× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মিথ্যা বলার সত্যিকারের সমস্যা

এক্সক্লুসিভ

নাজমুস সাদাত পারভেজ
২৩ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার

‘সদা সত্য কথা বলিবে’ ‘মিথ্যা বলা মহাপাপ’- এ কথাগুলো জীবনের একদম প্রারম্ভে, শিশুকালেই আমাদেরকে শেখানো হয়। কারণ, মিথ্যে মানেই বিভ্রান্তি, ছলনা। মিথ্যার বিভীষিকা সমপর্কে বলতে গিয়ে প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘মিথ্যারও মহত্ত্ব আছে। হাজার হাজার মানুষকে পাগল করে দিতে পারে মিথ্যার মোহ। চিরকালের জন্যে সত্য হইয়াও থাকিতে পারে মিথ্যা’। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে দেখতে গেলে, প্রায় প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে মিথ্যা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। নীতিগতভাবে ভাবতে গেলেও, মানবজীবনে মিথ্যার গ্রহণযোগ্যতা নেই। তবুও, জীবনের নানা ক্ষেত্রে অনেকেই ছোটখাটো মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকেন।
এটি নিয়ে খুব বেশি বিচলিতও হন না। এ নিয়ে একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে: ‘মিথ্যা জীবনের সত্যের একটা অংশ’। অনেকেই প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মিথ্যার আশ্রয় নেই। কারণ হিসেবে বলি, সত্যের আঘাত থেকে বাঁচার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিলে মন্দ কী? তবে বাস্তবতা হচ্ছে, সত্যি কী আসলেই কখনো কখনো ঝামেলা তৈরি করে? যদি করেও, তা কি মিথ্যে বলার ঝামেলার চেয়ে বেশি? জীবনলব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে বিচার করলে দেখা যায়, মিথ্যা আরো বেশি নেতিবাচক ফলাফল ডেকে আনে। এর কারণে বিশ্বাসে ফাটল তৈরি হয়, সম্পর্কে জটিলতা আসে, গোলযোগ বাধে জীবনে। তবুও মানুষ মিথ্যা বলে। কেন বলে? অধিকাংশ মানুষ মিথ্যা বলেন নিজেদের ভালো কিংবা নির্দোষ প্রমাণ করতে। কেউ কেউ হয়তো অন্যকে কষ্ট না দেয়ার জন্য কিংবা সামাজিক মর্যাদা অর্জন বা ধরে রাখার জন্য মিথ্যা বলেন। কারণ, যা-ই হোক, মিথ্যার আশ্রয় নেয়াটা কখনোই আদর্শ কাজ নয়। সামপ্রতিককালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মিথ্যা বলা ব্যক্তির নিজের জন্যই চরম অমঙ্গলকর। ছোটখাটো মিথ্যার আশ্রয় নেয়া ব্যক্তিও এক সময় ধীরে ধীরে মিথ্যা কথা বলায় আসক্ত হয়ে পড়েন! বৃটেনের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের একদল বিজ্ঞানী গবেষণায় খুঁজে পেয়েছেন যে, মিথ্যা কথা বলা ব্যক্তির মস্তিষ্ক এতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। প্রতিটি মিথ্যা কথার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তির মিথ্যা কথা বলা সংক্রান্ত অপরাধবোধ অবলুপ্ত হতে থাকে। মস্তিষ্কে তৈরি হয় মিথ্যা বলার গ্রহণযোগ্যতা। এর ফলে ব্যক্তি ধীরে ধীরে মিথ্যা কথা বলার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। আর এর সবই হয় ব্যক্তির অজান্তে। গবেষকগণের একজন- ড. টালি শ্যারন বলেন, শুনতে অদ্ভুত হলেও সত্যি যে, প্রতিটি ছোটখাট মিথ্যা আমাদের মস্তিষ্ককে বড় ধরনের মিথ্যা বলার জন্য প্রস্তুত করে তোলে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার প্রখ্যাত মনোবিদ বেলা ডিপাউলো বলেন, একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে- বেশির ভাগ মানুষ দিনে গড়ে এক থেকে দুটি মিথ্যা কথা বলেন। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, বৈশ্বিকভাবে প্রতিদিন আমাদের মস্তিষ্ক একটু একটু করে মিথ্যায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। এ বড় ভয়ের কথা। কারণ, সামগ্রিকভাবে এই প্রবণতা কেবল অমঙ্গল ডেকে আনবে।
সুতরাং, যারা সত্যবাদী এবং সৎ জীবনযাপন করতে চান, তাদের উচিত মিথ্যা থেকে দূরে থাকা। মনে রাখতে হবে, প্রাত্যহিক জীবনের ছোটখাটো যেসব অসত্যকে ‘নিষ্পাপ বা ক্ষতিহীন মিথ্যা’ নাম দিয়ে স্বাভাবিক বলে চালিয়ে দিচ্ছেন, সেটিই একসময় আপনাকে বড়সড়ো মিথ্যাবাদীতে পরিণত করে দিতে পারে। জানি, আমরা কেউ-ই ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটা হতে চাই না। তবে ভয়ের কথা হচ্ছে, মিথ্যা বলার অভ্যাস আপনার অজান্তেই আপনাকে ঠেলে দেবে মিথ্যের ঝামেলাপূর্ণ জগতে। এটাই মিথ্যে বলার সত্যিকারের সমস্যা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর