× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নি র্বা চ নী হা ল চা ল (দিনাজপুর-২) /৩ চৌধুরীর লড়াইয়ের সম্ভাবনা

শেষের পাতা

শাহ্‌ আলম শাহী, দিনাজপুর থেকে
১৭ এপ্রিল ২০১৮, মঙ্গলবার

আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিরল ও বোচাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-২ আসনে রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা বেড়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন দলের হাই কমান্ডের কাছে। পাশাপাশি
জনগণের কাছে যাওয়া শুরু করেছেন তারা। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিতেও মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় আছেন অনেকেই। দিনাজপুর-২ আসনটিতে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী মাঠে রয়েছেন। তেমনি আছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী শ্রী সতীশ চন্দ্র রায়। মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় আছেন সতীশ চন্দ্রের ছেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহসম্পাদক ডা. মানবেন্দ্র রায় মানবও।

অন্যদিকে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আছেন দু’জন। একজন সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত অ্যাডভোকেট এ.এফ.এম রিয়াজুল হক চৌধুরীর ছেলে বোচাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাদিক চৌধুরী পিনাক।
আরেকজন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সাবেক সেনা প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। বিএনপি জোটের প্রার্থী হওয়া নিয়ে এলাকায় তিনি আলোচনার শীর্ষে। এ ছাড়া দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন দিনাজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খতিবুদ্দীন আহমেদ, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী ও সাবেক  ছাত্রনেতা এম এ জলিল, বিরল উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, বোচাগঞ্জ উপজেলা শাখা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের রংপুর বিভাগীয় মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম। জোটগত নির্বাচন হলে বিরল উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান একেএম আফজালুল আনামও সম্ভাব্য প্রার্থীদের একজন। অন্যদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ড. আনোয়ার চৌধুরী জীবন শীর্ষে রয়েছেন।

নির্বাচনী হাওয়ায় বিরল ও বোচাগঞ্জ এ দু’উপজেলা সদর ও গ্রামের সড়কগুলোর মোড়ে মোড়ে, হাট-বাজারের দোকানঘরের ওপর ব্যানার, বিলবোর্ড টানানো হয়েছে। নিজ নিজ দলের নেতানেত্রীদের ছবি সংবলিত ব্যানার, বিলবোর্ড ও পোস্টার লাগিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

বোচাগঞ্জের চেয়ে বিরলে ভোট বেশি। আর খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাড়ি বোচাগঞ্জ উপজেলায়। বিএনপির মাহবুবুর রহমানের বাড়ি বিরলে। খালিদ মাহমুদ ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য বলে উন্নয়নকাজ করেছেন। কিন্তু বিএনপির মাহবুবুর রহমানকে এলাকায় দেখা যায় না। এমন অভিযোগ নির্বাচনী এলাকার মানুষের। বিরল ও বোচাগঞ্জ উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, বড় দলগুলোতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে। প্রকাশ্যে না হলেও আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদ চরমে। এর পরও সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিছু নেতা-কর্মীর অনিয়ম, দুর্নীতি ও চাকরি দেয়ার নামে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নামে  টাকা আত্মসাতের কারণে যদিও তিনি কিছুটা সমালোচনার মুখে রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, এবার সাবেক প্রতিমন্ত্রী সতীশ চন্দ্র রায়ও মনোনয়ন চাইতে পারেন। তাঁকে মনোনয়ন না দিলে তিনি ছেলে ডা. মানবেন্দ্র রায় মানবের জন্য মনোনয়ন চাইবেন। এ কারণে ইতিমধ্যে মানবও মাঠে নেমেছেন। বাবার উত্তরসূরি হিসেবে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। মানবের দাবি, তিনি জন্ম থেকে আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। বাবার উত্তরসূরি হিসেবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত তার। ডা. মানব বলেন, ‘চিকিৎসাসেবা দেয়াসহ সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে অসহায় ও দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করছি।

কিন্তু বাস্তবে তেমন সুবিধা করার অবস্থান গড়ে উঠেনি তার। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি সম্পর্কে মানব বলেন, ‘যে প্রত্যাশা নিয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি হয়েছেন জনগণের সে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি তিনি। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেই তাঁর  প্রমাণ মেলে। ওই নির্বাচনে আমাকে দুই হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করা হয়েছে। আর দলের ইঙ্গিতে এ পরাজয় হয় আমার।’

সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকাসহ দিনাজপুরে আওয়ামী লীগের আসনগুলোতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন ও জনগণের জন্য অনেক কাজ হয়েছে। তাতে আগামী নির্বাচনে দিনাজপুরের সব আসনে নৌকার প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবে বলে আমি আশা করছি।’

মনোনয়ন বিষয়ে জানতে চাইলে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনী বোর্ড যাকে মনোনয়ন দেবে তিনি হবেন এ আসনের প্রার্থী। আর আমি তো অবশ্যই প্রার্থী হতে আগ্রহী। এখানে ব্যক্তি বড় নয়, দল বড়। জনগণের স্বার্থে দলের জন্য যাঁরা কাজ করবেন তাঁরাই মনোনয়ন পাবেন। এখন আমার বিকল্প কেউ যদি তৈরি হয় তিনি প্রার্থী হতে কোনো বাধা নেই। নির্বাচনী বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে আগামী প্রার্থী কে? তবে আমি এলাকার উন্নয়নের জন্য কি করেছি, তা জনগণই জানে। দৃশ্যমানই রয়েছে।’

অন্যদিকে এ নির্বাচনী অসনে বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন, তা নিশ্চিত নয়। প্রার্থী হিসেবে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে দলের অনেক নেতাকর্মীর বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিষয়ে। তাঁর সঙ্গে বিএনপি জোটের অন্য শরিক দলেরও ভালো সম্পর্ক যাচ্ছে না। তাঁকে নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে খোদ বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এর বড় কারণ তিনি বিগত বছরগুলোতে এলাকায় তেমন একটা আসেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘কালেভদ্রেও এলাকায় দেখা যায় না মাহবুবুর রহমানকে। এমন অবস্থায় দলীয় কর্মসূচি পালন করতে নেতৃত্ব দেয়ার মতো কেউ নেই।’ ওই নেতা আরো জানান, মাহবুবুর রহমান দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনেও  প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

মাহবুবুর রহমান ছাড়াও এ আসনে বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে পারেন বলে আলোচনায় আছেন বোচাগঞ্জ উপজেলা শাখা বিএনপির সভাপতি সাদিক চৌধুরী পিনাক। তিনি আপদে-বিপদে মানুষের পাশে থাকেন বলে সুনাম রয়েছে। তাঁকে নিয়ে আশাবাদী স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। বোচাগঞ্জের ভোটার পিনাক চৌধুরী ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। পিনাক চৌধুরীর বাবা অ্যাডভোকেট এ এফ এম রিয়াজুল হক চৌধুরীও রাজনীতি করতেন। তিনি এরশাদের আমলে একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে পিনাক চৌধুরী জানান, ২০০৮ সালে নির্বাচনে দিনাজপুর-২ আসনে তৎকালীন বিএনপির প্রার্থী লেঃ জেঃ মাহবুবুর রহমানের সেতাবগঞ্জ বড়মাঠে শেষ নির্বাচনী জনসভায় তিনি একমাত্র বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার পর থেকেই বিএনপির হয়ে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বিরল-বোচাগঞ্জের সর্বত্র ছুটে বেড়াচ্ছেন। এমনকি তিনি দলের দুঃসময়ে বিভিন্ন আন্দোলনে দিনাজপুর ও বিরল-বোচাগঞ্জে দলের নেতাকর্মীদের পাশে থেকে উৎসাহিত করেন।

তার পিতা মরহুম অ্যাডভোকেট রিয়াজুল হক চৌধুরী ছিলেন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তিনি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সাবেক বিআরটিসির চেয়ারম্যান ও দিনাজপুর জেলা বারের একাধিকবার সভাপতি ও ঢাকা কলেজের সাবেক ভিপি। পিতা কর্তৃক এলাকার মানুষের সেবা করার মহৎ কাজে পিনাক চৌধুরীও নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন রাজনীতিতে। বিরল ও বোচাগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের বিভিন্ন সামাজিক কাজে সব সময় মানুষের পাশে দাঁড়ান তিনি।

পিনাক চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে শত ভাগ প্রত্যাশা করছি। মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগিতা দেয়ার চেষ্টা করেছি। অসহায় মানুষের পাশে আমার বাবাও ছিলেন, আমিও আছি। ’

তবে ভিন্ন কথা বললেন বিরল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘যে যত কথাই বলুক, এখানে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাবেন মাহবুবুর রহমান। কারণ, খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে লড়াই করতে হলে এখানে তাঁকেই প্রয়োজন। তাঁর বিকল্প রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী এমএ জলিল। আর পিনাক চৌধুরী নতুন। এখনো রাজনৈতিক অবস্থা তৈরি করতে পারেননি তিনি।’ তাঁর মতে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফল পেতে পারে বিএনপি, যদি শক্তিশালী প্রার্থী দেয়া যায়।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক জামায়াতও গোপনে তৎপরতা চালাচ্ছে। দলের বিরল উপজেলা শাখার সাবেক আমীর আফজালুল আনাম মনোনয়নের প্রত্যাশায় মাঠপর্যায়ে প্রচার চালাচ্ছেন।

এদিকে জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য এগিয়ে রয়েছেন পার্টির কেন্দ্রীয় সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ড. আনোয়ার চৌধুরী জীবন। তাঁরা দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। এলাকায় নির্বাচন করতে মানবতার সেবায় হাসপাতাল গড়ে তুলেছেন তিনি।

আনোয়ার চৌধুরী জীবন বলেন, ‘মাঠ জরিপের ভিত্তিতে পার্টি থেকে যদি মনোনয়ন দেয়া হয়, তবে দলের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেব।

আগামীকাল: কিশোরগঞ্জ-৬
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর