× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নো-ম্যান্সল্যান্ডের একটি পরিবার ফিরিয়ে নিয়ে মিয়ানমারের প্রচারণা

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার ও নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনি
১৬ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার

সীমান্তের নো-ম্যান্সল্যান্ডে থাকা একটি রোহিঙ্গা  পরিবারকে ফিরিয়ে নিয়েছে বলে প্রচার করছে মিয়ানমার। দেশটির তরফে বলা হচ্ছে- তারা বাস্তুচ্যুতদের ফিরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছেন। একটি পরিবার এর মধ্যে রাখাইনে স্বেচ্ছায় ফেরত গেছে। সুচি সরকার প্রচারিত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে ৫ সদস্যের ওই পরিবারকে রাখাইনের একটি প্রত্যাবাসন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। তাদের হাতে ভেরিফিকেশন কার্ডও তুলে দেয়ার ক’টি ছবি প্রচার করা হয়েছে। এক রোহিঙ্গা পরিবারের ফেরার খবরটি এমন এক সময় প্রচার করা হচ্ছে যখন নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। ওই চাপ হালকা করার জন্য এটি এক ধরনের ‘প্রচার কৌশল’ হতে পারে বলে মনে করছে ঢাকা। এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, নো-ম্যান্সল্যান্ডে থাকা ৬ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে মাত্র একটি পরিবারকে ফেরত নেয়া রীতিমতো হাস্যকর।
আর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে শুরু থেকে যুক্ত বাংলাদেশের ত্রাণ, শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বলেছেন, একটি পরিবারের ফেরত যাওয়াটা প্রত্যাবাসন নয়, এটাকে প্রত্যাবাসন বলার কোনো সুযোগই নেই। তার মতে, নো-ম্যান্সল্যান্ডে অবস্থান করা ব্যক্তিদের ফেরত নেয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সই হওয়া প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় নেই।
ওদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এবং রোহিঙ্গা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা সংস্থাগুলোও অং সান সুচি সরকারের এমন ‘কাণ্ড’কে লোক দেখানো বলে কড়া সমালোচনা করছেন। বৈশ্বিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তরফে মিয়ানমারের এমন প্রচার না করে সত্যিকার অর্থে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ওই রোহিঙ্গা পরিবারের ফেরত যাওয়ার বিষয়ে গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা পরিবারটির ফেরত যাওয়া নিয়ে সর্বপ্রথম খবর আসে বার্তা সংস্থা এএফপিতে। এতে বলা হয়, শনিবার মিয়ানমার সরকারের তথ্য কমিটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে ওই পরিবারের ফেরত যাওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শনিবার সকালে রাখাইনের তাউংপাওলেটুই শহরে প্রত্যাবাসন ক্যাম্পে ফিরে গেছেন একটি পরিবারের পাঁচ সদস্য’। এছাড়া, নো- ম্যান্সল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর এক নেতা পরিবারটির ফেরত যাওয়ার বিষয়টি এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন। মিয়ানমার সরকারের ফেসবুক পোস্টে পরিবারটিকে মুসলিম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বরাবরের মতো তাদের জাতিগত নাম ‘রোহিঙ্গা’ ব্যবহার করা হয় নি। ওই পোস্টে একটি ছবিও দেয়া হয়। এতে দেখা যায়, ওই পরিবারটিতে রয়েছেন একজন পুরুষ। দু’জন নারী। একজন তরুণী। একটি বালক। তারা আইডি এবং হেলথ চেকিং কার্ড সংগ্রহ করছেন। মিয়ানমারের ফেসবুক বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পরিবারটিকে মংডু শহরে তাদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে অস্থায়ীভাবে থাকার জন্য পাঠানো হয়েছে। ভবিষ্যতে ফেরত ইচ্ছুকদের প্রত্যাবর্তন কবে শুরু হবে, কতদিন লাগবে সে বিষয়ে কিছু খোলাসা করা হয় নি। এ নিয়ে বিস্তারিত জানতে মিয়ানমার সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেনি এএফপি।
এদিকে, আমাদের নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তুমব্রু সীমান্তের নো-ম্যান্সল্যান্ড থেকে ফেরত যাওয়া পরিবারের গৃহকর্তার নাম মোহাম্মদ আকতার আলম। তার পরিবারের ৬ সদস্যের মধ্যে ৫ জন ফেরত গেছেন’। তুমব্রু নো-ম্যান্সল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, শনিবার গভীর রাতে সবার অজান্তে তারা মিয়ানমারে ফেরত গেছে। আকতার আলমের বাড়ি মিয়ানমারের তুমব্রু এলাকায় এবং তিনি ওই এলাকার চেয়ারম্যান। শনিবার (১৪ই এপ্রিল) গভীর রাতে মিয়ানমার সীমান্তের ঢেঁকিবুনিয়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে তারা ফেরত গেছেন। আর এ কাজে সহযোগিতা করেছে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড (বিজিপি)। খালেদ হোসেন নামের আরেক রোহিঙ্গা নেতা জানান, মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া আকতার আলমের ২ ছেলে, ২ মেয়েসহ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৬ জন। এরমধ্যে এক মেয়েকে রেখে ৫ জনকে নিয়ে মিয়ানমারে ফেরত গেছেন তারা। তবে এক সন্তানকে রেখে যাওয়ার কারণ জানা যায়নি। তাদের ফেরত যাওয়ার বিষয়টি অন্য রোহিঙ্গারা জানতো না। তারা বলাবলি করছেন, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে চুক্তি করে তিনি মিয়ানমারে ফেরত গেছেন। গত বছরের ২৪শে আগস্ট রাতে আরাকানে সহিংস ঘটনার পর অন্যান্য রোহিঙ্গার সঙ্গে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন আকতার। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকায় এক ইউপি সদস্যের বাড়ি ভাড়া নিয়ে তিনি এতদিন বাংলাদেশে ছিলেন।
প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বলেন, ‘ওই পরিবারের ফেরত যাওয়াটা প্রত্যাবাসনের আওতায় পড়ে না। তুমব্রু সীমান্তের নো-ম্যান্সল্যান্ডে প্রায় ৬ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার রয়েছে। ওই পরিবারগুলো প্রত্যাবাসনের আওতায় পড়ে না বিধায় মিয়ানমার সরকারকে আগে থেকেই বলা হচ্ছে ওই পরিবারগুলোকে ফেরত নেয়ার জন্য। কিন্তু তারা সবাইকে ফেরত না নিয়ে শুধু একটি পরিবারকে নিয়ে গেছে।’
একটি রোহিঙ্গা পরিবারকে ফিরিয়ে নেয়া হাস্যকর: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, নো-ম্যান্সল্যান্ডে থাকা ৬ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে মাত্র একটি পরিবারকে ফেরত নেয়া হাস্যকর। যে পরিবারকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে, তারা থাকতো নো-ম্যান্সল্যান্ডে। বাংলাদেশের ক্যাম্পে তারা আসেইনি। রোববার ঢাকা চেম্বারে আয়োজিত ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর সঙ্গে সভার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নো-ম্যান্সল্যান্ডে অন্তত ছয় হাজার পরিবার এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমরা আশা করি, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে ফেরত নেবে মিয়ানমার সরকার। আসাদুজ্জামান খান কামালের কথায়, বাংলাদেশে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এসেছেন। তাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন হয়েছে। এসব রোহিঙ্গার তথ্য আমরা মিয়ানমার সরকারের কাছে দিয়েছি।
‘লোক দেখানো প্রত্যাবাসন’
জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে উদ্বেগ ও সতর্কবার্তা জানিয়ে আসছে। তাদের বক্তব্য হলো- প্রত্যাবাসনের সঠিক সময় এখনো আসে নি। কেননা, দশকের পর দশক ধরে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর হওয়া পরিকল্পিত আইনি বৈষম্য এবং দমন-পীড়নের চর্চা নিয়ে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি মিয়ানমার।
রোহিঙ্গা পরিবারটির ফেরত যাওয়ার খবরে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ)-এর আন্দ্রিয়া জর্জেটা বলেন, প্রত্যাবাসনের এই ঘোষণা ‘লোক দেখানো প্রচারের চেষ্টা। রাখাইনে হওয়া অপরাধগুলোর জবাবদিহিতার প্রসঙ্গ থেকে মনোযোগ সরানোর জন্য এটা করা হয়েছে।’ এএফপিকে তিনি আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার আগে মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের সকল মৌলিক মানবাধিকারের স্বীকৃতি ও নিশ্চয়তা দিতে হবে।’
জাতিসংঘ এ ইস্যুতে তাদের আগের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। সংস্থাটি মনে করে, প্রত্যাবাসন নিরাপদ ও সম্মানজনক হওয়ার জন্য এখনো অনেক কাজ বাকি আছে। শুক্রবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানায়, এখনো প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের পরিবেশ সহায়ক নয়।
এএফপি’র রিপোর্টে বলা হয়, বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির নিবাসীরা রোহিঙ্গাদের রীতিমত ঘৃণা করেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে আসলেও, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ ‘বাঙালি’ অভিবাসী বলে আখ্যা দেয়া হয়। তারা নিয়মিতভাবে সহিংসতার শিকার হন। পরিকল্পিতভাবে কেড়ে নেয়া হয়েছে তাদের নাগরিকত্বের অধিকার। বাধ্য করা হয় বর্ণবৈষম্যের মতো পরিবেশে থাকতে। উপরন্তু, এ জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো অন্যান্য মৌলিক সেবা থেকে মারাত্মকভাবে বঞ্চিত।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর