× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হাওরে চলছে ধান কাটা তবুও শঙ্কায় কৃষক

বাংলারজমিন

ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে:
১৭ এপ্রিল ২০১৮, মঙ্গলবার

দুর্যোগের পর হাসি ফুটেছে কৃষকের। এ বছর হাওর জুড়ে ধান আর ধান। বাম্পার ফলন হয়েছে বোরো ধানের। তারপরও আনন্দের মধ্যে উদ্বিগ্নতা চাষিদের। পুরো ধান গোলায় উঠানো নিয়ে যত দুশ্চিন্তা তাদের। কৃষকের ভয় গেল বছরের মতো যদি আবারো গ্রাস করে বন্যা। হাকালুকি, কাউয়াদিঘি আর হাইল হাওর। জেলার তিনটি হাওরের দৃষ্টি জুড়ে দোল খাচ্ছে বোরো ধান।
বোরো ধানের দোলনীতে যেন কৃষকের স্বপ্ন দোলছে। বাদ যায়নি মনু, ধলাই, ফানাই ও জুড়ী নদীর তীরবর্তী এলাকার জমিও। ওই এলাকায় পাকা ও আধপাকা সোনালী ফসল বোরো ধান মন কাড়ছে সকলের। এ জেলার হাওর ও নদী তীরের চাষিরা এখন বোরো ধান নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলছে ধান কাটা ও মাড়াই। গেল বছরের দুর্যোগের পর এমন দৃশ্যে চাষিরা আনন্দিত। এমন স্বপ্ন প্রত্যাশায় উদ্বেলিত কৃষককুল। ইতিমধ্যে বিআর ২৮ ও বিআর ২৯ জাতের ধান পাকতে শুরু করেছে। কৃষকরা জানালেন জমিতে শতকরা ৭০-৭৫ ভাগ ধান পাকলেই ঝুঁকিমুক্ত থাকতে তা কেটে ফেলছেন। কাঁচা আর আধপাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে তারা উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। এখন আকাশে মেঘের আভা আর বিজলী চমকাতে দেখলেই তাদের যত দুশ্চিন্তা। কারণ গেল বছর চৈত্রের আগাম বন্যায় তাদের স্বপ্নের সোনালী ফসল বোরোসহ সহায় সম্বল হারিয়ে ছিলেন। সেই দুঃসহ যন্ত্রণার স্মৃতি এখনো তাদের তাড়া করে। এ জেলার হাওর ও নদী তীরের বাসিন্দাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে বোরো ধান চাষাবাদ। সঙ্গে সহায়ক হিসেবে আছে মাছ ধরা। কিন্তু মাছ ধরতে নানা বিধি নিষেধ থাকায় ওই পেশা তাদের তেমন একটা অনুকূলে নয়। তাই বছর জুড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খাওয়া বাঁচার একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে বোরো ধান। তাই জীবন জীবিকা নিয়ে তাদের স্বপ্ন প্রত্যাশা এই বোরো ধানকেই ঘিরে। গতকাল সরজমিনে হাকালুকি হাওরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা অংশে গেলে চোখে পড়ে বোরো ধান কাটার দৃশ্য। ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে রাত দিন ব্যস্ত চাষিরা। হাওর পাড়েই কাটা বোরো ধান মেশিন দিয়ে মাড়াই করা হচ্ছে। সেই ধান রোদে শুকানোর পর তা গোলায় রাখা হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবছর জেলা জুড়ে আবাদকৃত বোরো ধানের মধ্যে বিআর-২৮, ৬০ ভাগ ও বিআর-২৯, ৪০ ভাগ দ্রুত উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিড) জাতীয় দান রোপণ হয়েছে। এবার বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২ হাজার ৪৭১ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৫৪.১২ হেক্টর। এর মধ্যে হাওর এলাকায় ১৯ হাজার ৩ শত ৬৬ হেক্টর ধান চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ দুর্যোগের কবল থেকে নিরাপদ থাকতে প্রতিটি ধানের ছড়ায় ৮০ ভাগ ধান পেকে গেলে তা দ্রুত কাটার। হাকালুকি হাওরের তীরবর্তী ভূকশিমইল ইউনিয়নের বোরো চাষি কামাল মিয়া (৫৫), আছর উল্লাহ (৭৫), রমিজ মিয়া (৫০), জমির আলী (৬০), কলিম মিয়া (৬৫), সৌরভ দাস (৪৫), সুলেমান আলী, জুড়ীর জায়ফরনগর ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামের বাচ্চু মিয়া (৩৮), মানিক মিয়া (৪৫), দলা মিয়া (৫০), রুমি বেগম (২৪), সুলতানা বেগম (৪০), বানেছা বেগম (৪৮)সহ অনেকেই জানান, এবছর বোরো ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু পুরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। আকাশে মেঘের গর্জন দেখলেই তাদের ভয় হয়। যদি গেল বছরের মতো সব কেড়ে নেই অকাল বন্যা। তারা জানালেন তাদের এলাকায় গেল প্রায় ১০-১২ দিন থেকে পাকা আধপাকা ধান কাটা শুরু হয়েছে। রাত দিন বোরো ধান কাটা মাড়াই ও ঘরে তোলা নিয়ে কৃষাণ-কৃষাণিদের ফুরসদ নেই। নতুন ধান ঘরে তুলতে পেরে হাসি ফুটেছে হাওর তীরের কৃষিজীবী মানুষের।


তবে কৃষকরা জানান এবছর ব্লাস্ট ও নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে অর্ধেক ধানই (চুচা) চালহীন। এছাড়াও ধানের থোড় বের হওয়ার পর পরই বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টিতে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকের ধারনা গেল বছর বন্যার কারণে পলি আসায় মাটি অত্যধিক উর্বর হওয়াতে ধান (চুচা) চালহীন হয়েছে। তাছাড়া এখনো বোরো ধানের জমিগুলোতে পানি থাকায় প্রচুর পরিমাণ জোঁক হওয়ায় ধান কাটতে কৃষকদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাছাড়া এই সময়ে ধান কাটা মাড়াই ও গোলায় তোলার জন্য মিলছে না পর্যাপ্ত পরিমাণ শ্রমিক। তারপরও আরো ১২-১৫ দিনের মধ্যে হাওরে ধান কাটা শেষ হবে বলে তারা ধারণা করছেন। জানা গেল ওই চাষিদের মধ্যে কেউ ২৫ বিঘা, কেউ ৩০ বিঘা, ১০ বিঘা, কেউ ৮ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। আবার অনেকেই নিজের জমিজমা না থাকায় বর্গা নিয়েও করেছেন বোরো চাষ। বিঘা প্রতি ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যা গত বছরের চাইতে এবছর বিঘা প্রতি খরচ কম হয়েছে ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা। তবে এ বছর কি পরিমাণ আয় হবে এমন প্রশ্নে তারা বলছেন পুরো ধান ঘরে না উঠলে আয় ব্যয়ের হিসাব করা যাচ্ছে না। তবে তাদের ধারণা উৎপাদন ভালো হওয়াতে এবছর ব্যয়ের পরও লাভ হবে। আর গেল বছরের ক্ষতিও অনেকটাই পোষাবে। গতকাল দুপুরে সরজমিন হাকালুকি হাওর পাড়ের কুলাউড়ার কাড়েরা, কানেহাত, কালেশার, ছকাপন, বড়ধল, বাদেভুকশিমইল, কুরবানপুর, শাহাপুর, গৌড়করণ, মুক্তাজিপুর ও জুড়ি উপজেলার জায়ফরনগর ও পশ্চিম জুড়ি, বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়ের কয়েকটি এলাকার  ঘুরে দেখা গেল প্রচণ্ড রোদের মধ্যেও পাকা আধপাকা বোরো ধান আনন্দ উৎসব করেই কাটছেন কৃষকরা। নতুন ধানের খড় ও কুড়া (গুঁড়া) গরু, মহিষ ও হাঁস মোরগের খাদ্য হচ্ছে। নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে পুরো এলাকা জুড়েই উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। গেল বছরের বেদনা আর সব হারানোর দুঃসহ স্মৃতি ভুলে এখন তারা উজ্জীবিত। ঘরে নতুন ধান তুলতে পেরে যেন প্রাণ ফিরেছে তাদের। এমন দৃশ্য জেলার অন্যান্য হাওর ও নদী তীরবর্তী এলাকারও। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহজান মানবজমিনকে বলেন, এবছর বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। পাকা ধান কাটাও চলছে। তবে অনেক স্থানে বোরো ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাই আগামী বছর জাতে এ রোগে আক্রান্ত না করতে পারে সে জন্য এই রোগাক্রান্ত ধান থেকে বীজ না রাখার পরামর্শ কৃষি বিভাগের। তবে বাধ্য হয়ে এই ধান থেকে বীজ রাখলে তা বপনের আগে ছত্রাক নাশক ওষুধের মাধ্যমে শোধন করে নিতে হবে। জেলা কৃষি বিভাগের দাবি এবছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। পুরো ধান ঘরে উঠলে এর সুফলতা মিলবে।

নাসিরপুর ও বড়হাট জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের এক বছর
চকচকে বাড়ি দু’টিতে নেই সেই ক্ষতচিহ্ন
ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে: দু’টি জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের একবছর। তাই জেলা জুড়ে ঘুরে ফিরে আলোচনায় অপারেশন ‘ম্যাক্সিমাস’ ও ‘হিট ব্যাক’। কৌতূহল নিবারণে অনেকই ওই বাড়ি দু’টি দেখতে আসছেন। আর এমন জঙ্গি কর্মকাণ্ডের নিন্দা ও  ঘৃণা জানাচ্ছেন। সরজমিনে বাড়ি দু’টিতে গেলে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে। দু’টি জঙ্গি আস্তানার বড় ধকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সফল ভাবে সামাল দিলেও। ওই ভয়ার্ত অভিযানের দুঃসহ স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেনি জেলাবাসী। তবে অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত দু’ বাড়িতেই এখন নেই সেই ক্ষতচিহ্ন। নাসিরপুরের বাড়িটি মেরামতের পর ফিরেছে আগের রূপে। আর বড় হাটের বাড়িটিতে চলছে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। জানা গেল, বাড়ি দু’টি মেরামত আর সুন্দর্য বর্ধন করে বাড়ির মালিক ভুলতে চান কলঙ্কময় ওই দুঃসহ স্মৃতি। জেলার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের নাসিরপুর আর পৌর শহরের বড়হাট। ওই এলাকার বাসিন্দারা জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের কথা স্মরণে এখনো আঁতকে উঠেন। ২০১৭ সালের মার্চের শেষের দিকে শান্তিপ্রিয় নাসিরপুর গ্রাম আর মৌলভীবাজার শহরের বড়হাট এলাকার বাসিন্দাসহ পুরো জেলাবাসী হঠাৎ জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের খবরে আতঙ্কিত হন। অজানা শঙ্কায় প্রবাসী অধ্যুষিত শান্ত এ জেলার দেশ ও প্রবাসের বাসিন্দারা উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় কাটান রাত দিন। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, সোয়াত, র‌্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চালান রুদ্ধশাস অভিযান। ৮২ ঘণ্টার ওই অভিযানে কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই সফল সমাপ্তি ঘটে। আস্তানা দু’টিতে অভিযান শেষ হলে দীর্ঘ সময় উদ্বেগ উৎকণ্ঠার পর স্বস্তিতে ফিরেন জেলাবাসী। অভিযান শেষে দুই জঙ্গি আস্তানায় মিলে ১০টি মরদেহ। নাসিরপুরে অপারেশন হিটব্যাক এরপর জঙ্গি আস্তানার ওই বাড়িতে মিলে সাতজনের ছিন্ন ভিন্ন দেহ। ওখানে ছিল ১ থেকে ১২ বছর বয়সের ৪টি শিশু, ২ জন মহিলা যাদের বয়স (১৮,৩৫) ও ১ জন পুরুষ (৩৮) বছর বয়স বলে ধারণা করা হয়। আর মৌলভীবাজার শহরের বড়হাটের অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ এ নিহতের সংখ্যা ছিল ৩ জন। এরমধ্যে  ২ জন পুরুষ ও একজন মহিলা। অপারেশন “হিট ব্যাক” ও ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ নিয়ে টানা তিনদিন নানা কৌতূহল আর উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় উদ্বিগ্ন ছিলেন প্রবাসী অধ্যুষিত শান্তি প্রিয় এ জেলার মানুষ। আর দেশবাসীর কৌতূহলী প্রতিক্ষার সঙ্গে এ জেলার প্রবাসীদেরও উৎকণ্ঠার শেষ ছিল না। বন্দিদশায় ছিলেন জঙ্গি আস্তানা এলাকার বাসিন্দারাও। পুলিশি নিরাপত্তার কারণে জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল অন্যান্য উপজেলার। নিরাপত্তাজনিত বাড়তি সতর্কতার কারণেই ছিল এমন দুর্ভোগ। অভিযানের কারণে ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকায় ওই এলাকার ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোগান্তির অন্ত ছিল না। জানা যায়, সিলেটের আতীয়ার মহল ও চট্টগ্রামের সিতাকুণ্ডের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মৌলভীবাজার শহরের বড়হাট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রাথমিক অভিযানে নিশ্চিত হন জঙ্গি আস্তানার। প্রথমে বড়হাটের ওই বাড়িটি জঙ্গি আস্তানা হিসেবে চিহ্নিত হলেও ওখানে অভিযানে পর তথ্য মিলে একই মালিকের গ্রামের বাড়িতেও ভাড়া নিয়ে আস্তানা গড়ছে জঙ্গিরা। উভয় বাড়ির মালিক নাসিরপুরের মৃত আছদ্দর লন্ডনির ছেলে লন্ডন প্রবাসী সাইফুর রহমান। পৌর শহরের বড়হাটের ওই বাড়ি থেকে নাসিরপুরের গ্রামের বাড়ির দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। ২৮শে মার্চ বিকালে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াত জঙ্গি আস্তানা দু’টিতে পৌঁছার পর রেকি করে। এরপর তারা নাসিরপুরের বাড়িতে অভিযান শুরু করে। এ সময় নাসিরপুরের ওই বাড়ি থেকে ২-৩ কিলোমিটার দূরে বিভিন্ন স্থানে ওই গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোর উৎসুক জনতার উপচে পড়া ভিড় ছিল লক্ষণীয়। নিরাপদ দূরে থেকে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় তারা অভিযান প্রত্যক্ষ করছিলেন। তাদের এলাকা জঙ্গি কলঙ্ক গোছাতে অনেকেই নানাভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তাও করেছেন। নাসিরপুরের ওই আস্তানাটিকে জঙ্গিরা নিজেদের ‘হাইডআউট’ হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলো। গ্রামীণ জঙ্গি আস্তানার মধ্যে সিলেট বিভাগেই এটিই ছিল প্রথম। এমন তথ্য কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের। তবে বাড়ির মালিক যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাইফুর রহমান জঙ্গিবিরোধী শক্ত অবস্থানের কারণে কেয়ারটেকারের মাধ্যমেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নানা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন। গতকাল মুঠোফোনে বাড়ির মালিক যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাইফুর রহমান জানান, ওই জঙ্গিরা তাদের পরিচয় গোপন রেখে কেয়ারটেকারের সঙ্গে কথা বলে বাড়ি দু’টি ভাড়া নেয়। ধর্ম ও মানবতার শত্রু ওই জঙ্গিরা আমাদের অজান্তে তাদের আস্তানা গড়ায় আমার পরিশ্রমের উপার্জনে তৈরি শখের বাড়ি দু’টি শেষ করে দিয়েছে। আবার নতুন করে গড়তে হয়েছে। তিনি বলেন, আমি সবসময় দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে আগ্রহী। আমার এলাকায় সমাজ সেবামূলক অনেক কাজই এর দৃষ্টান্ত। কিন্তু ওদের এমন কর্মকাণ্ড আমাকে বিব্রত করেছে। তিনি জঙ্গি কলঙ্ক মুক্ত করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদও জানান। সূত্রে জানা যায়, বড়হাটে নিহত নারী জঙ্গির পরিচয় গেল ১ বছরেও বের করতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশ বলছে ওই নারীর পরিচয় উদ্ধারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জানা যায়, ২০১৭ সালের ১লা এপ্রিল বড়হাটে অপারেশন ম্যাক্সিমাস সমাপ্ত হওয়ার পর নিহত ২ পুরুষ ও ১ নারী জঙ্গির মধ্যে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার দেউটি ইউনিয়নের আশরাফুল আলম নাজিম নামের একজনের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া গেলেও বাকি ২ জনের পরিচয় পায়নি পুলিশ। কয়েক মাস পরে ময়মনসিংহের, ফুলবাড়িয়া-ঝুরবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেনের ছেলে শাখাওয়াত হোসেন প্রকাশ মাহফুজ নামে নিহত আরেক জঙ্গির পরিচয় পায় পুলিশ। পুলিশ জানায় জঙ্গি মাহফুজ এক সময় নৌবাহিনীতে কাজ করতো। পরবর্তীতে সে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত বড়হাটের সেই নারী জঙ্গির পরিচয় বের করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। আর ৩০শে মার্চ নাসিরপুরে অপারেশন হিটব্যাকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের স্বামী-স্ত্রী ও ছেলে সন্তানসহ ৭ জন নিহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয়ও পাওয়া যায়। কিন্তু স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে ওই বাড়িতে মধ্য বয়সী আরেকজন পুরুষ থাকতো। অভিযানের সময় সে ওখানে ছিল না। তার কোনো তথ্য এখনো জানতে পারেনি আইশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাকে ধরতে পারলে হয়তো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেত বলে স্থানীয়দের ধারণা।
 



অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর