× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

পঞ্চগড় সীমান্তে মিলনমেলা

বাংলারজমিন

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
১৬ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার

প্রতিবছরের মতো এবারো দু’বাংলার লাখো মানুষ আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছিল। তবে, বাধা একটাই কাঁটাতারের বেড়া। কাঁটাতারের দু’প্রান্তে দাঁড়িয়ে লোকজন একে অপরের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করে মনের প্রশান্তি মেটায়। অন্যান্য বছর বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে দেখা সাক্ষাতের সুযোগ পেলেও এবার তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। বিএসএফের অনুমতি না মেলায় শনিবার কোনো সীমান্তে মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। গতকাল তারা মিলিত হয়েছিল। পহেলা বৈশাখের দিনটির জন্য অপেক্ষা করে বাংলাদেশ ও ভারতের বাংলাভাষী কয়েক লাখ মানুষ। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা এবং তেঁতুলিয়ার মাগুড়মারী, সুকানি ও ভুতিপুকুর সীমান্তে দুই বাংলার মানুষের ঢল নামে।
কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁকে কথা বলার সময় কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন অনেকে। বিনিময় করেছেন বিভিন্ন উপহার সামগ্রী। আপনজনদের সঙ্গে দেখা করতে সকাল থেকে হাজির হয়েছিল লাখো নারী-পুরুষ। বিএসএফের অনুমতি পাওয়ার পর গতকাল সকাল থেকে জেলার চার সীমান্ত এলাকায় শুরু হয় মিলনমেলা। প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে সীমান্তের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক দিয়ে কথা বলেন দুই বাংলার নাগরিকরা।

অমরখানা ইউনিয়নের অমরখানা ও বোদাপাড়া গ্রাম ও ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার রায়গঞ্জ থানার খালপাড়া, ভিমভিটা, গোমস্তাবাড়ি ও বড়ুয়াপাড়া গ্রামের ফাঁকা জায়গায় জড়ো হয় লাখো বাংলাভাষী। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিএসএফের গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে কাঁটাতারের বেড়ার দু’পাশে চলে যায় তারা। ৭৪৪ নম্বর মেইন পিলারের ১ থেকে ৭ নম্বর সাব পিলার পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডজুড়ে উভয়দেশের নাগরিকদের মিলনমেলা শুরু হয়। মিলনমেলায় আগতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকেই বাংলাদেশ অংশে জড়ো হয় বাংলাদেশের নাগরিকরা। কিন্তু বিএসএফ অনুমতি না দেয়ার বিজিবি কাউকেই বেড়ার কাছে ভিড়তে দেয়নি। আর ওপারের কেউ বেড়ার কাছে আসতে পারেনি। কারণ হিসেবে তারা দেখিয়েছে, ভারতের পঞ্জিকা অনুসারে বাংলাদেশের একদিন পরে হয় তাদের নববর্ষ। এ কারণে এবার থেকে তাদের পহেলা বৈশাখেই মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হবে। আর বাংলাদেশের হবে বৈশাখের দ্বিতীয় দিন। পহেলা বৈশাখের দিন অনেকে গিয়েছিল ওই সীমান্তে। কিন্তু মিলন মেলা না হওয়ায় পঞ্চগড় জেলার মধ্য থেকে আগতরা দুপুরের দিকে বাড়ি ফিরে গেলেও জেলার বাইরে থেকে আগতরা থেকে যান আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। অনেকে আবার ইউনিয়ন পরিষদ অথবা ফাঁকা জায়গায় অবস্থান করে রাতযাপন করেন। গতকাল সকাল থেকেই কাঁটাতারের বেড়ার পাশে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে বিকালের মধ্যে তারা সবাই বাড়ি ফিরে যান।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার গরিনাবাড়ি ইউনিয়নের শর্মিলা ঠাকুরের ভাই ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজন থাকে শিলিগুড়ি এলাকায়। তিনি দেখা করতে গিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে। দীর্ঘদিন পর দেখা পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। চানপাড়া গ্রামের নিরন বালা (৪৬) এসেছিলেন ভারতের শিলিগুড়ির একটিয়াশ এলাকায় অবস্থানরত বড় বোন সুধির বালা (৪৮) এর সঙ্গে দেখা করার জন্য। প্রায় ১০ বছর পর দুই বোনের সরাসরি সাক্ষাৎ হওয়ায় আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তারা। বড় বোনকে একটু জড়িয়ে ধরে কাঁদতে চায় ছোট বোন নিরন বালা। কিন্তু মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। কথা বলার ফাঁকে শুধু চোখের জলেই তাদের ভালোবাসার প্রকাশ। নিরন বালা জানান, পাসপোর্ট-ভিসা করে ভারতে গিয়ে বোনকে দেখার সামর্থ্য তাদের নেই। তাই কয়েক বছর ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করার পর এবারই বড় বোন সীমান্তে এসেছেন তার দেখা করার জন্য। তিনি তার সামর্থ্য মতো বড় বোনের জন্য শাড়ি ও খাবার এনেছেন। বেড়ার ওপর দিয়ে সেগুলো দিয়েছেন। বড় বোনও তার জন্য উপহার সামগ্রী এনেছেন। ভারতের শিলিগুড়ি শালুগাড়া এলাকায় থাকেন ছেলে নিরোধ বর্মন (৩০) তার সঙ্গে দেখা করার জন্য ঠাকুরগাঁওয়ের শিবরামপুর থেকে এসেছেন বাবা শালটু বর্মন (৭৭)। ছেলের সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনি নিয়ে এসেছিলেন স্ত্রী ও পাঁচ মেয়েকে। প্রখর রোদে প্রায় ঘণ্টাখানেক ঘুরে বেড়ানোর পর দেখা হয় ছেলের সঙ্গে। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে নিরোধের কথা হয় বাবা, মা ও বোনদের সঙ্গে। বিনিময় করেন উপহার সামগ্রী। শালটু বর্মন জানান, ছেলের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমি পাসপোর্ট ভিসা করেছি। এরই মধ্যে দুইবার ভারতে গিয়ে ছেলের বাড়িতে থেকে এসেছি। কিন্তু স্ত্রী ও মেয়েরা অনেকদিন ধরে নিরোধকে দেখেনি। সবার পাসপোর্ট ভিসা করে ভারতে যাওয়া মুশকিল। তাই গত বছর থেকে বাংলা নববর্ষে এখানে আসছি।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আল হাকিম মো. নওশাদ বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারো বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দুই বাংলার বাংলা ভাষা ভাষীদের মিলনমেলার আয়োজন করা হয়েছে। পঞ্চগড় জেলার অমরখানা, মাগুড়মারী, সুকানি ও ভুতিপুকুর এই চার স্থানে একই সঙ্গে এই মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মিলনমেলা সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করার জন্য জেলা প্রশাসন ও বিএসএফের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিজিবি ব্যবস্থা করেছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর