× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়রানি ও চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি ব্যবসায়ীদের

দেশ বিদেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৬ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার

আসন্ন রমজান মাসে পণ্যদ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পরিবহন খাতে পুলিশ ও রাজনৈতিক দলের কর্মীদের চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানানো হয়। রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকাভিত্তিক ও বিশেষায়িত ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করতে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাসেম খানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এছাড়া কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি গোলাম রহমান ও ডিসিসিআইএর ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি এফসিএ কামরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, রমজানে দ্রব্যমূল বৃদ্ধির জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতার পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রভাবান্বিত চাঁদাবাজিকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তবে ব্যবসায়ী নেতারা কারণ হিসেবে বারবার পুলিশ ও রাজনৈতিক চাঁদাবাজিকে দায়ী করেন।
তিনি অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য ‘ন্যায্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ সেল’ গঠনের প্রস্তাব করেন।
স্বাগত বক্তব্যে সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে মে মাসের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গড়ে ১৭.৫১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে দেশে গড় মুদ্রাস্ফীতি ৫.৮২ শতাংশ এবং খাদ্যদ্রব্যে গড় মুদ্রাস্ফীতি ৭.১৩ শতাংশ। এ পরিস্থিতে আসন্ন রমজান মাসে খাদ্যদ্রব্যের দাম আরও বাড়লে আয়-ব্যয়ে সমন্বয় করতে হিমশিম খাবে মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ। সভাপতি বলেন, রমজানে ট্যারিফ কমিশন ও রাজস্ব বোর্ড এসব নির্দিষ্ট ভোগ্যপণ্যে ট্যারিফ ও শুল্ক হ্রাস করতে পারে। পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ও যানজট নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য এবং আইন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
ব্যবসায়ীরা বলেন, রমজান এলেই পুলিশ ও রাজনৈতিক দলের নানা ধরনের অপতৎপরতা শুরু হয়। ইফতার পার্টির নামে চাঁদাবাজি চলে। এতে ব্যবসায়ীদের প্রচুর অর্থ খেসারত দিতে হয়। বাড়তি এ টাকা ক্রেতাদের কাছ থেকেই তুলে নেয়ায় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তাই রমজান মাসে পুলিশের অপতৎপরতা, দলীয় নেতা ও মাস্তানদের চাঁদাবাজি বন্ধ করার দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজি করে যানজটের সৃষ্টি করা হয়। সঠিক সময়ে পণ্য পৌঁছানো যায় না। আবার অনেক পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। ফলে দাম বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীদের বক্তব্যের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা ভেজাল দেয়া থেকে শুরু করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে থাকেন। বিশেষ করে রোজার মাসে অস্বাভাবিক হারে দাম বেড়ে যায়। পণ্যে ভেজাল পুলিশ বা সরকার তো দেয় না, আপনারাই দেন। বলবেন ধরছেন না কেন? ধরলেও বিপদ। এমন এমন জায়গা থেকে তদবির আসে যে বিপদে পড়তে হয়। আবার মালামাল পরিবহনের সময় গাড়িতে ওভারলোড করেন। ১০ টনের জায়গায় ৩০ টন নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। রোডের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। গাড়ির ফিটনেস ও ড্রাইভারের লাইসেন্স নাই। গাড়িতে মাদক বহন করা হয়। পরিবহনের কাগজপত্র চেক করতেই পুলিশ সড়কে গাড়ি থামায়। আপনারা যদি ঠিক থাকেন তাহলে পুলিশ চাঁদাবাজি করবে কীভাবে?
ডিসিসিআইয়ের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, সরকার সঠিকভাবে ব্যবসায়ীদের মনিটরিং করে না। টিসিবি অকার্যকর প্রতিষ্ঠান। লোক দেখানো কিছু কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। পুলিশ পরিবহনে চাঁদাবাজি করে। কাগজপত্র চেক করার নামে গাড়ি আটকিয়ে রাখে। যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। এক সময় দাম বৃদ্ধি পায়। রোজার মাসে ইফতার পার্টির নামে চাঁদা আদায় করা হয়। অনেক সময় সরকারের বিভিন্ন সংস্থা চাঁদা তোলার ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা করে। ওইসব চাঁদার টাকা ব্যবসায়ীরা ঘর থেকে এনে দেন না। পণ্যের ওপর লাভ করেই চাঁদা দিয়ে থাকেন। ফলে পণ্যের দাম বাড়ে। রোজার মাসে ইফতার পার্টি কমাতে হবে। এটি কমানো হলে চাঁদাবাজি ও যানজট দুটোই কমবে। পণ্যের দামও বাড়বে না।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইফতার পার্টি অনেক সময় বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে। তবে অতিরিক্ত যাতে না হয় সেদিকে সকলকে মনোযোগী হতে হবে। ঈদে আপনাদের অনেকেই কর্মচারীদের বেতন না দিয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে চলে যান। তখন কর্মচারীরা রাস্তায় নেমে এলে অসহনীয় যানজট তৈরি হয়। ওই সময় সবাইকে ডেকে বসার পর সমাধান হয়। কিন্তু ততক্ষণে মাইলের পর মাইল যানজট তৈরি হয়। যা সামাল দিতে দু-তিনদিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এতে ট্রাকভর্তি পচনশীল পণ্যগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
ডিসিসিআইয়ের কোনো সদস্য ভেজাল পণ্যের সঙ্গে যুক্ত না জানিয়ে নেতারা বলেন, ভেজাল রোধে সরকারকে আরও বেশি কঠোর হতে হবে। সঠিকভাবে কাজ করতে হবে। বেশি বেশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। এসব কথার জবাবে মন্ত্রী বলেন, কিছু ব্যবসায়ী আছেন যারা হাসপাতালে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহার করেন। পণ্যে ভেজাল মেশাচ্ছেন। তেলে সরিষা নেই তার পরেও সরিষার তেল। সব কিছুই আপনারা করছেন। এসব বিষয়ে আমাকে দেখতে হয়। মন্ত্রী হওয়ার পর বুঝেছি, কে কী রকম, কে কেমন?
পুলিশের চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চাঁদাবাজি কঠোরভাবে বন্ধ করা হবে। তবে কারা করেন, তাদের নাম বলতে হবে। দুই চারজন চাঁদাবাজ পুলিশে রয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। বর্তমান পুলিশ অনেক বেশি শিক্ষিত এবং আগের চেয়ে অনেক সৎ। তারা মানুষের সেবা করতেই এসেছেন। এর মধ্যেও দুই চারজন অসৎ থেকে যায়। আপনারা শনাক্ত করে নাম বলবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, পুলিশ সুযোগ নেয় আমাদের জন্যই। আমরা গাড়ির কাগজপত্র ঠিক রাখি না, ফিটনেস নাই, ওভারলোড করে মাল তুলি, ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই ও গাড়িতে মাদক বহন করি। এসব না করলে পুলিশ কাউকে ধরতে পারে না। তবে এর মধ্যে ২/১টির ক্ষেত্রে যে বাড়াবাড়ি করা হয় না, তা বলব না। এটা আমরা দেখবো। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ক্যাব সভাপতি ও দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, যানজট, ট্রাকজট, চাঁদাবাজি, দাম বাড়ানো, ভেজাল মেশানোসহ ব্যবসায়ীরা যে অপকর্মগুলো করেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি মনে করেন এসব সমস্যা সমাধান সম্ভব।
এক্ষেত্রে নকল ও ভেজাল পণ্য রোধে মোবাইল কোর্ট জোরদার করতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ ও দাম বাড়ানোর পেছনে ভোক্তাদেরও দায় রয়েছে। কারণ রমজানে তারা সংযমের পরিবর্তে লাগামহীনভাবে খাওয়া শুরু করেন।
সভা শেষে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ছাত্ররা কোনো কিছুর দাবি করতেই পারে। কিন্তু ঢাবির ভিসির বাসভবনে যে হামলা হয়েছে এটিসহ ফেসবুকে মিথ্যা, গুজব ও উস্কানিমূলক তথ্য প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে একটি মামলাসহ ৫টি মামলা করা হয়েছে। মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বলা যাবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর