× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সিলেটে বেপরোয়া রমণীদের খুঁজছে পুলিশ

দেশ বিদেশ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৬ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার

ইয়াবা নেটওয়ার্কে জড়িয়ে পড়া বেপরোয়া নারীদের খুঁজছে পুলিশ। সম্প্রতি সিলেটে রোকেয়া বেগম ও তার ছেলে রবিউল ইসলাম রূপম খুনের ঘটনার পর পুলিশ এ নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জেনেছে। এদের কেউ কেউ আবার রাজনীতির আড়ালে এসব কর্ম করছে। আবার কেউ কেউ সামাজিক নেটওয়ার্ক কিংবা ব্যবসার আড়ালেও চালিয়ে যাচ্ছে এসব কর্মকাণ্ড। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে- সিলেটের মিরাবাজারে জোড়া খুনের ঘটনার পর তাদের কাছে অনেক তথ্য এসেছে। নিহত রোকেয়া সম্পর্কে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে তারা এসব তথ্য পান। রোকেয়ার মতো আরো অনেক মহিলা রয়েছেন সিলেটে। যারা সুন্দরী তরুণীদের নিয়ে নিজেদের বাসা নিরাপদ সেক্স জোনে পরিণত করেছেন।
একই সঙ্গে তারা ইয়াবা নেটওয়ার্কে জড়িয়ে পড়েছেন। খুনের ঘটনায় জড়িত তানিয়া আক্তার তান্নির মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে অনেক তথ্য। তানিয়ার কাছ থেকে তথ্য শুনে পুলিশ হতবাক। তানিয়া নিজেই কয়েকটি আস্তানায় বসবাস করেছে। এর মধ্যে মিনারা নামের এক মহিলার নাম এসেছে। জানা গেছে নয়াসড়ক এলাকার দিলারার কু-কীর্তিও। পাশাপাশি সিলেটী নাটকের আড়ালে শাম্মি নামের এক তরুণীও ইয়াবা নেটওয়ার্কে জড়িত। রোকেয়া খুনের পর পুলিশ টিলাগড় থেকে তানিয়া নামের আরো এক তরুণীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। মদিনা মার্কেট এলাকার শিপা নামের এক তরুণীর বেপরোয়া কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও পুলিশের কাছে তথ্য এসেছে। শিপাকে এরই মধ্যে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কোতোয়ালি পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন- এসব তরুণী ও নারীর কাছ থেকে রোকেয়া সম্পর্কে তথ্য বের করতে থানায় ডেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। এরপর থেকে তাদের পক্ষে বিভিন্ন তরফ থেকে তদবির এসেছে। এসব তদবিরে ছিলেন হাই প্রোফাইল ব্যক্তিরাও। পরে তাদের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালালেও পাওয়া যায়নি মিনারাকে। মিনারা একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী বলে নিজেকে পরিচয় দেয়। সিলেটের দলীয় রাজনীতিতে মাঝারি কিংবা নিচু সারিতে বেশকিছু বিতর্কিত নারী রয়েছে। তাদের নিয়ে প্রায় সময় দলের ভেতরেও অস্থিরতা দেখা দেয়। রাজপথে তাদের সঙ্গে নিয়ে কর্মসূচি পালনে বিব্রত বোধ করে সিলেটের সুস্থ ধারার নারীরা। নানা ঘটনায় বিতর্কিতদের দিয়ে তারা মূল দলের কাছেও নালিশ দিয়ে কোনো প্রতিকার পাননি। সিলেট শহরতলীর টুকেরবাজারে পীরপুরেও এমন একটি ঘটনা সম্প্রতি পুলিশ জেনেছে। জালালাবাদ থানা পুলিশ হোসনা নামের এক মহিলার ইয়াবা নেটওয়ার্কের সন্ধান পেয়েছে। হোসনা ও তার স্বামী ইলিয়াস একটি বাসা ভাড়া নিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা আচ্ছাদিত বাসায় ইয়াবা ব্যবসা করতো। ৬ই এপ্রিল হোসনার বাসার সামনে থেকে শামীম নামের এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের পর ওই বাসায় অভিযান চালান। তবে পুলিশি অভিযানের আগেই পালিয়েছে হোসনা আর। সঙ্গে তার স্বামীও। জালালাবাদ থানা পুলিশ হোসনা আরাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তাকে খোঁজা হচ্ছে। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) আব্দুল ওয়াহাব গতকাল বিকেলে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, জোড়া খুনের ঘটনায় নয় আরো যেসব ঘটনায় মাদক সিন্ডিকেটদের সন্ধান মিলছে পুলিশ সেখানেই অভিযান চালাচ্ছে। বেশ কয়েকটি আস্তানায় পুলিশ এরই মধ্যে অভিযান চালিয়েছে। অনেকেই এখন গা-ঢাকা দিয়েছে। এদিকে সিলেটের বিউটি পার্লার, টেইলারিং ব্যবসায় জড়িত বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী নারীর সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এর কারণ- নিহত রোকেয়া নিজেও একজন পার্লার ব্যবসায়ী ছিল। পার্লারের কিছু মহিলার সঙ্গে তার যোগসূত্র থাকতে পারে বলে তদন্তে থাকা পুলিশ ধারণা করছে। সিলেট মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি অধ্যাপিকা সামিয়া বেগম চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- এসব মহিলা শুধু রাজনীতির ক্ষেত্রে নয় তারা সমাজের জন্য ক্ষতিকর। তাদের প্রথমে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। মানুষ তাদের বর্জন করলে তারা অনেকটা শুধরে যাবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু পরিবর্তন এসেছে। যারা শিক্ষিত ও রাজনীতির প্রতি দরদ আছে তাদের টেনে আনা হচ্ছে। তিনি জানান, নিজেও কিছু নারীদের নিয়ে তিনি কাজ করছেন। এসব নারীকে সাংগঠনিকভাবে গড়ে তোলা হবে। এরপর তাদের রাজনীতি কিংবা ব্যবসায় ছেড়ে দেয়া হবে। আর তাদের তদারিক করতে হবে নারীদেরকে। ‘শর্টকার্ট পথ’ নারীদের জন্য ভয়ঙ্কর সেটা তাদের বুঝাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শালীনতা বোধ যাদের নেই তাদের নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব মারিয়াম চৌধুরী মাম্মি। তিনি বলেন, এতে করে পুরুষ নয়, সবচেয়ে বেশি বিব্রত হন নারীরাও। এ সম্পর্কে শুধু মহিলাদের নয়, রাজনীতিবিদসহ সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় রাজনীতি, ব্যবসা ও পেশার আড়ালেও অন্তত ২০ জন মহিলা ইয়াবা নেটওয়ার্কের পাশাপাশি নিজেদের বাসাকে নিরাপদ সেক্সজোনে পরিণত করেছেন। তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। নগরে তারা পরিণত হচ্ছে অপরাধের নায়িকা হিসেবে। যেমনটি হয়েছিলেন সিলেটের মিরাবাজারের রোকেয়াও। রোকেয়ার বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের কারণে একটি পরিবার তছনছ হয়ে গেছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর