মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেনের কার্যালয়ে হানা দিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (এফবিআই) সদস্যরা। নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, অভিযানের সময় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক হওয়ার দাবি করা দুই নারীকে কোহেনের দেওয়া অর্থের নথিপত্র ঘাটেন এফবিআই এজেন্টরা। এছাড়াও দুই নারীর একজনের মুখ বন্ধ রাখতে ন্যাশনাল এনকোয়ার ম্যাগাজিনের প্রকাশকের প্রচেষ্টা সম্পর্কেও তথ্য খোঁজেন এফবিআই কর্মকর্তারা।
নিউ ইয়র্কের ম্যানহ্যাটন কেন্দ্রীয় কৌঁসুলির কার্যালয়ের সরকারি দুর্নীতি ইউনিটের চাওয়া সার্চ ওয়ারেন্টে ক্যারেন ম্যাকডোগাল নামে সাবেক একজন প্লেবয় মডেলের ব্যাপারে তথ্য চাওয়া হয়। ওই মডেল দাবি করেন, ২০০৬ সালে ট্রাম্পের প্রথম সন্তান হওয়ার কিছুকাল পরই তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। ন্যাশনাল এনকোয়ার ম্যাগাজিনের মালিকানা প্রতিষ্ঠান তাকে এই তথ্য প্রদানের জন্য দেড় লাখ ডলার প্রদান করে। কিন্তু ওই খবর পরে কখনই ম্যাগাজিনটিতে প্রকাশিত হয়নি। ম্যাগাজিনটির প্রধান নির্বাহী আবার ট্রাম্পের বন্ধু।
ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেনের অফিস ও হোটেল কক্ষও খুঁজে দেখেছে এফবিআই কর্মকর্তারা। এ সময় তারা স্টর্মি ড্যানিয়েলস নামে এক সাবেক পর্ন তারকাকে দেওয়া অর্থের নথিপত্র খোঁজেন।
স্টর্মি ড্যানিয়েলস দাবি করেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক হয়েছে, যখন তিনি ছিলেন বিবাহিত।
আইনজীবী মাইকেল কোহেন স্বীকার করেন যে, তিনি স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে চুপ থাকার চুক্তিতে সইয়ের বিনিময়ে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার প্রদান করেন। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে আগে এই অর্থ লেনদেনের ঘটনা ঘটে।
কোহেনের আইনজীবী স্টিফেন রায়ান সোমবার বলেন, এফবিআইর ওই অভিযান যথাযথ ছিল না। এটি ছিল অপ্রয়োজনীয়। ন্যাশনাল এনকোয়ার ম্যাগাজিনের মালিকানা প্রতিষ্ঠান আমেরিকান মিডিয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রথম সাংবিধানিক সংশোধনী থেকে প্রাপ্ত অধিকার ক্ষুণœ না করলে ও সূত্রের পরিচয় প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা না থাকলে যেকোনো অনুরোধ মেনে চলবে তারা।
অপরদিকে মঙ্গলবার বিকেলে এক টুইটে মাইকেল কোহেন এক লেখককে উদ্ধৃত করে বলেন, আমার বিশ্বস্ততা প্রাপ্য যেই ব্যক্তির, তিনি সেটা পাবেন। আমি সবসময় আমাদের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে সুরক্ষিত রাখবো।
বেশ কয়েক মাস ধরে এই ইস্যু নিয়ে নাকাল অবস্থায় আছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অভিযোগ উঠেছে, যেসব নারীর সঙ্গে তার বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক ছিল তাদেরকে অর্থ দিয়ে চুপ থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। তবে এই অভিযোগ ট্রাম্প অস্বীকার করেন বলে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
অন্য সব ইস্যুতে বেশ সরব থাকলেও, ট্রাম্প এই ইস্যুতে মন্তব্য করা থেকে সতর্কভাবে বিরত রয়েছেন। তবে কিছুদিন আগে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে তারই ব্যক্তিগত আইনজীবী ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দিয়েছেন বলে তার জানা ছিল না।
তবে সোমবারের এফবিআই অভিযোগ থেকে বোঝা যায় যে, কয়েকদিন আগেও যা ছিল ট্রাম্পের জন্য রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ, তা এখন গুরুতর আইনি দিকে মোড় নিয়েছে। ফৌজদারি তদন্তকারীরা এখন মাইকেল কোহেনের কর্মকান্ড নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করেছেন। ফলে এই অর্থ লেনদেনের বিষয়ে কোহেন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাপ করার রেকর্ডও হয়তো খতিয়ে দেখবেন কর্মকর্তারা।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, এই অভিযানের ফলে হোয়াইট হাউজে উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি পেয়েছে। নিজের ব্যক্তিগত আইনজীবীর কার্যালয়ে এফবিআইর অভিযানের খবর শুনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বিশেষ করে শীর্ষস্থানীয় আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষোভ ঢালেন তিনি। আদালতের অনুমতিতে ওই অভিযান পরিচালিত হলেও, ট্রাম্প বলেন, এটি ছিল ‘আমাদের দেশের ওপর হামলা।’ এত গুরুতর কথা তিনি আমেরিকার নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে রাশিয়ার চালানো তৎপরতাকে বোঝানোর ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেনি।
ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবীর কার্যালয়ে হানা দেওয়ার সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগতভাবে অনুমোদন দেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রড রোজেনস্টেইন। রিপাবলিকান সমর্থক এই প্রবীন কৌঁসুলিকে ট্রাম্প নিজেই বিচার মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে বসান।
খবরে বলা হয়, সোমবার সকালে চালানো ওই অভিযানের খবর শুনে ট্রাম্প ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয় দেখান। তিনি এমনকি রোজেনস্টেইনকে বরখাস্ত করার বিষয়টিও বিবেচনা করেন।