বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত একটি এমআই-৪ হেলিকপ্টার বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে এবং দুটি পিটি-৭৬ ট্যাঙ্ক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে স্থায়ীভাবে হস্তান্তর করেছে ভারতীয় সরকার। গতকাল বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি বাশারে এ নিয়ে এক অনুষ্ঠান হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের এ স্মারক হস্তান্তর করেন। সেনাবাহিনীর পক্ষে সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লে. জেনারেল মো. নাজিমউদ্দীন ট্যাঙ্ক দুটি এবং বিমানবাহিনীর পক্ষে সহকারী বিমানবাহিনী প্রধান (প্রশাসন) এয়ার ভাইস মার্শাল এম আবুল বাশার হেলিকপ্টারটি গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার সুযোগ পেয়ে গর্বিত। স্বাধীনতা সংগ্রাম ভারত-বাংলাদেশের সেনা ও জনগণের সাহস, বীরত্ব, আত্মত্যাগ ও গৌরবের সাক্ষ্য। এই উত্তরাধিকার এবং চেতনা আগামী দিনগুলোয় দুই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। আইএসপিআর জানিয়েছে, পিটি-৭৬ ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর আর্মার্ড রেজিমেন্টের হালকা ধরনের উভচর ট্যাঙ্ক। যুদ্ধের সময় নদী ও জলাশয় পারাপারে এই ট্যাঙ্কগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
গরিবপুরের বিখ্যাতযুদ্ধে এই ট্যাঙ্কগুলোর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। যে যুদ্ধে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত এম ৩৪ শ্যাফে ট্যাঙ্কসমৃদ্ধ পাকিস্তানি বাহিনীর একটি বড় দল পরাজিত হয়েছিল। যুদ্ধের সময় উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিমাঞ্চলসমূহে পাকিস্তানি বাহিনীকে পিছু হটাতে এই ট্যাঙ্কগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এম আই-৪ হেলিকপ্টর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতীয় বিমানবাহিনীর পরিবহন হেলিকপ্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। পূর্বাঞ্চলে যৌথ বাহিনী কর্তৃক আকাশপথে পরিচালিত অপারেশনের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল এটি। দ্রুত সিলেট দখল করতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ৪-৫ গুর্খা ব্যাটালিয়নটি এই অপারেশনের জন্য সুরমা নদীর তীরে সিলেটের উপকণ্ঠে অবতরণ করেছিল। আবার এই হেলিকপ্টরযোগেই ১৯৭১ সালের ৯ই ডিসেম্বর প্রমত্তা মেঘনা নদীর চরে অবতরণ করেছিল ৩১১ পদাতিক ব্রিগেড। মেঘনা পাড়ি দিয়ে টানা ৩৬ ঘণ্টায় দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর ১১০ বার হামলা চালানো হয়েছিল ওই হেলিকপ্টার থেকে। যৌথ বাহিনীর সেই অভিযান মেঘনা হেলিব্রিজ নামে পরিচিত। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২২শে অক্টোবর গণভবনে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতের বিমান মন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মারকের একটি তালিকা হস্তান্তর করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ওই হেলিকপ্টার ও ট্যাঙ্ক দুটি যথাক্রমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর করা হয়। আইএসপিআর জানিয়েছে, এমআই-৪ হেলিকপ্টারটি এবং পিটি-৭৬ ট্যাঙ্ক দুটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশেষ অবদানের স্বাক্ষর বহন করে। এমআই-৪ হেলিকপ্টার এবং পিটি-৭৬ ট্যাঙ্ক দুটির হস্তান্তর দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর বিদ্যমান সুসম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।