× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে তুরুপের তাস মাহাথির

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৫ বছর আগে) এপ্রিল ২৫, ২০১৮, বুধবার, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন

বেশিরভাগ মানুষ ৯২ বছর বয়সে অবসর ভোগ করেন। তবে মালয়েশিয়ার প্রবীণ নেতা মাহাথির মোহাম্মদ ফিরেছেন নির্বাচনী প্রচারাভিযানে। বিরোধী দলের প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কেলেঙ্কারিতে বিধ্বস্ত প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে। তবে ৬ দশক ধরে মালয়েশিয়া শাসন করা জোট সরকারের বিরুদ্ধে তার জয়ের সম্ভাবনা কম। এরপরও অঘটন ঘটিয়ে যদি তিনি নিজের সাবেক শিষ্য নাজিব রাজাককে হটিয়ে বিজয়ী হয়েই যান, তবে তিনিই হবেন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রধানমন্ত্রী। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। খবরে বলা হয়, ২২ বছর ধরে শক্ত হাতে মালয়েশিয়া শাসন করেছিলেন মাহাথির। তবে রাজনীতির পহেলা সারিতে মাহাথিরের প্রত্যাবর্তনকে বেশ নাটকীয়ই বলা চলে।
বেশিদিন হয়নি প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিল ১এমডিবি থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। আর তাতে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান মাহাথির। এর মাধ্যমেই যেন রাজনীতিতে পুনর্জন্ম হলো তার। তবে তার এই রাজনৈতিক ‘ডিগবাজি’ কয়েক বছর আগেও অচিন্তনীয় ছিল। তিনি বিরোধী শিবিরে যোগ দিয়ে সেসব দলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন যাদেরকে তিনি শাসক থাকাকালে দমন করেছেন। অপরদিকে যে দলের নেতৃত্বে ছিলেন বহুবছর, সেই দলের বিরুদ্ধেই প্রার্থী হয়েছেন।
বিরোধী পক্ষের জন্যও মাহাথিরকে প্রার্থী করা বাজি ধরার সমতুল্য। কারণ, দেশটিতে তিনি আর ঐক্যের প্রতীক নন। কেউ পছন্দ করেন, কেউ করেন না।
মুসলিম মালয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর অগ্রদূত ও আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক হিসেবে অনেকে তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার তখনকার দরিদ্র্য দেশকে তুলনামূলক সম্পদশালী দেশে পরিণত করার নেপথ্যে তাকে প্রায়ই কৃতিত্ব দেওয়া হয়। তবে তিনি অনেকের কাছে একনায়ক হিসেবে পরিচিত, যিনি কিনা মানবাধিকারের তোয়াক্কা না করে বিচার বিভাগকে অবজ্ঞা করেছেন, বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে জেলে পুরেছেন। পাশাপাশি, বহু সম্প্রদায়ের দেশটিতে তার বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে জাতিগত বিভেদও বেড়েছিল।
প্রতিপক্ষদের ব্যাপারে খুবই ধারালো বক্তব্য ব্যবহার করেন তিনি। কথিত পশ্চিমা নও-উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে তিনি কড়া ভাষায় কথা বলতেন। একবার তিনি ইউরোপিয়ানদেরকে বলেছিলেন, লোভী, যুদ্ধপ্রিয় যৌনবিপথগামী হিসেবে। নেতা হিসেবে মাহাথিরের কিছু দুর্বলতা থাকলেও ‘আশার জোট’ বলে পরিচিত বিরোধী শিবির মনে করে, প্রত্যন্ত মালয় জনগোষ্ঠির সঙ্গে এখনও তার সংযোগ রয়েছে। এ কারণে নির্বাচনে তিনিই হবেন তুরুপের তাস।
শুক্রবার সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নাজিব। আগামী নির্বাচন সপ্তাহ কয়েকের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে। বিরোধী দলগুলোর প্রত্যাশা, মাহাথিরের কারণে শাসক জোট বারিসান নাশনালের কিছু মালয় ভোট তারা পাবে। এই ভোট বিরোধী জোটের সমর্থক, যেমন, শহুরে ভোটার ও সংখ্যালঘু (বিশেষ করে জাতিগত চীনা) ভোটের সঙ্গে যোগ হলে ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। বেসরকারী নির্বাচনী প্রতিষ্ঠান মার্দেকা সেন্টারের প্রধান ইব্রাহিম সুফিয়ান বলেন, ‘মাহাথিরকে জোটে নিয়ে বিরোধী দল কিছু মালয় সমর্থন ঘরে তুলবে। প্রশ্নটা হলো, কতটা? তবে আমি মনে করি, তারা অত সাফল্য পাবে না।’
ক্ষমতার ওপর সরকারি দল বিএন’র নিয়ন্ত্রণকে সংহত বলা চলে। এছাড়া সমালোচকরা মনে করেন, নির্বাচনী সীমানা পুনঃনির্ধারণের এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ক্ষমতার ভারকেন্দ্র ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ঠেলে দেবে। ফলে পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল হবে বিরোধী শিবিরের জন্য। মাহাথিরের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের সবচেয়ে আলোচিত দিক হলো তারই সাবেক রাজনৈতিক চিরশত্রু আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে তার সবকিছু মিটমাট হয়ে যাওয়াটা। ১৯৯৮ সালে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের জেরে আনোয়ারকে দল থেকে বহিষ্কার করেন মাহাথির। বহিষ্কারের আগ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন মাহাথিরের রাজনৈতিক উত্তরসূরি। বহিষ্কারের পর তাকে সমকামিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে কারান্তরীন করা হয়। ৬ বছর জেল খেটে আনোয়ার যখন মুক্তি পান, তখন তার নেতৃত্বে ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিরোধী জোট তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো ফল করে। তবে ২০১৫ সালে ফের নাজিব রাজাকের সরকার তাকে জেলে ঢুকায়। মাহাথির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে আনোয়ার মুক্তি পাওয়ার পর তার হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
মূলত, প্রধানমন্ত্রী রাজাকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিল ১এমডিবি থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠলে অবসর ভেঙ্গে সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরার ঘোষণা দেন মাহাথির। রাজাকই ওই তহবিল গঠন করেছিলেন। তার দাবি তিনি কোনো অন্যায় করেন নি। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে মাহাথির ছিলেন পেশায় একজন ডাক্তার। তাকে এখনও ডাক্তার এম বলে ডাকা হয়। ১৯৬৪ সালে মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের সংসদ সদস্য হয়ে তার রাজনীতিতে প্রবেশ। ১৯৮১ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর