পরিবারের ভরণ-পোষণ সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য জন্মস্থান ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন অনেকে। এদের মধ্যে কেউ কেউ বিদেশে ভালো অবস্থানে থাকেন, আবার কেউ কেউ দেশের চেয়েও খারাপ অবস্থার শিকার হন। ভালো-খারাপ অবস্থায় থাকলেও কেউ চায় না বিদেশেই তার মৃত্যু হোক। সকলেই চায়-পিতা-মাতা, স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনদের কাছেই মৃত্যু হোক। তাহলে মৃত্যুর আগে দাবি-দাওয়ার ক্ষমা চেয়ে নেয়া অনেকাংশেই সম্ভব হয়। কিন্তু বিদেশে থাকাকালীন মৃত্যু হলে সে সুযোগ পাওয়া সম্ভব হয় না। এতে করে প্রবাসীর স্বজনদের কষ্ট বেড়ে যায়। তবে কার মৃত্যু কখন, কোথায় হবে কেউ জানে না।
২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল এবং ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গত ১৩ মাসে বিভিন্ন দেশে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বপ্ন ভেঙেছে নিহত ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের। বিদেশে এমন মৃত্যুর ঘটনায় স্বজনদের সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা কারো জানা নেই। স্বজনদের মাধ্যমে নিহতদের তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের গত ১৮ই এপ্রিল বুধবার ভোরে সৌদি আরবের হাইল জেলার হোলাইফা শহর এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন চারজন। তারা হলেন- বাতিসা ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামের মরহুম আবদুল হকের পুত্র এমরানুল হক সোহেল, ইমামুল হক মুন্না, জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের গাংরা গ্রামের খলিলুর রহমান ভুঁইয়ার পুত্র আনিছুর রহমান ভূঁইয়া বাবুল ও গুণবতী ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের পুত্র মো. সোহেল। ৩১শে মার্চ শনিবার সৌদি আরবে আল জাবের হোল্ডিংস কোম্পানির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার কোরবত আহমেদ ইন্তেকাল করেছেন। তিনি শ্রীপুর ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামের মরহুম মুন্সি আরবের রহমানের পুত্র। ২৩শে ফেব্রুয়ারি শুক্রবার জার্মানে মিনডেন সিটি এলাকায় মারা যান রবিউল হক। তিনি কনকাপৈত ইউনিয়নের আতাকরা পূর্বপাড়ার মজুমদার বাড়ির অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মাহবুবুল হকের পুত্র। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তাকে ওই এলাকায় বেওয়ারিশ হিসেবেই দাফন করা হয়। ১লা ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের জেদ্দায় আলকরা ইউনিয়নের সোনাইছা গ্রামের পশ্চিম পাড়ার রেলওয়ে কর্মকর্তা মো. ইব্রাহিমের পুত্র সৌদি প্রবাসী আহসান উল্যাহ ভূঁইয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর বুধবার সকালে সৌদি আরবের জেদ্দায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নুরুল ইসলাম নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি কাশিনগর ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামের মৃত ছৈয়দ আলীর পুত্র। ৮ই অক্টোবর রোববার সকালে মালয়েশিয়ায় ঘুমের মধ্যেই মৃত পাওয়া যায় চিওড়া ইউনিয়নের নোয়াপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন মজুমদারকে। তিনি ওই গ্রামের মজুমদার বাড়ির মৃত আবু তাহেরের পুত্র। ১৪ই সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সৌদি আরবে বাতিসা ইউনিয়নের চানকরা গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যু হয়। ২৯শে আগস্ট ওমানে কাজ করার সময় আহত হয়ে মারা যান ঘোলপাশা ইউনিয়নের গুজরা গ্রামের মৃত মমতাজ উদ্দিনের পুত্র আবু বক্কর। ২৭শে আগস্ট সৌদি আরবে হজব্রত পালন করতে গিয়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মুন্সিরহাট ইউনিয়নের বাসন্ডা গ্রামের হাজী ছিদ্দিকুর রহমান ইন্তেকাল করেন। ৭ই আগস্ট সোমবার কাতারে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন প্রবাসী আবদুল কুদ্দুস। তিনি চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার নাটাপাড়া গ্রামের মৃত আলী আশ্রাফের পুত্র। ১১ জুলাই সোমবার কুয়েতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে কনকাপৈত ইউনিয়নের তারাশাইল গ্রামের কাজী বাড়ির মৃত কাজী আবদুর রশিদের পুত্র কাজী আলমগীর ইন্তেকাল করেছেন। ৮ই জুন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ আফ্রিকায় দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে আশরাফুল হক সাগর নামের এক ব্যবসায়ীকে। তিনি আলকরা ইউনিয়নের জঙ্গলপুর গ্রামের মৃত মমিনুল ইসলাম ভূঁইয়ার পুত্র। ২৭শে মে একই দেশে মৃত্যু হয়েছে কনকাপৈত ইউনিয়নের কোমারডোগা গ্রামের পশ্চিম পাড়ার মৃত আসলাম মিয়ার পুত্র কবির মিয়ার। ২৬শে এপ্রিল বুধবার সৌদি আরবের জেদ্দায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নে দক্ষিণ বেতিয়ারা গ্রামের প্রবাসী আবুল কাশেম চৌধুরীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি ওই গ্রামের আবদুল গফুর চৌধুরীর বড় পুত্র। ১৩ই এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাতে একই দেশে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কনকাপৈত ইউনিয়নের কোমারডোগা গ্রামের বৃদ্ধ মোহাম্মদ আলীর পুত্র নুর নবী ইন্তেকাল করেন। ১০ই মার্চ শুক্রবার রাতে কাতারে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন চিওড়া ইউনিয়নের ঝাটিয়ারখিল গ্রামের আবুল কাশেম চৌধুরীর পুত্র শহিদুল হাসান সৈকত চৌধুরী ও নেতড়ার আহাম্মদ উল্যাহর পুত্র মো. শিপন। ৩রু মার্চ শুক্রবার মালয়েশিয়ায় ডাকাতের হামলায় নির্মমভাবে খুন হয়েছেন প্রবাসী আবদুল কুদ্দুস। তিনি চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার শ্রীপুর গ্রামের আবদুল জাব্বারের পুত্র।