× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ধর্মগুরু আশারামের

এক্সক্লুসিভ

মানবজমিন ডেস্ক
২৬ এপ্রিল ২০১৮, বৃহস্পতিবার

ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে ভারতের স্বঘোষিত ধর্মগুরু আশারাম বাপুর (৭৭)। অভিযোগ আছে, তিনি ২০১৩ সালে নিজের আশ্রমে একজন টিনেজারকে ধর্ষণ করেছেন। এ নিয়ে মামলা হয়। সেই মামলায় ওই ধর্মগুরুকে এই শাস্তি দেয়া হয় বুধবার। একই মামলায় অন্য দুই আসামিকে ২০ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। এদিন যোধপুর কেন্দ্রীয় কারাগার চত্বরে মামলার রায় ঘোষণা করেন স্পেশাল জজ মধুসুধন শর্মা। আশারামকে কারাগারের বাইরে আনা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে এ কারণে কয়েকদিন আগেই মামলার রায় দেয়ার জন্য যোধপুর কারাগারের ভেতরে স্পেশাল কোর্ট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা ও গুজরাট রাজ্যে উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।
এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি। এতে বলা হয়, মধ্য প্রদেশের ছিন্দওয়ারায় ওই ধর্মগুরুর আশ্রমে থেকে পড়াশোনা করতো উত্তর প্রদেশের শাহাজাহানপুরের ওই বালিকা। কিন্তু ২০১৫ সালের ১৫ই আগস্ট রাতে তাকে ধর্ষণ করে আশারাম বাপু। এ বিষয়ে ওই বালিকা অভিযোগ করেছে। বলেছে, যোধপুরের কাছে মানাই এলাকায় নিজের আশ্রমে ওইদিন তাকে ডেকে নেয় আশারাম। সেখানেই রাতে তাকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর আশারাম ও তার চার সহযোগী শিবা, শিল্পী, সরোদ ও প্রকাশের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৬ই নভেম্বর চার্জশিট      দেয় পুলিশ। ফলে ইন্ডোর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ৭৭ বছর বয়সী আশারামকে। ২০১৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় যোধপুরে। ২রা সেপ্টেম্বর থেকেই তিনি বিচার বিভাগীয় হেফাজতে ছিলেন। ২০১৩ সালের ২১শে আগস্ট। দিল্লি পুলিশের একটি দল, ধর্ষিতা ও তার পিতা গিয়ে হাজির হন পুলিশ কর্মকর্তা অজয় পাল লাম্বার অফিসে। অজয় পাল লাম্বা তখন ছিলেন যোধপুর পশ্চিমের উপ-পুলিশ কমিশনার। তার কাছে ওই বালিকা তার ওপর চালানো যৌন নিপীড়নের কথা বর্ণনা করে। এ বিষয়ে অজয় পাল লাম্বা বলেন, প্রথমে আমি ওই পরিবারটির অভিযোগ বিশ্বাস করতে পারিনি। মনে হয়েছিল তারা একজন বড়মাপের মানুষের মানহানি করতে চাইছেন। কিন্তু আমি ভুল প্রমাণ হয়ে গেলাম। বালিকাটি আমাকে আশারামের আশ্রমের যথাযথ ঠিকানা, ম্যাপ বলে দিলো। দেখিয়ে দিলো কোন রুমে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। তখন আমার মনে হয়েছে, কেউ যদি ওই রুমে না গিয়ে থাকে তাহলে কিভাবে সে ওই রুমের ম্যাপ, কোথায় তা তার সবকিছু যথাযথভাবে বলে দিতে পারে। অনুসন্ধানে এটাই ছিল আমাদের মূল পয়েন্ট। এরপর মিরাটের আরেকটি পরিবার আশারামের বিরুদ্ধে একই রকম অভিযোগ নিয়ে আসে। এ অবস্থায় আমরা ওই পরিবারটির সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তারা জানায়, তারা নিজেরা কোনো অভিযোগ করতে চায় না। এটা ছিল ঘটনা তদন্তের আরেকটি পয়েন্ট। এরপরে ৩১শে আগস্ট আসে নতুন তথ্য। আমরা দেখতে পাই আশারাম কোথায় তার কোনো হদিস নেই। ইন্ডোরে তার আশ্রমে পাঁচজন পুলিশ ও ৬ জন কমান্ডো মোতায়েন করা হয়। এরপরে আমরা যোধপুরে সংবাদ সম্মেলন করি। জানান দিই যে, আশারাম আমাদের রাডারে রয়েছে। অকস্মাৎ ৩১শে আগস্ট বিকালে ভুপালে একটি বিমানবন্দরে দেখা যায় আশারামকে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা বিষয়টি মিডিয়াকে অবহিত করি। তারা আশারামকে ধরতে সহায়তা করে। আমাদের টিম বিষয়টি জানতে পেরেছে তা বুঝতে পারেননি আশারাম। তিনি পৌঁছে যান তার ইন্ডোর আশ্রমে। এ সময় পুলিশ গিয়ে উপস্থিত হয়। তখন আশারাম ও তার অনুসারীরা পুলিশকে নানা প্রলোভন দেয়। বলে তার সম্পত্তির পুরোটাই তিনি দিয়ে দেবেন। কিন্তু সেই ফাঁদে পা দেয়নি পুলিশ। উল্লেখ্য, সুরাটে আরেকটি ধর্ষণ মামলার আসামি আশারাম বাপু ও তার ছেলে নারায়ণ সাই। ২০০২ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে দুই বোনকে তারা ধর্ষণ করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে। সুরাটের এই মামলার রায় দেয়ার জন্য সম্প্রতি পাঁচ সপ্তাহের সময় বেঁধে দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। শিশু-কিশোরদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধ থেকে রক্ষার জন্য ভারতে যে আইন আছে তার অধীনে যোধপুরের মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি হয়েছে আশারামের। এ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এছাড়া আরো দুটি আইনের প্রতিটিতে তার ২০ বছর করে জেল দেয়া হয়েছে।  যোধপুরের মামলায় আশারাম বাপুকে গ্রেপ্তার করা হয় মধ্যপ্রদেশের ইন্ডোর থেকে। তারপর থেকে তার ঠাঁই হয় জেলখানা। এরপর থেকে তিনি জামিন চেয়ে ১২ বার আপিল করেছেন। কিন্তু তার সে আবেদন বার বারই প্রত্যাখ্যান করেছে আদালত। গতকাল রায় পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ধর্ষিতার পিতা। তিনি বলেছেন, আমরা সুবিচার পেয়েছি। এ লড়াইয়ে আমাদেরকে সমর্থনকারীদের প্রতিজনকে ধন্যবাদ জানাই। আমি আশা করি এখন তিনি কঠিন শাস্তি পাবেন। আমি আরো আশা করি যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে বা অপহৃত হয়েছেন তারাও সুবিচার পাবেন।


অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর