল্প, রোহিঙ্গাদের জন্য কি?

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৬ বছর আগে) মার্চ ১৪, ২০১৮, বুধবার, ৮:১২ পূর্বাহ্ন
বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া রাখাইনের গ্রামগুলো। উপগ্রহে ধারণকৃত ছবিতে বামপাশে পূর্বের অবস্থা। ডানপাশে বর্তমান অবস্থা।

মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতা নতুন কিছু না। দশকের পর দশক ধরে অঞ্চলটিতে চলছে জাতিগত বিবাদ। আগস্টে সেনাবাহিনী এবং বৌদ্ধ উগ্রপন্থীদের অভিযানের পর থেকে পরিস্থিতি আরও সহিংস আকার ধারণ করেছে। লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। মাইলের পর মাইল এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় মিয়ানমার সরকার একটি নতুন প্রহসনের ছবি আঁকবার চেষ্টা করছে। এর পৃষ্ঠপোষকতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির নেত্রী অং সান সুচি।
দেশটির প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের নিয়ে মিয়ানমারের রাখাইনে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। রাখাইন কেন্দ্রিক বাণিজ্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ জন্যে আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর সহায়তাও চাওয়া হচ্ছে। তবে পর্যবেক্ষকগণ বলছেন, যাদের জন্য এই উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া- সেই রোহিঙ্গারা এর দ্বারা তেমন একটা উপকৃত হবেন না। একদিকে বলা হচ্ছে উন্নয়ন প্রকল্প রোহিঙ্গাদের জন্যে; অন্যদিকে বর্তমানে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। এমনকি যখন তাদের বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেবার কথা হচ্ছে- তখনো দলে দলে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করছেন। রাখাইনের উচ্চাভিলাষী এই উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে সন্তুষ্টি পরিলক্ষিত হচ্ছে না স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যেও। এই প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে রাখাইনে সৃষ্ট সহিংসতার পেছনে ভিন্ন অজুহাত দাড় করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আর্থিক সুবিধা অপর্যাপ্ত থাকার ফলেই রাখাইনে সৃষ্টি হয়েছে সহিংসতার। মিয়ানমারের চেম্বার অব কমার্সের ভাইস চেয়ারম্যান য়ে মিং অং বলেছেন, আমাদের দৃষ্টিকোণে রাখাইনের অস্থিতিশীলতা দারিদ্র জনিত। দারিদ্রই মূল সমস্যার উৎপত্তিকারক। বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরা মিলে বিনিয়োগ করে রাখাইনের পূর্বের গৌরব ফিরিয়ে আনা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। উল্লেখ্য, এই উন্নয়ন কর্মকান্ডের দায়িত্বে রয়েছে ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজ ফর হিউম্যানিটারিয়ান আসিস্ট্যান্স, রিসেটেলেমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইন রাখাইন (ইউইএইচআরডি)। যার সভাপতি সুচি। তবে, সমালোচকরা বলছেন, সরকারের এই প্রকল্প প্রিম্যাচিউর এবং এর মাধ্যমে রাখাইনে প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলতে থাকা সহিংসতাকে ঢাকার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, এসব উন্নয়নের কোন সুবিধা রোহিঙ্গারা আদৌ পাবেন কি না। কারণ, উন্নয়নের সুবিধাপ্রাপ্তি থেকে রোহিঙ্গাদের বঞ্চিত রাখা মিয়ানমারে নতুন কিছু না। এ বিষয়ে মিয়ানমারের এক নিরপেক্ষ বিশ্লেষক ডেভিড ম্যাথিসন বলেন, ইউইএইচআরডি প্রকল্প তৈরি-ই করা হয়েছে রাখাইনে সংঘটিত জাতি নির্মূল অভিযানকে আড়াল করার জন্যে। তবে মিত্রদের নিয়ে লোকদেখানো উন্নয়ন সাধন করে প্রকৃত নৃশংসতাকে আড়াল করতে পারবে না সরকার। তিনি আরও বলেন, হয় সরকার খুব বাজে উপদেশ গ্রহণ করছে এবং বিশ্বাস করছে উন্নয়ন করলেই সব সমস্যার সমাধান হবে; না হয় মানুষকে এটা বোঝানোর অপচেষ্টা করছে যে, রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা স্রেফ একটি দুঃস্বপ্নের মতো বিক্ষিপ্ত কিছু ছিল। এই উন্নয়ন প্রকল্পের নাম চাপিয়ে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোকে বুলডোজার দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, এর মাধ্যমে ওই অঞ্চলে সংঘটিত সহিংসতা আড়াল করতে চাইছে মিয়ানমার। এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ইউইএইচআরডি'র প্রধান সমন্বয়ক অং তুন থেট দাবি করেছেন, আমরা কোনকিছুই আড়াল করার চেষ্টা করছি না। রোহিঙ্গা গ্রামগুলোকে বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে কারণ, সেখানে উন্নত স্থাপনা তৈরি করা হবে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনতে দু'টি প্রত্যাবাসন কেন্দ্র নির্মাণ স¤পন্ন করা হয়েছে।  উল্লেখ্য, জানুয়ারিতে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও, চুক্তির সময়সীমা অনুযায়ী এখনো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আরম্ভ হয় নি। এই মুহূর্তে যদিও বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের দিয়ে রাখাইনে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাইছেন দেশটির নেত্রী অং সান সুচি। কিন্তু খোদ সেই ব্যবসায়ীদের অনেকের মাঝেও এই প্রকল্প নিয়ে অসন্তোষ এবং অনিশ্চয়তা রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিয়ানমারের এক উপদেষ্টা এ বিষয়ে বলেন, এই প্রকল্প সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের অনেকেই আশাবাদী নন। তাদেরকে রাজধানী নেপিড'তে ডেকে এনে বলা হয়েছে প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে। তবে তা অনুরোধের স্বরে নয়, আদেশের স্বরে। যা অমান্য করার কোন উপায় তাদের সামনে নেই। ওই উপদেষ্টা আরও বলেন, প্রকল্পের কাজ সম্পর্কে স্পষ্টতা সামান্যই। ঠিক কিভাবে কি করা হবে ¯পষ্ট করে বলা নেই। মনে হচ্ছে সামরিক জান্তার সেই সময় ফিরে আসছে। যখন- যা আদেশ করা হতো, না শুনে উপায় ছিল না। অবশ্য, রাখাইনের স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে এই উন্নয়ন প্রকল্পের খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা দেখা যাচ্ছে না। যদিও প্রকল্পের মূল সুবিধাদি তারাই ভোগ করবেন বলে ধারনা করা হয়। তারা বলছেন, সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখাতে চাচ্ছে যে, তারা 'বাঙালি'দের ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গাদের স্থানীয় বৌদ্ধরা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেন না। তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া 'বাঙালি' বলে আখ্যায়িত করেন। মিয়ানমারের অ্যাক্টিভিস্টদের সংগঠন মিয়ানমার সোশ্যাল নেটওয়ার্কের সদস্য সোয়ে নাইং এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকার একতরফাভাবে 'বাঙালি'দের জন্যে কাজ করছে, রাখাইনের জনগণের জন্যে না। যদিও সার্বিক বিশ্লেষণ সম্পূর্ণ অন্য কথা বলে। বলে, এই লোক দেখানো উন্নয়ন প্রকল্প রোহিঙ্গাদের কদাচিৎ সুবিধা দেবে।

  [ওয়াশিংটন পোষ্টে প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে অনুদিত। অনুবাদ করেছেন নাজমুস সাদাত পারভেজ।]
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর