× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জুরাইন দরবার শরীফ /অসুস্থ পীরের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ মাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা

এক্সক্লুসিভ

আল-আমিন
২৩ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার

রাজধানীর জুরাইনের হযরত খাজা শাহ্‌ আবুন্নাছরে মোহাম্মদ নাজীবুদ্দীন চিশতির মাজার নিয়ে চলছে দু’গ্রুপে টানাটানি। উত্তেজনা। স্থানীয়ভাবে মাজারটি জুরাইন দরবার শরীফ নামে পরিচিত। ৬৮ বছরের এই পুরনো দরবার শরীফের গদিনশীন পীর মাওলানা কামরুজ্জামান চিশতি। ৭৩ বছর বয়সী এই পীর ১০ মাস ধরে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসসহ একাধিক রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। ৩ মেয়ে থাকলেও তার কোনো ছেলে সন্তান নেই। এই সুযোগে অসুস্থ পীরের তিন ভাই ইতিমধ্যে সম্পত্তির দিকে হাত বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিবারের অভিযোগ, পীরের তিন ভাই মাজারের পাশের ‘চিশতিয়া বেকারি’ এবং ‘চিশতিয়া টাওয়ার’ নামে একটি মার্কেট দখল করেছে।
এখন পীরের তিন মেয়ে যে বাড়িতে থাকেন সেই বাড়ি থেকে তাদের উচ্ছেদসহ পুরো মাজারকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন তারা। এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করতে পীরের মেয়েদের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা। পুলিশকে বিষয়টি একাধিকবার অবহিত করলেও কোন ফল হয়নি। এ ঘটনায় পীরের পরিবারের পক্ষ থেকে গত ১৯শে ফেব্রুয়ারি শ্যামপুর থানায় একটি জিডি (সাধারণ ডাইরি) করা হয়েছে। জিডি নম্বর: ৭৮৮। এই দরবার শরীফের আরেকটি শাখা রয়েছে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার পীর কাশেমপুর গ্রামে। সেটি পীর কাশেমপুর দরবার শরীফ নামে পরিচিত। সেখানে বর্তমান পীরের দাদা শামসুজ্জোহা চিশতির মাজার রয়েছে। গত বছরের ২৩শে ডিসেম্বর মুরাদনগরের ওই মাজারের পীরের খেলাফতকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে পীরের বড় মেয়ে মোসাম্মাৎ তাহেরা জামান মানবজমিনকে জানান, ১৯৬৪ সাল থেকে আমল ও হাকিক্বত সহকারে আমার বাবা মাজার শরীফ পরিচালনা করে আসছেন। বাবা গত দশ মাস আগে স্ট্রোক করেছিলেন। এছাড়াও বার্ধক্যজনিত নানা রোগে তিনি আক্রান্ত। মাজারের সম্পত্তি ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বাবার সঙ্গে তার ৩ চাচার বিরোধ আছে। বাবা অসুস্থ হওয়ার পরই তিন চাচা আরও বেপরোয়া     হয়ে উঠেছেন। তারা ইতিমধ্যে চিশতিয়া টাওয়ার ও চিশতিয়া বেকারি দখল করেছেন। আমার বাবা এখনও বেঁচে আছেন। তিনি কাউকে খেলাফত দেননি। কিন্তু, পুরো মাজারকে তারা দখলের পাঁয়তারা করছেন। বাবা মারা গেলে তারা আমাদের নিজেদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। আমার চাচা আমাদের বলেছেন যে, ‘মেয়েরা বাবার সন্তান হতে পারে না। বাবা মারা গেলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তোদের বাড়ি থেকে বের করে দেবো।’

সরজমিন দেখা যায়, জুরাইন মূল সড়কের পাশেই ‘জুরাইন দরবার শরীফ’। পাশেই রয়েছে সালাহউদ্দিন আহমেদ নামে একটি পেট্রোল পাম্প। প্রায় ৪ একর জমির ওপর এই দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠিত। মাজারের জমির আকারটি লম্বা। ঢোকার জন্য ২টি গেট রয়েছে। একটি গেটের পাশে রয়েছে চিশতিয়া বেকারি। আরেকটি গেটের প্রান্তে রয়েছে চিশতিয়া টাওয়ার। মাজারের মধ্যেই রয়েছে বর্তমানের গদিনশীন পীরের তিনতলা একটি বাড়ি। এই বাড়িতেই তার ৩ মেয়ে থাকেন। বাড়ির সামনে রয়েছে পীরের মেজো ভাই শাহ্‌ আলম। জহরুল আলম নামে অন্য ভাই থাকেন জুরাইন এলাকায় অন্য একটি বাড়িতে। তবে নজরুল আলম নামে আরেক ভাই পরিবার নিয়ে ভারতে থাকেন। মাজারে ওরশ হলে তিনি ভারত থেকে যোগ দিতে আসেন।

জানা গেছে, বর্তমান গদিনশীন পীরের চাচা হযরত খাজা শাহ্‌ আবুন্নাছরে মোহাম্মদ নাজীবুদ্দীন চিশতি আল হক নাওয়ারাল্লা শারকাদাহ ১৯৪১ সালে জুরাইন দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। ওই বছর তার পরিচালনায় প্রথম ওরশ অনুষ্ঠিত হয়। তারও কোনো ছেলে সন্তান ছিল না। ১৯৬৪ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর তার ভাতিজা বর্তমান পীর কামরুজ্জামান চিশতিকে বায়াত দিয়ে খেলাফত দান করে যান।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, তখন থেকেই তিনি খাস নিয়ত ও হেকমতের সঙ্গে এই মাজার শরীফ পরিচালনা করে আসছিলেন। মাজারের অন্য সম্পত্তিগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ ও সেখান থেকে আয়কৃত টাকা তিনি জনকল্যাণে ব্যয় করেন। এছাড়াও কুমিল্লার মুরাদনগারের পীরকাশেমপুর দরবার শরীফটিও তিনি ঢাকা থেকে পরিচালনা করতেন। ১৫ দিন পর সেখানে গিয়ে তিনি তার মুরিদদের ঈমানের উপর টিকে থাকার জন্য নসিয়ত ও বায়াত প্রদান করে থাকেন। তার এই নেক নিয়তটি কামরুজ্জামানের অন্য তিনভাই সহ্য করতে পারেনি। কামরুজ্জামান দরবার শরীফ পরিচালনার পাশাপাশি তিনি মাজারের ও মসজিদের সাধারণ সম্পাদকও। মুনির হোসেন নামে মাজারের এক মুরিদ জানান, অসুস্থ পীরের ভাইয়েরা মাজারের মার্কেট ও বেকারি দখল করেছেন। এখন তার তিন মেয়েকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছে।  

জুরাইনের আদি বাসিন্দা পাইকারী কাঁচামাল ব্যবসায়ী আলহাজ্ব রজব আলী বলেন, বর্তমান পীর একজন নেক আমলদার। আল্লাহ্‌ পাক তাকে ছেলেসন্তান দেননি। তার তিন নিরীহ আমলদার মেয়ে রয়েছে। তিনি ভাইয়ের ষড়যন্ত্রের শিকার। তাকে সমস্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এলাকাবাসী এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার আরেকজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি জানান, সম্পত্তি দখল ও হট্টগোলের বিষয়টি পুলিশ অবগত রয়েছে। কিন্তু, পীরের ভাইয়েরা থানা পুলিশকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার কারণে তারা দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

চিশতিয়া টাওয়ারের নিচতলায় চিশতিয়া বিরানি হাউজের মালিক সুমন জানান, তাদের কাছে মাজারের এক ‘আওলাদ’ এসে ভাড়া তুলে নিয়ে যায়। তিনি মাজারের বিরোধের বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি। চিশতিয়া বেকারির ম্যানেজার শফিকুল আলম জানান, এই বেকারিটি চালান পীরের ভাই শাহ আলম। এর আগে বেকারিটি কার ছিল প্রশ্ন করলে তিনি জানেন না বলে জানান। সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য পীরের মেজো ভাই শাহ আলমের সঙ্গে তার বাড়িতে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দেয়া মাত্রই ফোনটি কেটে দিয়ে বন্ধ করে দেন। এ বিষয়ে শ্যামপুর থানার ওসি মো. মিজানূর রহমান জানান, জুরাইন দরবার শরীফটি হচ্ছে পুরনো দরবার শরীফ। ফেব্রুয়ারি মাসে পীরের তিন মেয়ে থানায় এসে একটি জিডি করেছিলেন। জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাদের বেকারির কর্মচারীরা মারতে গিয়েছিলেন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর