× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিপাশার বিয়ের ব্যাপক প্রস্তুতি সিলেটে

এক্সক্লুসিভ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২৫ এপ্রিল ২০১৮, বুধবার

একটি বিয়ের আয়োজন নিয়ে ধুম পড়েছে সিলেটে। প্রশাসনের কর্তারা ব্যতিব্যস্ত। বিয়েতে সবাই যেন আয়োজক। কেউ দিচ্ছেন বিয়ের শাড়ি, কেউবা আংটি। মহা ধুমধামে এই বিয়ের আয়োজন চলছে। সিলেটের রায়নগরের সরকারি বালিকা শিশু পরিবারে এখন বিয়ে নিয়ে সব আয়োজন। বড় বোনের বিয়ের এই আয়োজনে ওই শিশু পরিবারে থাকা শতাধিক বালিকারাও নিজের মতো করে ধুমধাম করছে। বিয়ের কনে বিপাশা আক্তার মুন্নি।
পিতার নাম জামাল মিয়া। ঠিকানা- সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা), রায়নগর, সিলেট। দেখতে দেখতে বিপাশা বড় হয়ে উঠেছে। আটারো পেরিয়ে গেছে। ঘরে মেয়ে থাকলে অনেক পিতা-মাতার কপালে চিন্তার রেখা পড়ে। বিপাশা বড় হয়েছে। এখন তাকে বিয়ে দিতে হবে। এই চিন্তাও এসেছে ওই পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক জয়তি দত্তের। বিপাশার বিয়ে নিয়ে কথা বললেন সিলেটের সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নিবাস রঞ্জনের সঙ্গেও। বিয়ে নিয়ে তারা কথা চূড়ান্ত করলেন। বর দেখাদেখি শুরু হলো। বরও তারা খুঁজে পেয়েছেন। গতকাল থেকে বিয়ের দাওয়াত কার্ড বিতরন শুরু হয়েছে।
সিলেটের সাংবাদিকসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকজনকে দাওয়াত দেয়া শুরু হয়েছে। সিলেটের বিভিন্ন হাউসেও এসেছে বিয়ের কার্ড। বর আব্দুল লতিফ। তিনি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বুড়াখালী রাজনগর (হালেয়া) গ্রামের মৃত আব্দুল আহাদের ছেলে। আগামী শুক্রবার বিপাশার বিয়ে। দাওয়াত কার্ডে অতিথিদের উপস্থিতি কামনা করেছেন শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক জয়তি দত্ত। কার্ডে লিখেছেন- ‘শুক্রবার সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) রায়নগর নিবাসী বিপাশা আক্তার মুন্নির শুভ বিবাহের দিন ধার্য করা হয়েছে। ওই শুভানুষ্ঠানে আপনার-আপনাদের উপস্থিতি ও দোয়া আন্তরিকভাবে কামনা করি।’ বিপাশা আক্তার মুন্নি শিশু পরিবারের একজন সদস্য। ২০১৫ সাল থেকে ওই পরিবারে বসবাস করছে। এখন শিশু পরিবারই তার সব। এই পরিবারের সব শিশুরাই তার বোন। বিপাশাকে বড় আপন করে নিয়েছেন সবাই। এ কারণে তার বিয়েতে এত আয়োজনের ধুম পড়েছে। চোখের কোনো জলও জমেছে অনেকের। বিপাশা চলে যাবে- যেন পিতার ঘর শূন্য হয়ে যাবে শুক্রবার থেকে। বিপাশার বয়স তখন ১০ কিংবা ১১। সেই সময় দিরাইয়ের পুলিশ ঠিকানা বিহীন অবস্থায় তাকে খুঁেজ পেয়েছিল। বিপাশাকে পুলিশ উদ্ধারের পর তার পরিচয় জানার চেষ্টা করে। কিন্তু নিজের নাম ও পিতার নাম ছাড়া বিপাশা কিছুই বলতে পারেনি। পুলিশ প্রথমে বিপাশার পরিচয় সন্ধানে নানা চেষ্টা করে। কিন্তু কাউকে পায়নি। ঠিকানা বলতে না পারা বিপাশাকে শেষে পুলিশ আদালতে হস্তান্তর করে। আদালতের নির্দেশে বিপাশাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় সেইফহোমে। সেখানে প্রায় চার বছর কাটায় বিপাশা।

পরবর্তীকালে আদালত থেকে বিপাশাকে পাঠানো হয় সিলেটের রায়নগরের সরকারি শিশু বালিকা পরিবারে। এরপর থেকে বিপাশা ওই পরিবারে আছে। এখন বিপাশা প্রাপ্ত বয়স্কা তরুণী। বয়স হওয়ার সঙ্গে বিপাশাকে নিয়ে চিন্তা বাড়ে শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়কের। সমাজসেবা অধিদপ্তরের জেলা উপপরিচালক নিবাস রঞ্জনের সহযোগিতা নিয়ে বর খোঁজা শুরু করেন তারা। শিশু পরিবারের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী বরের খোঁজ নিতে থাকেন। এরমধ্যে এক ওই পরিবারে কর্মরত একজনের পরিচয়ের সূত্র ধরে খোঁজ মিলেছে বর আব্দুল লতিফের। সিলেটের রায়নগরের সরকারি শিশু পরিবারের (বালিকা) উপ তত্ত্বাবধায়ক জয়তি দত্ত গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘আমরা বরের খোঁজ পাওয়ার পর উপ-পরিচালক সহ বরকে দেখতে যাই। বর সম্পর্কে খোঁজ খবর নিই। তাদের কাছে বিপাশার সব তথ্য জানাই। বর আমাদের পছন্দ হওয়ার পর বরের মা রাবেয়া বিবি সহ তাদের পক্ষের লোকজন এসে কনে দেখে গেছেন। আমরা তাদের নতুন আত্মীয়ের মতো সমাদর করি। তারাও কনে দেখে পছন্দ করেন। এরপর কথাবার্তা চূড়ান্ত করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের পুরো শিশু পরিবার এখন বিয়ে নিয়ে মহাব্যস্ত। বিপাশার বিয়ে নিয়ে সবাই মহা ধুমধামে মেতে উঠেছে। বিশেষ করে শিশু পরিবারের শিশু-কিশোরীরাও ব্যস্ত।’ তিনি জানান, ‘ওই পরিবারে যারা থাকে সবাই আমার পরিবারের সদস্য। বিপাশাকে নিজের মেয়ের মতো দেখি। এ কারণে এত আয়োজন।’ এদিকে বিপাশার বিয়েতে শুধু যে শিশু পরিবার কিংবা সমাজসেবা কর্মকর্তারা জড়িত তা নয়। এই বিয়েতে অংশ নিয়েছে সিলেটের গোটা প্রশাসনও। বিয়ে আয়োজনে কোনো কমতি নেই। প্রায় তিনশ’ মানুষের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর পক্ষ থেকে আসবেন ১০০ অতিথি। আর কনের পক্ষের দাওয়াতি থাকবেন ২০০ জন। সিলেটের প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সামাজিক লোকজনও উপস্থিত থাকবেন বিয়েতে। সবাই একসঙ্গে বিপাশার নতুন জীবনের সঙ্গী হবেন। সিলেট সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপর পরিচালক নিবাস রঞ্জন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, বিপাশার বিয়ের বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও এসপি মহোদয়কে জানানোর পর তারাও বিয়েতে উৎসাহী হয়েছেন। নিজের সন্তানের বিয়ের মতো উৎসাহী হয়ে সিলেটের প্রশাসনের কর্মকর্তারা এগিয়ে এসেছেন। সবাই শরিক হয়েছেন বিয়েতে। আর বিপাশার নবজীবনের শুভ কামনা জানাতে অভিভাবক হয়ে সবাই আসবেন। উপ পরিচালক জানান, বিপাশার বিয়ের বিষয়টি তাদের তরফ থেকে আদালতকেও অবগত করা হবে। দিরাইয়ের বুড়াখালী গ্রাম হচ্ছে প্রয়াত জননেতা আলহাজ আব্দুস সামাদ আজাদের নিজের এলাকা। বরের বাড়ি ওখানে। বিয়ের উকিল পিতা হয়েছেন সাইদুর রহমান।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর